বিল পেমেন্ট, অর্থ স্থানান্তর বা এবং অন্যান্য লেনদেন করার একটি দ্রুত এবং সুবিধাজনক মাধ্যম হল ইন্টারনেট ব্যাংকিং। বর্তমান প্যানডেমিক পরিস্থিতিতে এর ব্যবহার বহুল পরিমাণে বেড়ে গেছে। তবে এটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশ কিছু ঝুঁকিও রয়েছে। ফিশিং এবং স্কিমিং হল কিছু সাধারণ অস্ত্র (tools) যা প্রতারকরা অর্থ চুরি করতে হামেশাই ব্যবহার করে থাকে। তবে খুব সাধারণ কিছু সতর্কতামূলক উপায় অবলম্বন করলে এই জাতীয় স্ক্যামগুলি আপনি খুব সহজেই এড়াতে সক্ষম হবেন। আমরা সবাই অজান্তে অনলাইন ব্যাংকিংয়ের সময় ছোটোখাটো কিছু ভুল করেই ফেলি। তাই এখানে এরকমই বারোটি ভুলের কথা উল্লেখ করা হল যা অনলাইন ব্যাংকিংয়ের সময় ভুলেও কখনো করবেন না।
১. অনলাইন ব্যাংকিং ট্রানজ্যাকশন করার সময় পাবলিক ওয়াই-ফাই কানেকশন ব্যবহার করবেন না
অনলাইন ব্যাংকিং ট্রানজ্যাকশন করার সময়, ইন্টারনেট সংযোগের জন্য কখনোই পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহার করবেন না। এগুলি সাধারণত অসুরক্ষিত হয়; তাই খুব সহজেই হ্যাকাররা আপনার ডিভাইসে সংক্রামিত সফ্টওয়্যার প্ল্যান্ট করে আপনার ব্যাংকিং বিবরণ চুরি করতে পারে।
২. পাবলিক চার্জিং স্টেশনগুলিতে আপনার মোবাইল ফোন চার্জ করবেন না
জুস জ্যাকিংয়ের শিকার হওয়া এড়াতে ( ডেটা চুরি করতে USB cable ব্যবহার করা হয়) পাবলিক চার্জিং স্টেশনগুলিতে কখনোই স্মার্টফোন চার্জ করবেন না। নিজের চার্জিং কেবল (cable) বহন করা একান্ত বাঞ্ছনীয়।
৩. গুগলে কোনো ব্যাঙ্কের কাস্টমার কেয়ার বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নম্বর অনুসন্ধান করবেন না
প্রশ্ন এবং অভিযোগের জন্য ফোন নম্বর এবং ইমেল সম্পর্কিত তথ্য পেতে সর্বদা ব্যাংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যান।
৪. Google Play Store এবং Apple App Store ছাড়া অন্য কোথাও থেকে আপনার স্মার্টফোনে অ্যাপ ইনস্টল করবেন না
শুধুমাত্র গুগল প্লে স্টোর এবং অ্যাপল অ্যাপ স্টোরের মতো নির্ভরযোগ্য অ্যাপ স্টোরগুলি থেকে আপনার প্রয়োজনীয় অ্যাপগুলি ডাউনলোড করবেন। অানঅফিশিয়াল সোর্স থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করা আপনার স্মার্টফোন এবং এতে উপলব্ধ ডেটা উভয়ের পক্ষেই ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
৫. অ্যান্ড্রয়েড সিকিউরিটি আপডেটগুলি উপেক্ষা করবেন না, সর্বদা আপনার স্মার্টফোনে সেগুলি ইনস্টল করুন
যদিও সফ্টওয়্যার আপডেটগুলি স্মার্টফোনে বাগ এবং অন্যান্য সমস্যাগুলির মোকাবিলা করতে সহায়তা করে, তবে তারা সাইবার সংক্রান্ত ঝুঁকিগুলি হ্রাস করতেও সক্ষম। লেটেস্ট অপারেটিং সিস্টেমগুলিতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন সিকিউরিটি প্যাচ বর্তমান, তাই এগুলি অতিক্রম করে আপনার ডিভাইস হ্যাক করা হ্যাকারদের পক্ষে অবশ্যই কঠিন হবে।
৬. খুব নিশ্চিত না হলে ইমেল বা SMS-এ পাঠানো কোনো ব্যাঙ্ক বা পেমেন্ট সম্পর্কিত লিঙ্কে ক্লিক করবেন না
SMS বা মেইলের মাধ্যমে আসা লেনদেন সম্পর্কিত কোনো লিঙ্কে ক্লিক করবেন না। এছাড়াও, কখনো কখনো সাইবার অপরাধীরা ব্যাংক সম্পর্কিত লেনদেনের কাজ সম্পাদনের জন্য ইউজারদের মনে একটি তাগিদ তৈরি করে। এই জাতীয় মেসেজগুলির দিকে নজর রাখুন এবং ক্লিক করার আগে সর্বদা সংশ্লিষ্ট URL টি চেক করে নিন।
৭. Facebook, Twitter এবং Instagram-এর মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিতে কোনো ব্যাংকিং বা KYC সম্পর্কিত তথ্য শেয়ার করবেন না
সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনো প্রশ্ন শেয়ার না করা বা কোনো অভিযোগের প্রতিবিধান না চাওয়াই বাঞ্ছনীয়। এগুলির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কিছু ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশিত হয়, যার অপব্যবহার করে হ্যাকাররা খুব সহজেই অতি নিপুণভাবে তাদের অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে সক্ষম হয়। এমনকি যদি কেউ ব্যাংকের সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে, তবে তার ডাইরেক্ট মেসেজ বা DM ফিচার অবশ্যই ব্যবহার করা উচিত।
৮. অনলাইন ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে খুব সহজেই অনুমানযোগ্য পাসওয়ার্ড সেট করবেন না
একটি কমজোরি পাসওয়ার্ড ( অর্থাৎ যা খুব সহজেই অনুমান করা যায়) ক্র্যাক করা অত্যন্ত সহজ। তাই একটি মজবুত তথা দুর্ভেদ্য পাসওয়ার্ড (অর্থাৎ একটি জটিল পাসওয়ার্ড যা হ্যাকাররা খুব সহজে অনুমান করতে পারবে না) সাইবার জালিয়াতির সম্ভাবনা অনেকাংশে হ্রাস করে।
৯. আপনার অনলাইন ব্যাংকিং পাসওয়ার্ড ঘনঘন পরিবর্তন করতে ভুলবেন না
সাইবার অপরাধীদের শিকার হওয়া এড়াতে প্রতি তিন থেকে চার মাস অন্তর ব্যাংক সম্পর্কিত পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা নিরাপত্তা এবং সুরক্ষার গ্যারান্টি দেয়।
১০. আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সাথে নিয়মিত ব্যবহার করেন না, এমন মোবাইল নম্বর এবং ইমেল আইডি লিঙ্ক করবেন না
এটি কেবলমাত্র সমস্ত ব্যাংক লেনদেনের ট্র্যাক রাখতেই সহায়তা করে না, উপরন্তু এটি আপনাকে একটি অননুমোদিত লেনদেন সম্পর্কে আগাম জানতেও সহায়তা করবে।
১১. ফোনে কারোর সাথে ব্যাংক সম্পর্কিত কোনো তথ্য শেয়ার করবেন না
অনেক ক্ষেত্রে স্ক্যামস্টাররা নিজেদেরকে ব্যাংকের প্রতিনিধি হিসেবে দাবি করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে তাদের ব্যাংকের বিশদ বিবরণ জিজ্ঞাসা করে। তাদের সাথে এই জাতীয় কোনো তথ্য শেয়ার করবেন না। সর্বদা মনে রাখবেন যে, ব্যাংক কখনোই আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ফোন মারফত জানতে চাইবে না।
১২. আপনার স্মার্টফোনের অ্যাপগুলিকে অপ্রয়োজনীয় অনুমতি (unnecessary permissions) দেবেন না
যে-কোনো অ্যাপকে অনুমতি দেওয়ার আগে ভালো করে পড়ুন। অ্যাপগুলিকে আরও ডেটা অ্যাক্সেস করতে দেওয়া আপনার ব্যক্তিগত তথ্যকে ঝুঁকির মুখে ফেলে, যা হ্যাকাররা অনায়াসেই ব্যবহার করতে পারে।