সেভ রাখা যাবে না গ্রাহকদের ব্যাংকের তথ্য, ই-কমার্স ও ফুড ডেলিভারি সহ সমস্ত কোম্পানিকে নির্দেশ RBI-এর

বর্তমান সময়ে অনলাইন ট্রানজ্যাকশনের জন্য ডেবিট কার্ড বা ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়েছে। তবে এর পাশাপাশি এই কার্ডগুলি হাতিয়ে জালিয়াতরা সাধারণ মানুষের টাকাও আত্মসাৎ করছে…

বর্তমান সময়ে অনলাইন ট্রানজ্যাকশনের জন্য ডেবিট কার্ড বা ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়েছে। তবে এর পাশাপাশি এই কার্ডগুলি হাতিয়ে জালিয়াতরা সাধারণ মানুষের টাকাও আত্মসাৎ করছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। আর তাই সাইবার জালিয়াতি রুখতে এই জাতীয় ব্যাংক কার্ডের জন্য টোকেনাইজেশনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে রিজার্ভ ব্যাংক বা RBI (আরবিআই)। যদিও এই টোকেনাইজেশনের ফলে সাধারণ মানুষসহ বড় ই-কমার্স সংস্থা, অনলাইন ফুড সাপ্লাই কোম্পানি এবং লোনদাতাদের ওপর বড়সড় প্রভাব পড়বে বলে শিল্প সূত্র দাবি করেছে। আসুন জেনে নিই এই টোকেনাইজেশন সিস্টেম আসলে কী এবং রিজার্ভ ব্যাংক ঠিক কী ভাবছে।

RBI-এর নতুন টোকেনাইজেশন সিস্টেম

এখন অনলাইন শপিং করতে গিয়ে কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট করার সময় অনেকেই ১৬ সংখ্যার কার্ড নম্বর, কার্ডের এক্সপায়ারি ডেট এবং সিভিভি বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সেভ করে রাখেন। এতে সেই প্ল্যাটফর্মে পুনরায় কেনাকাটা করলে সেভ রাখা তথ্যের সাহায্যে খুব সহজে এবং চটজলদি টাকা মেটানো যায়, বারবার তথ্য আপডেট করার প্রয়োজন পড়ে না। সেক্ষেত্রে নতুন টোকেনাইজেশন এই সুবিধার ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ করবে। আদতে টোকেনাইজেশন হল এমন একটি ডেটা সুরক্ষার প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে কার্ডের বিশদ অ্যালগরিদম দ্বারা উৎপন্ন অনন্য কোড বা টোকেন দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়, ফলে অনলাইন কেনাকাটায় কার্ডের বিশদ সেভ থাকার কোনো প্রশ্নই থাকে না।

কেন আসছে এই টোকেনাইজেশন সিস্টেম

আসলে আরবিআই গত বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের মার্চ মাসে একটি নির্দেশিকা জারি করে বলেছিল যে, এবার থেকে ডেটা সুরক্ষা বাড়ানোর জন্য ব্যবসায়ী সংস্থাগুলিকে তাদের ওয়েবসাইটে ব্যাংক কার্ডের তথ্য সংরক্ষণ করার অনুমতি দেওয়া হবে না। পরে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে নতুন নির্দেশিকা জারি করে কোম্পানিগুলিকে বছরের শেষ পর্যন্ত নিয়মগুলি মেনে চলতে এবং তাদের টোকেনাইজ করার বিকল্প প্রদান করে।

এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকটি ভারতের সমস্ত কোম্পানিকে ১লা জানুয়ারী, ২০২২ থেকে তাদের সিস্টেমে সংরক্ষিত ক্রেডিট এবং ডেবিট কার্ড ডেটা রিমুভ করার নির্দেশ দিয়েছে। ওইদিন থেকেই অনলাইনে কার্ড ডেটা সেভ করে কেনাকাটা করা যাবে না। যদিও এই নতুন পদ্ধতিতে গ্রাহককে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা মনে রাখতে হবে না বলে দাবি করা হয়েছে। ব্যাংকের তরফে বলা হয়েছে, কেনাকাটার সময়ে টাকা মেটানোর জন্য কার্ডের নম্বর, সিভিভি বা এক্সপায়ারি ডেটের তথ্যের বদলে একটি টোকেন নম্বর এন্টার করতে হবে। টোকেনের জন্য, গ্রাহকরা তাদের কার্ড প্রদানকারী সংস্থা বা ব্যাঙ্কের কাছে অনলাইনে অনুরোধ পাঠাতে পারবেন। আর এই সমস্ত কিছুতে তথ্য চুরির ঝুঁকি বেশ খানিকটা এড়ানো যাবে।

এদিকে বণিক সংস্থা এবং ব্যাঙ্কাররা বলেছেন যে, বড় পরিবর্তনগুলি মেনে চলার জন্য তাদের পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়নি। তাছাড়া গ্রাহকরা কোনো কোনো বিবেচনামূলক কেনাকাটার ক্ষেত্রে বাদ পড়তে পারে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন নয়া দিল্লি-ভিত্তিক থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক অ্যালায়েন্সের প্রধান। একইসাথে ছোটো বড় সংস্থাগুলির ওপর এই পরিবর্তনের ব্যাপক প্রভাব পড়ার, এবং কার্ডে লেনদেন কমার আশঙ্কাও করা হচ্ছে। আবার পুরো ইকোসিস্টেম সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত হতে প্রায় ছয় থেকে নয় মাস সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন পেমেন্ট ফার্ম PayU-এর চিফ প্রোডাক্ট অফিসার মানস মিশ্র।