iPhone এর সিকিউরিটি বাঁচাতে পারল না, ব্যাঙ্ক থেকে ফিল্মি কায়দায় চুরি 8 লক্ষ টাকা
Apple বরাবরই সর্বাধিক নিরাপদ কনজিউমার মোবাইল ডিভাইস নির্মাতা হওয়ার দাবি করে এসেছে। তবে এই দাবি যে শুধু মুখে মুখে তা...Apple বরাবরই সর্বাধিক নিরাপদ কনজিউমার মোবাইল ডিভাইস নির্মাতা হওয়ার দাবি করে এসেছে। তবে এই দাবি যে শুধু মুখে মুখে তা কিন্তু নয়, ইতিমধ্যেই তা প্রমাণ করে দেখিয়েছে টিম কুকের সংস্থাটি। অর্থাৎ ক্রেতাদের সর্বাধিক সেরা নিরাপত্তা প্রদানের জন্য টেক জায়ান্টটি, সফ্টওয়্যার আপডেট রিলিজ করার পাশাপাশি ধারাবাহিকভাবে নতুন প্রাইভেসি এবং সিকিউরিটি ফিচারও সংযুক্ত করতে থাকে। যেমন Apple বর্তমানে iPhone ব্যবহারকারীদের অতিরিক্ত নিরাপত্তা প্রদান করার জন্য তাদের ডিভাইসে, পাসকোড সেট করার বিকল্প অফার করছে। এই ফিচার অন থাকলে, iPhone আনলক করার জন্য ব্যবহারকারীকে তার দ্বারা নির্ধারিত নম্বর সেট এন্টার করতে হয়৷ কার্যকারিতার দিক থেকে, এটা অনেকটা অ্যান্ড্রয়েডের পিনকোড ফিচারের অনুরূপ। কিন্তু আমরা যদি বলি, Apple এর এই সুরক্ষাকবচই চোরকে আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের রাস্তা দেখিয়ে দিতে পারে তাহলে বিশ্বাস হবে কী? বিশ্বাস না হওয়ারই কথা। কিন্তু সম্প্রতি এমন একটা ঘটনা ঘটেছে, যেখানে চোর এক iPhone মালিকের ফোন চুরি করার পর পাসকোড হ্যাক করে প্রায় ৮,০০,০০০ টাকা লুট করে নিয়েছে। আসুন সম্পূর্ণ ঘটনাটি জেনে নেওয়া যাক।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের একটি লেটেস্ট প্রতিবেদন অনুযায়ী, মিডটাউন ম্যানহাটন নিবাসী রেহান আয়াস (Reyhan Ayas) নামে একজন মহিলা একটি ক্লাবে গিয়েছিলেন থাঙ্কসগিভিং উইকেন্ড উদযাপন করতে। কিন্তু সেখানেই ঘটে বিপত্তি। এক অপরিচিত ব্যক্তি এসে তার সাথে পরিচয় করতে আগ্রহ প্রকাশ করে এবং কথোপকথন চলাকালীন হঠাৎই রেহানের হাত থেকে তার আইফোন ১৩ প্রো ম্যাক্স (iPhone 13 Pro Max) ফোনটি ছিনতাই করে পালিয়ে যায়। যার কিছু সময় পরই ভুক্তভোগী জানতে পারেন যে, তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ১০,০০০ ডলার (ভারতীয় মূল্যে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা) চুরি করে নেওয়া হয়েছে৷
ওয়ার্কফোর্স ইন্টেলিজেন্স স্টার্টআপে সিনিয়র ইকোনোমিস্ট হিসাবে কর্মরত এই ৩১-বছর বয়সী মহিলা জানান - তার আইফোন হারানোর কয়েক মিনিটের মধ্যেই অপর এক পরিচিতের মোবাইল থেকে চুরি হওয়া ডিভাইসের ডেটা অ্যাক্সেস করতে নিজের অ্যাপল অ্যাকাউন্টে লগ ইন করার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু হাজারো চেষ্টার পরও তিনি নিজের অ্যাপল অ্যাকাউন্ট ওপেন করতে সমর্থ হননি। যার দরুন - ফটো, আইডেন্টিটি কার্ডের তথ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ নোটস সহ সমস্ত ডেটা পুনরুদ্ধার করা যায়নি, কিছু তথ্য ডিভাইসেই থেকে যায়৷ আর কিছুক্ষণ পরেই তিনি, তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ১০,০০০ ডলার ডেবিট হওয়ার ট্রানজ্যাকশন নোটিফিকেশন পান৷
রেহান আয়াসের মতো হাজারো ব্যক্তি প্রতিনিয়ত ছিনতাইবাজদের শিকার হচ্ছেন। আর পরবর্তীতে প্রত্যেক ভিক্টিম, তাদের অ্যাপল অ্যাকাউন্ট থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে লগ আউট হয়ে যাওয়ার দাবি করেছেন। কিন্তু ভাবনার বিষয় ফোন পাসকোড ফিচার এনাবল থাকা সত্ত্বেও কীভাবে ফোন হ্যাক করা সম্ভব হচ্ছে? কারণটা তাহলে ব্যাখ্যা করি…
আসলে, ছিনতাইকারীরা প্রথমেই একজন ব্যক্তিকে টার্গেট করে এবং তারপর কিছুক্ষন ভিকটিমের আইফোনের দিকে নজর রাখে। যাতে সেই ব্যক্তি পাসকোড এন্টার করলে তাদের নজর না এড়িয়ে যায়। আর একবার সে পাসকোড জানতে পারলেই, ততক্ষনাৎ আইফোন চুরি করে নেয় এবং পরবর্তীতে ডিভাইসে পাসকোড দিয়ে লগ-ইন করে এবং অ্যাপল আইডির পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে দেয়। এর ফলে ভিক্টিম সম্পূর্ণভাবে তাদের ডিভাইসের ডেটা অ্যাক্সেস করতে অক্ষম হয়ে যায়। আর আইফোনে থাকা যাবতীয় ডেটা এবং অ্যাপল আইডি বা আইক্লাউডে (iCloud) -এ থাকা ডকুমেন্ট চলে যায় ছিনতাইকারীর হাতে। আর যেহেতু চোর পাসকোড জানে, সেহেতু ডিভাইসে সেভ রাখা সমস্ত পাসওয়ার্ডের অ্যাক্সেস, এমনকি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য এবং ফিনান্সিয়াল অ্যাপে লগ ইন করার পাসওয়ার্ড আনলক করা তার জন্য খুবই সহজ হয়ে যায়।
এই বিষয়ে Apple এর একজন মুখপাত্র মন্তব্য করেছেন যে, "নিরাপত্তা গবেষকদের মতে, iPhone হল সবচেয়ে নিরাপদ কনজিউমার মোবাইল ডিভাইস। আর আমরাও আমাদের সমস্ত ব্যবহারকারীদের নতুন এবং উদীয়মান সিকিউরিটি থ্রেট থেকে রক্ষা করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করছি। আমরা সেইসকল ভুক্তভোগী iPhone ব্যবহারকারীদের প্রতি সহানুভূতি জানাচ্ছি, যারা এই ধরণের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন। আমরা আমাদের ব্যবহারকারীদের উপর হওয়া সমস্ত আক্রমণকে খুবই গুরুত্ব সহকারে নিই, তা যতই বিরল হোক না কেন।” এই বিবৃতিকে সামনে রেখে আশা করতে পারি যে, অ্যাপল পাসকোড হ্যাক সংক্রান্ত কোনো সমাধান শীঘ্রই খুঁজে বের করবে।
কীভাবে আপনার আইফোন বা অ্যাপল আইডি সুরক্ষিত রাখবেন? (how to protect your iPhone or Apple ID?)
আইফোন চুরির ঘটনা নতুন নয়। আর চোরাই আইফোনগুলিকে যে 'ব্ল্যাক মার্কেট' -এ বিক্রি করা হয় তাও কারোর অজানা নয়। কিন্তু পাসকোড হ্যাক হওয়ার ঘটনা কিন্তু সম্পূর্ণ নতুন। চোর খুবই চালাকির সাথে আইফোন মালিকদের সাথে বন্ধুত্ব করে তাদের পাসকোড জানছেন এবং পরবর্তীতে তাদের অর্থ লুটছেন। তাই আমাদের পরামর্শ, কোনো জনবহুল জায়গা বা ক্লাবের মতো স্থানে আইফোন কম ব্যবহার করুন। বা করলেও, আড়ালে পাসকোডটি এন্টার করুন। এছাড়া পাসকোডের পরিবর্তে আপনি লক স্ক্রিন, ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার, ফেস আনলক সেটআপ করতে পারেন। আবার অ্যাপল তাদের আইফোন ডিভাইসের জন্য আলফানিউমেরিক পাসওয়ার্ড বিকল্প অফার করে, যা ব্যবহার করে আপনি সর্বাধিক ৩৪টি অক্ষরের পাসকোড সেট আপ করতে পারবেন। এমনটা করলে পাসওয়ার্ড শক্তিশালীও হবে এবং একজনের পক্ষে মনে রাখাও কঠিন হবে। সর্বোপরি সর্বদা সচেতন থাকুন এবং খেয়াল রাখুন যে আপনার উপর কেউ নজর রাখছে কিনা।