J Radhamani: ক্রেন, রোডরোলার-সহ বহু ধরনের গাড়ি চালান ইনি! বয়স কেবল একটি সংখ্যা, প্রমাণ করছেন ৭১ বছরের বৃদ্ধা

গাড়ি চালানো বা ড্রাইভিং অনেকের কাছেই একটি নেশার মতো, বিশেষত তরুণ প্রজন্মের মধ্যেই এই নেশা বিশেষভাবে দেখা যায়। একথা শুনে অবাক হওয়ার তেমন কিছু নেই৷…

গাড়ি চালানো বা ড্রাইভিং অনেকের কাছেই একটি নেশার মতো, বিশেষত তরুণ প্রজন্মের মধ্যেই এই নেশা বিশেষভাবে দেখা যায়। একথা শুনে অবাক হওয়ার তেমন কিছু নেই৷ তবে যদি এখন বলি যে, এই নেশা কোনো তরুণের নয়, বরং একজন ৭১ বছর বয়সী মহিলার, তাহলে তো আপনি নিশ্চয়ই একটু অবাক হতে বাধ্য, তাই না? আসলে এমনই একজন নারী আজ আমাদের এই প্রতিবেদনের মুখ্য আলোচ্য বিষয়। জে রাধামণি (J Radhamani) নামক এই মহিলার বয়স ৭১ বছর এবং তিনি কোচির কেরালার থোপুমপাডির বাসিন্দা। রাধামণি আমাদের রোজকার জীবনে দেখা ঠাকুমাদের মতো নন যিনি তাঁর বাচ্চাদের গল্প বলে ঘুম পারান, তিনি এর চাইতেও অনেক বেশি দৃষ্টান্তমূলক কাজ করেন যার জেরে সহজেই তিনি তরুণ প্রজন্ম সহ সকল শ্রেণির মানুষের কাছে এক অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন।

আসলে চমকে দেওয়ার মতো খবরটি হল, রাধামণির কাছে ১১ ধরনের যানবাহন চালানোর লাইসেন্স রয়েছে। তার কাছে এক্সক্যাভেটর, ফর্কলিফট, ক্রেন, রোড রোলার, ট্রাক্টর, কনটেইনার ট্রেলার ট্রাক, বাস, লরি সহ আরও অনেক যান চালানোর লাইসেন্স রয়েছে, যা এক কথায় অবিশ্বাস্য! কিন্তু এই চাঞ্চল্যকর ঘটনার সূত্রপাত হয় কবে থেকে? এই প্রসঙ্গে বলে রাখি, রাধামণি ৩০ বছর বয়সে প্রথম গাড়ি চালানো শিখেছিলেন। তার স্বামী তাকে প্রথম ড্রাইভিং শেখার জন্য জোর দেন, এবং খুব শীঘ্রই এতে আগ্রহী হয়ে তিনি হরেক রকমের গাড়ি চালনায় পটু হয়ে ওঠেন৷

রাধামণির স্বামী ১৯৭০-এর দশকে কেরালার কোচিতে এ-জেড ড্রাইভিং স্কুল চালু করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ২০০৪ সালে রাধামণি একটি দুর্ঘটনায় তার স্বামীকে হারান। এই ঘটনার পর তিনি নিজের সন্তানদের হাত ধরে তার পারিবারিক ড্রাইভিং স্কুলটি চালানোর কাজে মন দেন। একথা সবারই জানা যে, ড্রাইভিং স্কুল চালানোর জন্য তার মালিক বা প্রশিক্ষকদের কাছে অবশ্যই শেখানোর জন্য ব্যবহৃত যানবাহনগুলি চালানোর লাইসেন্স থাকতে হবে। তবে রাধামণি এই গাড়িগুলি চালান না, কারণ তিনি এখন স্কুলে ড্রাইভিং শেখান না। কিন্তু কীভাবে গাড়ি চালানোয় পারদর্শী হয়ে উঠতে হয়, তার কিছু উপযুক্ত দৃষ্টান্ত স্কুলের শিক্ষার্থীদের কাছে নিয়মিত প্রদর্শন করেন। রাধামণি বর্তমানে ড্রাইভিং স্কুলের কম্পিউটার পরিচালনারবিষয়গুলি দেখাশোনা করছেন। নিজের দুই ছেলে, বৌমা ও নাতিকে নিয়ে ড্রাইভিং স্কুল চালান তিনি।

মজার ব্যাপার হল, রাধামণি এখনও একজন ছাত্রী। ড্রাইভিং স্কুলে কম্পিউটার দেখাশোনার পাশাপাশি তিনি কালামাসেরি পলিটেকনিকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডিপ্লোমা কোর্সও করছেন। তিনি কেরালার এবং সম্ভবত ভারতের একমাত্র মহিলা যিনি ১১টি ভিন্ন বিভাগের যানবাহনের লাইসেন্সপ্রাপ্ত৷ আবার রাধামণিই কেরালার প্রথম মহিলা যিনি ভারী গাড়ির (heavy vehicle) লাইসেন্স পেয়েছেন।

চেষ্টা থাকলে যে সবকিছুই করা সম্ভব এবং বয়স যে কেবলমাত্র একটা সংখ্যা ছাড়া আর কিছুই নয়, তার এক জ্বলন্ত উদাহরণ হলেন রাধামণি। এই বয়সে নিজেকে ব্যস্ত রাখার জন্য তিনি ক্রমাগত একের পর এক নতুন জিনিস শিখে চলেছেন এবং বয়স যাতে তার লক্ষ্যে কোনো বাধা হয়ে না দাঁড়াতে পারে, তার জন্য সবরকম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সুতরাং, নতুন প্রজন্ম সহ সকল শ্রেণির মানুষের কাছে তিনি যে এক চরম অনুপ্রেরণার নিদর্শন, সে কথা বলাই বাহুল্য।