স্লো ইন্টারনেট স্পিড অথচ চড়া বিল, নিজেই ফাইবার ব্রডব্যান্ড বানিয়ে প্রায় ২০ কোটি টাকা পুরস্কার জিতলেন যুবক
এখনকার ইন্টারনেট নির্ভর জীবনে ব্রডব্যান্ড কানেকশনের (Broadband Connection) গুরুত্ব যে কতখানি, সে সম্পর্কে আর নতুন করে...এখনকার ইন্টারনেট নির্ভর জীবনে ব্রডব্যান্ড কানেকশনের (Broadband Connection) গুরুত্ব যে কতখানি, সে সম্পর্কে আর নতুন করে কিছু বলার প্রয়োজন নেই। মূলত হাই-স্পিড স্টেবল ইন্টারনেটের জন্যই মানুষ এই পরিষেবা ব্যবহার করে থাকেন, কারণ বেশিরভাগ ব্রডব্যান্ড পরিষেবাতেই আনলিমিটেড ডেটা ব্যবহার করা যায়। আর এতে বাড়িতে বসে অফিসের কাজ করা ছাড়াও অনলাইনে গেম খেলা কিংবা ভিডিয়ো স্ট্রিমিংয়ের মতো কাজগুলিও অতি অনায়াসে করতে পারেন ইউজাররা। এককথায় বললে, একটি হাই-স্পিড ব্রডব্যান্ড কানেকশন থাকলে জীবন অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। তবে যে কোম্পানির কানেকশনই হোক না কেন, ব্রডব্যান্ড পরিষেবা ব্যবহারের জন্য কিন্তু ব্যবহারকারীদের প্রতি মাসে বেশ মোটা টাকা খরচ করতে হয়। কিন্তু এর মধ্যে মুশকিল হল যে, দুরন্ত গতির ইন্টারনেট পাওয়ার আশায় বেশ খানিকটা টাকা খসালেও অনেক সময়ই হতাশ হতে হয় ইউজারদের। কারণ কখনো কখনো এমন কচ্ছপের গতিতে নেট চলে যে অনলাইনে কোনো কাজ করাই একপ্রকার অসম্ভব হয়ে ওঠে, যা ইউজারদের চরম বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। স্বাভাবিকভাবেই সবার মনে প্রশ্ন আসে – এরকম সমস্যার হাত থেকে মুক্তির উপায় কী?
স্লো স্পিড এবং চড়া বিলের কারণে নিজের ব্রডব্যান্ড তৈরি করলেন এক ব্যক্তি
সেক্ষেত্রে ব্রডব্যান্ড কানেকশনের যাবতীয় সমস্যার ক্ষেত্রে অধিকাংশ সাধারণ মানুষ চট করে কোনো পথ খুঁজে না পেলেও, মার্কিন মুলুকের এক ব্যক্তি কিন্তু এক দুর্দান্ত উপায় বের করে ফেলেছেন। দীর্ঘদিন ধরে প্রতি মাসে ব্রডব্যান্ডের জন্য মোটা টাকা বিল পরিশোধ করা সত্ত্বেও ধীরগতির ইন্টারনেটের চোটে চরম বিরক্ত হয়ে যান তিনি। তাই এই সমস্যার হাত থেকে রেহাই পেতে অবশেষে তিনি খোদ নিজের ব্রডব্যান্ড তৈরি করে ফেলেছেন এবং তার এই অভাবনীয় কৃতিত্বের জন্য মার্কিন সরকারের কাছ থেকে পেয়েছেন ২.৬ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ২০.৭ কোটি টাকা) পুরস্কার। আসুন, ঘটনাটির সম্পর্কে একটু বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
ব্রডব্যান্ড সার্ভিস এবং হয়রানি
ডেইলি স্টার (Daily Star)-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানের বাসিন্দা জ্যারেড মাউচ (Jared Mauch) বছরের পর বছর ধরে দুর্বল ইন্টারনেট সংযোগের সমস্যা ভোগ করছিলেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে পরিষেবার হাল পরিবর্তন না হওয়ায়, অবশেষে তিতিবিরক্ত হয়ে গিয়ে তিনি একপ্রকার বাধ্য হয়েই প্রচুর অর্থ ব্যয় করে নিজের ব্রডব্যান্ড পরিষেবা তৈরি করে ফেলেন। আপনাদেরকে জানিয়ে রাখি যে, মাউচ, আকামাই (Akamai)-তে কাজ করেন এবং ২০০২ সালে তিনি তার নতুন বাড়িতে শিফট্ করেন। আর দুই দশক আগে নতুন বাসস্থানে নেট কানেকশনের জন্য তিনি ১.৫ এমবিপিএস স্পিডযুক্ত টি১ (T1) লাইন (নেট পরিষেবা সরবরাহকারী এবং ক্লায়েন্টের মধ্যে একটি ট্রান্সমিশন কানেকশন) পান। যদিও সময়ের সাথে সাথে প্রযুক্তি অনেক উন্নত হয়েছে, তবে মাউচ যেখানে থাকেন, সেখানকার ইন্টারনেট পরিষেবা সরবরাহকারীরা ওই জায়গায় কোনো ফাইবার কেবল ইনস্টল করেনি। ফলে দীর্ঘদিন যাবৎ ধীরগতির ইন্টারনেট সার্ভিস পেতে পেতে তিনি হয়রান হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি অত্যন্ত বিরক্তও হয়ে পড়েন।
সস্তায় দুরন্ত গতির ইন্টারনেট প্রদান করবে মাউচের কানেকশন
অনেক ভাবনাচিন্তা করার পর ইন্টারনেটের চরম সমস্যার হাত থেকে রেহাই পাওয়ার পাশাপাশি ৫০ এমবিপিএস নেট স্পিড পাওয়ার জন্য তিনি শেষমেশ একটি ওয়্যারলেস আইএসপি (ISP)-র দ্বারস্থ হন। তিনি কমকাস্ট (Comcast)-কে তার বাড়িতে ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদান করার জন্য অনুরোধ করেন, কিন্তু এর জন্য তারা মাউচের কাছ থেকে পঞ্চাশ হাজার ডলার (প্রায় ৪০ লাখ টাকা) দাবি করে। খুব স্বাভাবিকভাবেই টাকার অঙ্কটা মাউচের অনেকটাই ব্যয়বহুল বলে মনে হয়। তাই এর পর থেকেই তিনি সাশ্রয়ী মূল্যে দুরন্ত গতির ইন্টারনেট কানেকশন পাওয়ার জন্য তন্ন তন্ন করে খোঁজ চালাতে থাকেন। কিন্তু বিশেষ কোনো সুফল না মেলায় অবশেষে তিনি তার নিজের আইএসপি গঠন করার লক্ষ্যে জোরকদমে কাজ করা শুরু করেন এবং দীর্ঘ পরিশ্রমের পর অবশেষে তিনি তা কার্যকরী করতেও সক্ষম হন। বর্তমানে মাউচের পাশাপাশি তার ৭০ জন প্রতিবেশীও এই পরিষেবা ব্যবহার করছেন।
প্রচুর টাকা খরচ করার পর মিলেছে সুফল
নিজের ব্রডব্যান্ড সার্ভিসটির সম্পর্কে মাউচ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে, তিনি এর জন্য ১৪৫,০০০ ডলার (১ কোটি টাকারও বেশি) ব্যয় করেন। এর মধ্যে সেরা কোয়ালিটির ফাইবার কেবল লাগানোর জন্য ঠিকাদারকেই দিতে হয় ৯৫,০০০ ডলার (প্রায় ৭৫ লাখ টাকা)। এক্ষেত্রে জনগণকে সাশ্রয়ী মূল্যে ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানের জন্য তিনি একটি নতুন কোম্পানি শুরু করেন, যার নাম রাখেন ওয়াশটেনাউ ফাইবার প্রপার্টিজ (Washtenaw Fiber Properties)। এক্ষেত্রে বলে রাখি, যখন তিনি এই কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা করেন, তখন এর একমাত্র গ্রাহক ছিলেন তিনি খোদ নিজেই; তবে পরবর্তীকালে তার প্রতিবেশীরাও সংস্থাটির পরিষেবার আওতায় চলে আসেন।
মাউচের ব্রডব্যান্ড কানেকশন ব্যবহারের খরচ
আপনাদের জানিয়ে রাখি যে, মাউচের ব্রডব্যান্ড কানেকশনের দাম মাত্র ১৯৯ ডলার ( প্রায় ১৫,৮০০ টাকা)। তদুপরি, মাউচের কোম্পানিতে গ্রাহকরা নিজেদের পছন্দানুযায়ী ব্রডব্যান্ড প্ল্যান বেছে নেওয়ারও সুযোগ পাবেন। যেমন – ১০০ এমবিপিএস স্পিডে আনলিমিটেড ডেটা উপভোগ করার জন্য গ্রাহকদেরকে মাসে ৫৫ ডলার (প্রায় ৪,৩০০ টাকা) ব্যয় করতে হবে। আবার, ১ জিবিপিএস স্পিডে আনলিমিটেড ডেটা পেতে চাইলে ইউজারদের পকেট থেকে খসবে ৭৯ ডলার (প্রায় ৬,৩০০ টাকা)। সবমিলিয়ে মাউচের এই অভূতপূর্ব প্রচেষ্টা যে নিঃসন্দেহে ভূয়সী প্রশংসার দাবি রাখে, সেকথা বলাই বাহুল্য।