Online earning scam: অনলাইনে কাজ করে অর্থ উপার্জনের হাতছানি, ৩৭ লক্ষ টাকা খোয়ালেন আইটি কর্মী
যত দিন যাচ্ছে, ভারতসহ গোটা বিশ্বজুড়ে সাইবার জালিয়াতির ঘটনা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। হ্যাকারদের মস্তিষ্কপ্রসূত...যত দিন যাচ্ছে, ভারতসহ গোটা বিশ্বজুড়ে সাইবার জালিয়াতির ঘটনা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। হ্যাকারদের মস্তিষ্কপ্রসূত নিত্যনতুন ফন্দিফিকিরের সৌজন্যে প্রায়শই ইউজারদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হচ্ছে গড়ের মাঠ। যদিও বিশেষজ্ঞরা ব্যবহারকারীদেরকে সচেতন থাকার জন্য হাজারো অনুরোধ করছেন, কিন্তু তা সত্ত্বেও সকলকে কিছুতেই সতর্ক করা যাচ্ছে না। সিকিউরিটি এক্সপার্টরা ইউজারদেরকে হামেশাই নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তারা যেন কখনো কোনো অজানা লিঙ্কে ক্লিক না করেন কিংবা কোনো অজানা সোর্স থেকে পাওয়া মেসেজের রিপ্লাই না দেন; কিন্তু দুর্ঘটনাবশত মানুষের কিছু ভুলত্রুটি হয়েই যাচ্ছে, যার জেরে বড়োসড়ো লোকসানের মুখোমুখি হচ্ছেন তারা। সম্প্রতি এরকমই একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার খবর প্রকাশ্যে এসেছে, যেখানে সাইবার অপরাধীদের দেখানো প্রলোভনে লালায়িত হয়ে প্রায় ৩৭ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা খুইয়েছেন মুম্বাইয়ের ৪০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি। আসুন ঘটনাটি ঠিক কী ঘটেছে, সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
অনলাইনে সহজ কিছু কাজ করেই মোটা টাকা উপার্জনের প্রলোভন দেখানো হয়েছিল ওই ব্যক্তিকে
দ্য ফ্রি প্রেস জার্নাল (The Free Press Journal)-এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২২ নভেম্বর এক অজ্ঞাত পরিচয়ের মহিলার কাছ থেকে টেলিগ্রাম (Telegram)-এ একটি মেসেজ পান মুম্বাইয়ের মীরা রোডে বসবাসকারী ৪০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি। ওই মহিলাটি তাকে বলেন যে, তিনি তার (অর্থাৎ ওই মহিলার) কোম্পানির কিছু প্রোডাক্টের রেটিং দিয়ে অনলাইনে ভালো কমিশন অর্জন করতে পারবেন। ফলে ঘরে বসে সহজেই অর্থ উপার্জনের এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি ওই ব্যক্তি, তাই তিনি কাজটি করতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। আর ভিক্টিমের আগ্রহ আছে দেখে পরবর্তীকালে অন্য একজন মহিলা তার সাথে যোগাযোগ করেন এবং তাকে ওয়েবসাইটে কিছু কাজ কমপ্লিট করার নির্দেশ দেন। এর জন্য ওই মহিলা ব্যক্তিটিকে একটি ওয়েবসাইটের লিঙ্ক শেয়ার করে সেখানে তাকে লগইন করতে বলেন। দ্বিতীয় মহিলাটি ওই ভুক্তভোগীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, কাজটি ভালোভাবে সম্পন্ন করতে পারলেই তিনি মোটা টাকা উপার্জন করতে পারবেন, এবং সেই টাকা তৎক্ষণাৎ সরাসরি তার ওয়েবসাইটের ই-ওয়ালেটে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
প্রতিবার কাজের শেষে ওই ব্যক্তিকে প্রিমিয়াম চার্জ দিতে হতো
উল্লেখ্য যে, যদিও ওই ভদ্রলোক ছিলেন আইটি পেশাদার, তবে হালফিলের সাইবার জালিয়াতির মারপ্যাঁচ তিনি ঠিক বুঝে উঠতে পারেননি। তিনি ঘুণাক্ষরেও টের পাননি যে, ওয়েবসাইটের লিঙ্কটি আদতে ম্যালিশিয়াস। তাই সহজসরল বিশ্বাসে ঘরে বসেই অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের আশায় তিনি ওয়েবসাইটটিতে ক্লিক করে গত ২৮ নভেম্বর থেকে সাইটটিতে প্রদত্ত সমস্ত কাজগুলি করতে শুরু করেছিলেন। রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে যে, বিভিন্ন ট্রাভেল প্রপার্টিতে ফাইভ-স্টার রেটিং দেওয়াই ছিল তার মূল কাজ। তবে কাজ করার পাশাপাশি জালিয়াতরা তাকে একথাও জানিয়েছিল যে, প্রতিবার কোনো কাজ শেষ করার পরে তাকে কিছু প্রিমিয়াম চার্জ দিতে হবে, যেটি পরে তার উপার্জনের সাথে তাকে আবার ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
আপাতদৃষ্টিতে ই-ওয়ালেটে মোটা অঙ্কের ধনরাশি দেখা গেলেও তা তুলতে অসমর্থ হন ওই ব্যক্তি
শুরু থেকে সাইবার অপরাধীদের নির্দেশমতো যাবতীয় কাজ করছিলেন ওই ব্যক্তি। তিনি প্রতিবার ওয়েবসাইটে কোনো কাজ শেষ করার পরে একটি প্রিমিয়াম চার্জ দিচ্ছিলেন, এবং পরিশেষে দেখছিলেন যে, তার উপার্জিত অর্থ সাইটের ই-ওয়ালেটে এসে যাচ্ছে। ফলে একদম নিশ্চিন্ত মনে তিনি সমস্ত কাজ করে যাচ্ছিলেন। এইভাবে দিনকতক চলার পর ৩ ডিসেম্বর তিনি দেখেন যে, এই কাজের জন্য তিনি ইতিমধ্যেই ৩৭.৪০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ফেলেছেন, এবং ওয়েবসাইটে তার অর্জিত ধনরাশির পরিমাণ দেখাচ্ছে ৪১.৫০ লক্ষ টাকা।
খুব স্বাভাবিকভাবে ঘরে বসে সামান্য কিছু কাজ করে বিপুল টাকা অর্জনের খুশিতে রীতিমতো আনন্দে আত্মহারা হয়ে যান ওই ব্যক্তি। এরপর তিনি তার ই-ওয়ালেট থেকে সমস্ত টাকা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেজন্য তিনি সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটটিতে টাকা তোলার জন্য আবেদন জানাতে থাকেন। কিন্তু এরপরেই শুরু হয় আসল খেলা! একাধিকবার আবেদন করা সত্ত্বেও প্রতিবারই তার রিকোয়েস্টটি পেন্ডিং রয়েছে বলে শো করে ওয়েবসাইটটি। এইভাবে বারংবার চেষ্টা করার পর তিনি অবশেষে আবিষ্কার করেন যে, ওয়েবসাইটটি ইতিমধ্যেই ডিলিট করে দেওয়া হয়েছে, এবং টেলিগ্রামেও ওই গ্রুপটির আর কোনো অস্তিত্ব নেই।
বর্তমান ডিজিটাল যুগে নিরাপদে থাকতে হলে চোখকান খোলা রাখা খুবই জরুরি
স্বভাবতই এই ঘটনায় রীতিমতো মর্মাহত হয়ে গিয়ে ওই ব্যক্তি পুলিশ স্টেশনে তার অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর আইপিসির ধারা ৪২০ (প্রতারণা এবং অসৎভাবে সম্পত্তি হস্তান্তরে প্ররোচিত করা) এবং তথ্য প্রযুক্তি আইনের ধারা ৬৬ডি (কম্পিউটার রিসোর্স ব্যবহার করে ছদ্মবেশে প্রতারণা)-এর অধীনে একটি মামলা দায়ের করে পুলিশ। খুব স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যাচ্ছে যে, চলতি সময়ে হ্যাকারদের প্রতারণার হাত থেকে রেহাই পেতে হলে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করাই হল এক এবং একমাত্র উপায়। বর্তমানে জালিয়াতদেরকে রোখার যেহেতু কোনো সহজ উপায় নেই, তাই নিরাপদে এবং সুরক্ষিত থাকতে হলে ইউজারদেরকেই সর্বদা চোখকান খোলা রেখে চলতে হবে। তাই সতর্ক থাকুন, সুরক্ষিত থাকুন।