OnePlus EV: নেই স্টিয়ারিং, চালকের ভূমিকায় স্মার্টফোন, স্বয়ংক্রিয় গাড়ি আনার পথে ওয়ানপ্লাস?

২০১৯-এর পয়লা এপ্রিলে বোকা বানাতে গিয়ে রীতিমতো হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল ওয়ানপ্লাস (OnePlus)। সবাইকে ‘এপ্রিল ফুল’ করতে গিয়ে একটি ইলেকট্রিক সুপারকার আনার কথা জানিয়েছিল সংস্থাটি। র‌্যাপ…

২০১৯-এর পয়লা এপ্রিলে বোকা বানাতে গিয়ে রীতিমতো হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল ওয়ানপ্লাস (OnePlus)। সবাইকে ‘এপ্রিল ফুল’ করতে গিয়ে একটি ইলেকট্রিক সুপারকার আনার কথা জানিয়েছিল সংস্থাটি। র‌্যাপ কার (Wrap Car) বলে সেই বিদ্যুৎচালিত সুপারকারের চোখ কপালে তোলার মতো বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করা হয়েছিল ওয়ানপ্লাসের ওয়েবসাইটে। প্রাঙ্ক ভেবে অবশ্য বিষয়টি মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেছিলেন অনেকেই। কিন্তু সেটা কি নিছক মজার ছলে নাকি গাড়ি টিজ করার পিছনে কোনও বড় উদ্দেশ্য ছিল ওয়ানপ্লাসের?

নভেম্বরে এসে আর এপ্রিল ফুল নয়! সত্যি সত্যিই এবার গোপনে চালকবিহীন গাড়ি, সেল্ফ-ব্যালেন্সিং স্কুটার, ইলেকট্রিক ইউনিসাইকেল (ছেলে-মেয়ে উভয় চালাতে পারে), রিমোট কন্ট্রোল ভেহিকেল, এমনকি সামরিক ড্রোনের উপরেও কাজ করতে পারে ওয়ানপ্লাস। ওয়ানপ্লাস লাইফ (OnePlus) বলে একটি নয়া ব্র্যান্ডের ট্রেডমার্ক পাওয়ার জন্য আবেদন করেছে সংস্থা। সেই ট্রেডমার্ক লিস্টিং থেকে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে ওয়ানপ্লাসের প্রবেশ করা নিয়ে জল্পনার সৃষ্টি হয়েছে।

OnePlus একা নয়

স্মার্টফোন প্রস্তুতকারী সংস্থা হিসেবে শুধু ওয়ানপ্লাস যে গাড়ির ব্যবসায় নামার চিন্তাভাবনা করছে, এমনটা নয়। সনি (Sony) তাদের ভিসন (Vision S) কনসেপ্টের গাড়ি আগেই প্রকাশ্যে এনেছে। গোটা বিশ্বকে জানিয়েছে, কী কী প্রযুক্তি রয়েছে তাদের গাড়ির ভিতরে। আবার শাওমি (Xiaomi) জানিয়েছে, ২০২৪-এর মধ্যেই বৈদ্যুতিক গাড়ি বাজারে ছাড়বে তারা। টেক জায়ান্ট অ্যাপল (Apple)-ও পিছিয়ে নেই। ২০১৪ থেকে প্রজেক্ট টাইটান বলে একটি গতি গোপন প্রকল্পের অধীনে অটোনোমাস বৈদ্যুতিক গাড়ির উপরে কাজ করছে তারা। অ্যাপলের প্রথম গাড়ি ২০২৬-এর মধ্যেই আত্মপ্রকাশ করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

উল্লেখ্য, পূর্বে গাড়ি শিল্পে আগ্রহ দেখিয়ে ট্রেডমার্কের ফাইল করেছে ওয়ানপ্লাসের অভিভাবক সংস্থা চীনের বিবিকে ইলেকট্রনিক্স (BBK Electronics)-এর ছত্রছায়ায় থাকা রিয়েলমি (Realme) ও ওপ্পো (Oppo)। যদিও এই বিষয়ে খোলাখুলি কিছু জানায়নি কোনও পক্ষই।

স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলির গাড়ির ব্যবসায় নামার প্রবণতা কেন?

প্রযুক্তি সংস্থাগুলির মতে, স্মার্টফোনের ব্যবহার আগামী দিনে কমে আসবে। যে ভাবে ফিচার ফোনের বাজার দখল করেছিল স্মার্টফোন। ভবিষ্যতে একই পদ্ধতিতে স্মার্টফোনের জায়গা নেবে অন্য কোনও হাই-টেক ডিভাইস৷ স্মার্টফোনের অস্বিত্ব অবশ্যই থাকবে। তবে ঘটবে বিবর্তন। আর এই বিবর্তনের মাঝে বাজার থেকে হারিয়ে যেতে পারে বড় বড় নাম। এর ফলে আগামীর কথা ভেবে বৈদ্যুতিক গাড়ির উপরেই বাজি ধরছে বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা।

এই ধরনের গাড়ির সাথে স্মার্টফোনের চরিত্রগত বৈশিষ্ট্যও খুঁজে পেয়েছে তারা। ব্যাটারি, সেমিকন্ডাক্টর, আর ব্রেন পরিচালনার জন্য স্মার্ট সফটওয়্যার। কার্যপ্রণালী অনেকটা মুঠোফোনের মতোই। ঠিক সেই কারণেই বর্তমানের অটো জায়েন্টদের পিছনে ফেলে আগামীতে বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারে অংশীদারি বাড়ানোর লক্ষ্য রাখছে সংস্থাগুলি।

OnePlus Wrap Car: ফিচার

এপ্রিল ফুল করার সময় র‌্যাপ কারের কিছু বৈশিষ্ট্যও সামনে এনেছিল ওয়ানপ্লাস। এই গাড়ির প্রথম হাইলাইট হল, স্টিয়ারিংয়ের অনুপস্থিতি। তাহলে গাড়ি কীভাবে চালানো যাবে? উত্তরে ওয়ানপ্লাস বলেছিল, সেটাও খুব সাধারণ। আমাদের স্মার্টফোন নিয়ে সিটে বসে পড়ুন। নির্দিষ্ট কন্ট্রোল মেনুতে গিয়ে আঙুল দিয়ে বাম দিকে সোয়াইপ করুন। গাড়ি বাম দিকে ঘুরবে। এ ভাবেই ডানে, পিছনে, সামনে।

Wrap Car-এর পাওয়ারট্রেন সম্বন্ধীয় বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। তবে পারফরম্যান্সের সম্পর্কে বলা হয়েছিল, এটি ৩ সেকেন্ডে ০ থেকে ৬০ মাইল প্রতি ঘণ্টায় গতিবেগ তুলতে পারবে। একবার চার্জ দিলে পাড়ি দেওয়া যাবে ২৯০ মাইল (প্রায় ৪৬৭ কিলোমিটার পথ)।

এছাড়া ২০ মিনিটের চার্জে র‌্যাপ কারে ৪৩৫ কিলোমিটার পাড়ি জমানোর শক্তি পাবে। তবে ওয়ানপ্লাস সত্যিই গাড়ি তৈরিতে হাত দিলে, আমরা র‌্যাপ কারের প্রোডাকশন ভার্সন দেখতে পাব কি না, তা এখনও অস্পষ্ট।

ভারতের বাজারের জন্য OnePlus-এর ইলেকট্রিক টু-হুইলার?

ভারতের মতো দেশে হাই-ফাই অটোনোমাস প্রযুক্তির সুপারকারের পরিবর্তে দু’চাকার বৈদ্যুতিক গাড়ি লঞ্চ করা আরও সুবিধাজনক হবে ওয়ানপ্লাসের কাছে। যদিও এই বিষয়ে এখনই ভবিষ্যৎবাণী করা খুবই কঠিন।