কম্পিউটার-ল্যাপটপ আমদানিতে বিধিনিষেধ, আম্বানির Jio-কে সুবিধা করে দিতেই পদক্ষেপ মোদী সরকারের?
একের পর এক বিধি-নিষেধের গেরোয় বাঁধার পর, গতকাল পড়শি চীনকে বড়সড় ধাক্কা দিয়েছে ভারত! সাম্প্রতিক নিয়মে কেন্দ্র সরকার,...একের পর এক বিধি-নিষেধের গেরোয় বাঁধার পর, গতকাল পড়শি চীনকে বড়সড় ধাক্কা দিয়েছে ভারত! সাম্প্রতিক নিয়মে কেন্দ্র সরকার, বাইরে থেকে ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, পার্সোনাল কম্পিউটার (PC) এবং সার্ভার জাতীয় প্রোডাক্টের আমদানি নিষিদ্ধ করেছে; এর ফলে এখন থেকে চীন এবং তাইওয়ানের মতো দেশগুলি থেকে ভারতে ল্যাপটপ এবং ট্যাবলেটের মতো ডিভাইস কেবল নির্দিষ্ট শর্তাবলি মেনে সীমিত সংখ্যায় আমদানি করা যাবে। কী সেই শর্ত? বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদফতর (DGFT)-এর বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, আমদানিকৃত পণ্য শুধুমাত্র নির্ধারিত উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হবে এবং সেগুলি বাজারে বিক্রি হবেনা এই শর্তেই ডিভাইসগুলি আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে। শুধু তাই নয়, ব্যবহারিক কাজ বা প্রয়োজন মিটে গেলে এই জাতীয় ডিভাইসগুলিকে ধ্বংস নতুবা পুনরায় রপ্তানি করতে হবে। নিঃসন্দেহে এই নতুন সরকারি নিয়ম বিদেশী সংস্থা এবং এদেশের বাজার তথা ক্রেতাদের জন্য অত্যন্ত অসন্তোষজনক। কারণ বিগত কয়েক বছর ধরে চীনা ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ডগুলি সেরা সেরা ডিভাইস ইন্ডিয়ান মার্কেটে এনে অধিকাংশ মানুষের সন্তুষ্টি দিয়েছে। সেক্ষেত্রে এই নিয়ম সংক্রান্ত খবর আসার পর, সোশ্যাল মিডিয়ায় সোশ্যাল মিডিয়ায় মোদী সরকারের দিকে আঙুল তুলেছেন বহু নেটিজেন।
Jio-কে সুবিধা দিতেই কি নিয়মের নামে চীনের জন্য নিষেধাজ্ঞা?
দীর্ঘদিন ধরেই সোশ্যাল মিডিয়ার কিছু ইউজার, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং আম্বানি-আমদানির প্রাইভেট কোম্পানির মধ্যে ঘনিষ্ঠতা আছে বলে মজা করেন। প্রধানমন্ত্রী এই কোম্পানিগুলিকে সরকারি সুবিধা পাইয়ে দেন – এমনটাও অনেকে অভিযোগ করে থাকেন। সেক্ষেত্রে সম্প্রতি বিদেশ থেকে ল্যাপটপ, ট্যাবলেট জাতীয় গ্যাজেট আমদানির বিষয়ে যে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে, তাতে এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক পোস্ট শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে যে, মোদি সরকার জিও (Jio) কোম্পানিকে সুবিধা দিতে মূলত ল্যাপটপ আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। আসলে মুকেশ আম্বানির মালিকানাধীন জিও অতিসম্প্রতি তাদের নতুন জিওবুক ২০২৩ (JioBook 2023) ল্যাপটপ চালু করেছে, যা আগামীকাল অর্থাৎ ৫ই আগস্ট থেকে অ্যামাজন ইন্ডিয়া (Amazon India)-তে বিক্রি হবে। আর সেই মর্মেই এই অভিযোগ। কিন্তু এর সত্যতা বা যৌক্তিকতা কতোটা?
ল্যাপটপ আমদানিতে ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞা কেন?
এক্ষেত্রে বলি, মূলত দুটি কারণে ভারতে ল্যাপটপ, ট্যাবলেট ও কম্পিউটার আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। প্রথম কারণ হল সরকারের 'মেড ইন ইন্ডিয়া' কর্মসূচীর প্রচার করা এবং এর ওপর জোর দেওয়া। নিষেধাজ্ঞার পরে, Lenovo থেকে HP, Asus, Acer এমনকি Samsung এবং Apple-এর মতো কোম্পানিগুলি ভারতে তাদের ল্যাপটপ এবং কম্পিউটার তৈরি করতে বাধ্য হবে। এতে মেড ইন্ডিয়া প্রোডাক্ট বাড়বে , একইসাথে দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
এছাড়া দ্বিতীয় কারণটি হল ডেটা সিকিউরিটি বা নাগরিকদের তথ্য সংক্রান্ত নিরাপত্তা প্রদান। আসলে বাইরে থেকে আমদানি করা ল্যাপটপ ও ট্যাবলেটে ইউজার ডেটা লিক হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আমদানি করা ল্যাপটপের ডেটা অন্য দেশের সার্ভারে সংরক্ষণ করা হতে পারে বা তাদের ওপর নজরদারি করা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে সরকার।
আর সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হল যে, জিওর ল্যাপটপ জিওবুকও চীন থেকেই আমদানি করা হয়। আসলে জিওর ল্যাপটপ বা আরও কিছু প্রোডাক্ট ভারতে তৈরি হয় না। যেমন অধিকাংশ 'মেড ইন ইন্ডিয়া'-র নামে যে জিওফোন (JioPhone) ব্যবহার করেন তাও চীনে নির্মিত এবং আমদানিকৃত। আবার জিওবুক ল্যাপটপ চীনের হুনান (Hunan Greatwall Computer Systems Co., Ltd.) কোম্পানির দ্বারা তৈরি হয়েছে। সুতরাং সামগ্রিকভাবে দেখা যাচ্ছে যে, সরকারের এই নিষেধাজ্ঞার ফলে জিওর কোনোরকম লাভ হবেনা, বরঞ্চ ক্ষতিই হবে, কারণ এত তাড়াতাড়ি তারা ভারতে ল্যাপটপ তৈরির জন্য প্ল্যান্ট প্রস্তুত করতে পারবেনা। আর প্রোডাক্ট আমদানি তো নৈব নৈব চ!