আমাদের ইন্টারনেট মাধ্যমে সময় কাটানোর সাথে যেন সমানুপাতিক হারে বাড়ছে অনলাইন জালিয়াতি। প্রায়দিনই এইরকম কোনো না কোনো অযাচিত ঘটনার কথা সামনে আসছে, যেখানে সাধারণ মানুষ আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে এবার Instagram Reel-এর কারণে ৫০ হাজার টাকারও বেশি খুইয়ে বসলেন মুম্বই নিবাসী মহিলা। মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, রুতালি কোলগে (Rutali Kolge) নামের ওই মহিলা একটি রেস্টুরেন্টের মালিক, যিনি কোনো কারণে ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন; আর এই চক্করে তিনি Instagram-এর একটি Reel ভিডিও দেখে তিনি লোনের আবেদন করেন। ব্যস, এতেই ঘটে বিপত্তি! ঋণের আবেদন করতেই আর্থিক সাহায্য পাওয়ার বদলে রুতালি ৬১,০০০ টাকা খুইয়ে ফেলেন স্ক্যামে।
সোশ্যাল মিডিয়া নাকি অনলাইন জালিয়াতির খোলা মাঠ?
জানা গিয়েছে যে, নিজের রেস্তরাঁর ব্যবসায় উন্নতির জন্য রুতালি বড় কিছু করতে চাইছিলেন; এর জন্য তাঁর প্রয়োজন ছিল লোন জাতীয় আর্থিক সাহায্য। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে লোন নেওয়ার কথা ভাবলেও ব্যাঙ্কে সুদের হার অনেকটা বেশি হওয়ায়, তাঁর সেই ইচ্ছা পূরণ হয়নি। ফলে ওই মহিলা অন্যান্য উপায় খুঁজতে বাধ্য হন। এরপর গত ১৭ই ফেব্রুয়ারি তিনি দিন ইনস্টাগ্রাম ঘাঁটতে গিয়ে একটি রিল ভিডিও দেখতে পান, যেখানে সহজে লোন পাওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে রুতালি ওই বিজ্ঞাপন ভিডিওতে প্রদত্ত ‘অ্যাপ্লাই’ (Apply) বাটনে ক্লিক করেন যারপর তাঁর কাছে একটি ফর্ম পৌঁছে যায়। লোন পেতে তিনি সেটি পূরণও করেন। এতেই জালিয়াতির পথ প্রশস্ত হয়ে যায়।
আসলে ওই রিল ভিডিওর সাথে সংযুক্ত হয়ে ফর্ম ফিলআপ করার ঠিক পরের দিন, পঙ্কজ সিংহ ভাদুরিয়া নামে এক ব্যক্তি রুতালিকে ফোন করেন। পঙ্কজ নিজেকে লোনদাতা সংস্থার এক জন প্রতিনিধি হিসাবে পরিচয় দেন এবং শর্তাবলী, সুদের হার, সময়কাল ইত্যাদি প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে কথা বলেন। এমনকি নিজের পরিচয়ের সত্যতা দাবি করতে কোম্পানির লোগো সম্বলিত একটি আইডেন্টিটি কার্ড পাঠায় ওই ব্যক্তি। শেষে মাছ বঁড়শিতে গাঁথা হতেই কম সুদের হারের কথা বলে পঙ্কজ, রুতালিকে ১০ লক্ষ টাকা ঋণ নেওয়ার প্রস্তাব দেন।
এরপর রুতালি লোন নিতে রাজি হওয়ায় তাঁর কাছ থেকে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে প্যান কার্ড, আধার কার্ড এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় নথি চায় জালিয়াত। শুধু তাই নয়, ‘প্রসেসিং ফি’ দেওয়ার নামে তাঁকে একটি কিউআর (QR) কোড পাঠিয়ে স্ক্যান করার নির্দেশ দেওয়া হয়। আর সেই কোড স্ক্যান করতেই রুতালির অ্যাকাউন্ট থেকে গায়েব হয়ে যায় প্রায় ৬১,০০০ টাকা। এরপর আবার চার্জ হিসেবে টাকা দেওয়ার কথা বলা হলে রুতালি বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেন। কিন্তু ততক্ষণে অনেকটা দেরি হয়ে গেছে।
গোটা ঘটনার জেরে রুতালির পরিবারের সদস্যরা ওই কোম্পানি প্রদত্ত অফিস লোকেশনে গিয়ে পৌঁছান;কিন্তু সেখানে কিছুই (না অফিস, না লোকজন) পাওয়া যায়নি। শেষে পুলিশের কাছে তিনি অভিযোগ দায়ের করেন। সবটা পড়ে নিশ্চয় বুঝতেই পারছেন, কতটা হয়রানির ব্যাপার হতে পারে সোশ্যাল মিডিয়ার সামান্য একটি বিজ্ঞাপন? তাই আমরা আবারও বলব সতর্ক থাকুন এবং নেটমাধ্যমে সময় কাটানোর সময় চোখ কান খোলা রাখুন।