2030 সালের মধ্যে অমরত্ব লাভ করবে মানুষ
মহাকাব্যের যুগ থেকেই মানুষের মধ্যে অমর হওয়ার আকাঙ্ক্ষা তীব্র। অমরত্ব পাওয়ার জন্য অসুর বা দেবতারা ছাড়াও মনুষ্য সমাজও...মহাকাব্যের যুগ থেকেই মানুষের মধ্যে অমর হওয়ার আকাঙ্ক্ষা তীব্র। অমরত্ব পাওয়ার জন্য অসুর বা দেবতারা ছাড়াও মনুষ্য সমাজও বিভিন্ন ধরণের প্রচেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে বছরের পর বছর। যদিও অমরত্ব ধারণাটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক বলেই ধরা হয়। কেননা প্রকৃতির নিয়মে প্রত্যেক মানুষকে একদিন মৃত্যুর সম্মুখীন হতে হয়। তাই কেউই অমর হতে পারেন না। যদিও এক প্রাক্তন গুগল ইঞ্জিনিয়ার তথা বিজ্ঞানী, এই অসম্ভবও ভবিষ্যতে সম্ভব হতে পারে বলে দাবি করেছেন। তার কথা অনুসারে, ন্যানোবট (Nanobots) প্রযুক্তির সাহায্যে এমনটা করা সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে জানিয়ে রাখি, এই প্রযুক্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা চলছে।
গুগলের প্রাক্তন ইঞ্জিনিয়ার রে কার্জউইল (Ray Kurzweil) একটি চমকপ্রদ দাবি করেছেন যে, আর মাত্র ৭ বছর অপেক্ষা করলেই মানুষ অমর হতে পারবে। সবথেকে মজার বিষয় হল এই বিজ্ঞানীর ১৪৭টি দাবির মধ্যে ৮৬% সঠিক প্রমাণিত হয়েছে। আর জানিয়ে রাখি, ১৯৯৯ সালে রে কার্জউইলকে 'ন্যাশনাল মেডেল অফ টেকনোলজি' পুরস্কারের সাথে ভূষিত করা হয়েছিল এবং তাকে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রযুক্তি চিন্তাবিদদের একজন হিসাবে ধরা হয়।
Google -এর প্রাক্তন ইঞ্জিনিয়ার তথা প্রখ্যাত বিজ্ঞানী অমরত্বের বিষয়ে তার বইয়ে এই দাবি করেছেন
পূর্বেও রে কার্জউইল -কে দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তি সম্পর্কে একাধিক ভবিষ্যদ্বাণী করতে দেখা গেছে, যা পরবর্তী সময়ে সঠিক প্রমাণিত হয়েছে। যেমন এই বিজ্ঞানী, ২০০৫ সালে তার রচিত 'দ্য সিঙ্গুলারিটি ইজ নিয়ার' (The Singularity is Near) বইয়ে যে দাবিটি করেছিলেন তা সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ফের বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। চর্চিত বিষয়টি হল মানুষ সত্যিই কোনোদিন অমরত্ব পেতে সক্ষম হবে কিনা।
বিজ্ঞানী তার বইয়ে উল্লেখ করেছেন যে, ২০৩০ সাল থেকে মানুষ অমর হওয়ার মন্ত্র হাতে পাবে, তাদের জীবননাশের ভয় আর থাকবে না। তিনি মূলত তাই রচিত বইয়ে - জেনেটিক্স, ন্যানোটেকনোলজি এবং রোবোটিক্স সম্পর্কে লিখেছেন। কার্জউইলের এরূপ দাবির কারণ, তিনি মনে করেন যে ২০২৯ নাগাদ 'আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি' বা AI মানব-স্তরের বুদ্ধিমত্তা অর্জন করবে। এছাড়াও, এই বিজ্ঞানী 'সিঙ্গুলারিটি' (Singularity) -এর জন্য ২০৪৫ সালের একটা টাইমলাইন দিয়েছেন এবং দাবি করেছেন যে উল্লেখিত সময়ের পরে মানুষের প্রকৃত বুদ্ধি এবং AI প্রযুক্তির মেলবন্ধনে তৈরী ইন্টেলিজেন্সি বর্তমানের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার তুলনায় বহুগুণ উন্নীত ও উৎকর্ষমানের হবে।
কীভাবে Nanobots প্রযুক্তির সাহায্যে অমরত্ব পাবে মানুষ?
রে কার্জউইল তার বইতে ন্যানোটেকনোলজি এবং রোবোটিক্স সম্পর্কিত দাবি করেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে, এজ-রিভার্সিং 'ন্যানোবট' প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষ তাদের কোষগুলিকে ক্ষতি হওয়ার থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হবে। একইভাবে, বয়সের সাথে মানুষের কোষগুলি পুরানো এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষ ন্যানোবট এই প্রক্রিয়া বন্ধ করতে সক্ষম হবে এবং কোষগুলিকে সুরক্ষিত রাখবে। যার ফলে মানুষকে যেকোনো ধরনের বিপজ্জনক রোগ থেকে বাঁচানো যাবে বলে দাবি করেছেন রে। আর রোগবিহীন জীবন মানেই তো একপ্রকারের অমরত্ব।
Singularity এর অর্থ কি?
সিঙ্গুলারিটি প্রযুক্তিগত জগতে একটি অনুমানমূলক শব্দ হিসাবে বিবেচিত হয়, যা ভবিষ্যতের পরিস্থিতি বর্ণনা করে। যেমন রে কার্জউইল, ভবিষ্যতে প্রযুক্তি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) ব্যাপক উন্নতি ঘটার ফলে যান্ত্রিক মেশিন মানুষের চেয়ে অধিক স্মার্ট হয়ে উঠবে বলে দাবি করেছেন। তবে কার্জউইল একমাত্র বিজ্ঞানী নন যিনি সিঙ্গুলারিটি সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। রোবট নির্মাতা কোম্পানি সফটব্যাঙ্ক (Softbank) -এর সিইও মাসায়োশি সন (Masayoshi Son) -ও মন্তব্য করেছেন যে, ২০২৭ সালের মধ্যে সুপার-ইন্টেলিজেন্ট মেশিন নির্মাণ করা হবে।
এক্ষেত্রে আজকাল এমন অনেক কল্পবিজ্ঞান (ফিকশন) ফিল্ম তৈরি হতে দেখা যাচ্ছে যেখানে মানুষের চেয়েও স্মার্ট মেশিন এবং রোবট ভালো কাজ করছে। ফলে আজ যেটা কল্পনা-মাত্র, তা অদূর ভবিষ্যতে বাস্তবও হতে পারে। হয়তো রে কার্জউইলের অনুমান মতো, ৭ বছর পর সিঙ্গুলারিটি বা ন্যানোবট প্রযুক্তির মাধ্যমে মানবসমাজ অমরত্বও লাভ করতে পারে। প্রযুক্তির উন্নয়নে এখন কোনো কিছুই যে অসম্ভব নয়!