গ্লোবাল স্মার্টফোন মার্কেটের রাশ Samsung, Apple-এর হাতে, মুখ থুবড়ে পড়লো Xiaomi, Oppo, Vivo-রা

চলতি বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে বিশ্বব্যাপী শিপমেন্টের ক্ষেত্রে ১১% ইয়ার-অন-ইয়ার (YoY) পতন সত্ত্বেও স্মার্টফোন মার্কেটের...
SUPARNA 21 April 2022 8:49 PM IST

চলতি বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে বিশ্বব্যাপী শিপমেন্টের ক্ষেত্রে ১১% ইয়ার-অন-ইয়ার (YoY) পতন সত্ত্বেও স্মার্টফোন মার্কেটের প্রথম স্থান অধিকারীর সিংহাসন দক্ষিণ কোরিয়া ভিত্তিক টেক সংস্থা Samsung এরই দখলে, এমনটাই দাবি করা হয়েছে সাম্প্রতিক একটি রিপোর্টে। মনে করা হচ্ছে, গত ফেব্রুয়ারিতে Galaxy S22 সিরিজটি লঞ্চ করার মাধ্যমে সংস্থাটি তাদের মার্কেট শেয়ার ধরে রাখতে সফল হয়েছে। কোরিয়ান সংস্থাটির পরেই, আমেরিকার টেক জায়ান্ট Apple গ্লোবাল স্মার্টফোন মার্কেটে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছে। প্রসঙ্গত, Samsung এবং Apple উভয় সংস্থাই যেখানে ২০২২ সালের প্রথম ত্রৈমাসিক বা কোয়ার্টারে তাদের মার্কেট শেয়ার প্রসারিত করতে সফল হয়েছে, সেখানেই তিন চীনা স্মার্টফোন ব্র্যান্ড - Xiaomi, Oppo এবং Vivo, তাদের ইয়ার-অন-ইয়ার শেয়ারে পতন দেখেছে।

২০২২ সালের প্রথম কোয়ার্টারে সর্বোচ্চ মার্কেট শেয়ার হস্তগত করলো Samsung

মার্কেট রিসার্চ ফার্ম ক্যানালিস (Canalys) তাদের রিপোর্টে বলেছে যে, কোভিড-১৯ অতিমারী এবং প্রথম ত্রৈমাসিকে মন্থর চাহিদার কারণে বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোনের চালান YoY (ইয়ার-অন-ইয়ার) পরিসংখ্যানের নিরিখে ১১% হ্রাস পেয়েছে। তবে এই প্রতিকূল অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্যেও স্যামসাং কিন্তু তাদের মার্কেট ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। উল্লেখ্য, সংস্থাটি ২০২১ সালের প্রথম কোয়ার্টারে যেখানে ২২% মার্কেট শেয়ার লাভ করেছিল, সেখানেই ২০২২ সালের প্রথম কোয়ার্টারে স্যামসাংয়ের মার্কেট শেয়ার ২৪% -এ উন্নীত হয়েছে বলে জানিয়েছে ক্যানালিস। এমনকি, ২০২১ সালের চতুর্থ কোয়ার্টারের থেকে সংস্থাটির শেয়ার ৫% বেড়েছে। এক্ষেত্রে, তৎকালীন সময়ে সংস্থার মার্কেট শেয়ার ছিল ১৯%। মূলত, চলতি বছরের প্রথমার্ধে, Galaxy S22, Galaxy S22+, এবং Galaxy S22 Ultra মডেল সহ Galaxy S22 সিরিজের আবির্ভাবই স্যামসাংয়ের YoY মার্কেট শেয়ার বাড়াতে সাহায্য করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

বিবিধ প্রতিবন্ধকতার কারণে স্মার্টফোন শিপমেন্ট বা চালানের সামগ্রিক পতন সত্ত্বেও, স্যামসাংয়ের ন্যায় অ্যাপলও বর্ধিত মার্কেট শেয়ার দেখেছে। ক্যানালিসের মতে, অ্যাপল গত বছরের প্রথম কোয়ার্টারের তুলনায় ২০২২ সালের প্রথম কোয়ার্টারে তাদের শেয়ার ৩% বাড়িয়েছে। অর্থাৎ, ১৫% থেকে ১৮% YoY-গ্রোথ রেকর্ড করেছে টেক জায়ান্টটি। সংস্থাটির লেটেস্ট আইফোন সিরিজ iPhone 13 এর ক্রমবর্ধমান চাহিদাই এরূপ শেয়ার বৃদ্ধির কারণ বলে মনে করছে ফার্মটি।

"আইফোন ১৩ সিরিজের প্রতি ভোক্তাদের চাহিদা ক্রমবর্ধিত হতে থাকলেও, মার্চ মাসে লঞ্চ হওয়া নতুন iPhone SE (2022) অ্যাপলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মিড-রেঞ্জ ভলিউম ড্রাইভার হয়ে উঠছে," বলে মত প্রকাশ করেছেন ক্যানালিস বিশ্লেষক সানিয়াম চৌরাসিয়া৷ তিনি আরো বলেছেন যে, "পূর্বসূরির সমান প্রাইজ পয়েন্টের সাথে, এই মডেলটি আপগ্রেডড চিপসেট এবং উন্নত ব্যাটারি পারফরম্যান্স প্রদান করে, সাথে ৫জি কানেকশনও মিলবে।" ফলে, চাহিদার দাড়িপাল্লায় পূর্বসূরির তুলনায় উত্তরসূরি অনেকটাই এগিয়ে।

স্যামসাং এবং অ্যাপল যেখানে বর্ধিত মার্কেট শেয়ারের সাথে 'টপ-টু' স্থানে বসে আছে, সেখানেই সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্রপট দেখা গেছে - শাওমি (Xiaomi), ওপ্পো (Oppo) এবং ভিভো (Vivo) ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রে। অর্থাৎ, 'টপ গ্লোবাল স্মার্টফোন ভেন্ডার' তালিকার 'টপ-ফাইভে' থাকা এই তিনটি চীনা স্মার্টফোন নির্মাতারা চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে তাদের মার্কেট শেয়ার বাড়াতে সক্ষম হয়নি। ক্যানালিসের রিপোর্ট অনুসারে, গত বছরের তুলনায় (১৪%) চলতি বছরের প্রথম কোয়ার্টারে শাওমির শেয়ার ১% হ্রাস পেয়েছে। যার দরুন, বর্তমানে সংস্থাটির মার্কেট শেয়ার ১৩%। একইভাবে, ওপ্পো ১০% শেয়ারের সাথে চতুর্থ স্থানে রয়েছে। যেখানে কিনা গত বছরের একই প্রান্তিকে সংস্থাটির মার্কেট শেয়ার ছিল ১১%। এই পরিসংখ্যানের মধ্যে ওয়ানপ্লাস (OnePlus) স্মার্টফোনের চালানও অন্তর্ভুক্ত। তদুপরি, ক্যানালিসের শেয়ার করা তথ্য অনুসারে, চীনের বিবিকে ইলেকট্রনিক্স (BBK Electronics) অধীনস্থ ভিভো ব্র্যান্ডের শেয়ার ২% হ্রাস পেয়েছে। সেক্ষেত্রে, ২০২১ সালের প্রথম কোয়ার্টারে ১০% থেকে শেষ বা চতুর্থ কোয়ার্টারে ৮% -তে নেমে এসেছে ভিভোর YoY-গ্রোথ।

"দেশীয় বাজারে মন্দার কারণে বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে চীনা সংস্থাগুলি" এমনটাই মনে করছেন চৌরাসিয়া। চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্ব, চীনে পুনরায় লকডাউন ঘোষণা এবং মুদ্রাস্ফীতির আশঙ্কা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা স্মার্টফোন নির্মাতাদের জন্য বড় বাধা হয়ে উঠেছে। উপরন্তু, গ্লোবাল মার্কেটে ভোক্তাদের চাহিদাতেও কোনো উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি দেখা যায়নি। ফলে, মার্কেট শেয়ারে ঘাটতি দেখা দেওয়া খুবই স্বাভাবিক। যাইহোক, এক্ষেত্রে, "বিক্রেতাদের তাদের দীর্ঘমেয়াদী মার্কেট স্ট্র্যাটেজির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে উদীয়মান সুযোগ এবং ঝুঁকির মোকাবিলা করতে নিজেদেরকে প্রস্তুত রাখতে হবে," বলে পরামর্শ দিয়েছেন ক্যানালিস মোবিলিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট (VP) নিকোল পেং। তবে, "সুসংবাদ হল যে সংস্থাগুলি প্রত্যাশার চেয়ে তাড়াতাড়ি কম্পোনেন্ট ঘাটতির সমস্যা কাটিয়ে উঠছে, যা এতদিনের উপরি খরচের চাপ উপশম করতে সহায়তা করবে," বলে জানিয়েছেন নিকোল।

ফলে, পূর্ববতী লাভ-লোকসানকে সামনে রেখে, গ্রাহকদের মধ্যে চাহিদা বাড়াতে এবং আগামী মাসগুলিতে নিজেদের জন্য মার্কেট অনুকূল করতে, স্যামসাং, গুগল, শাওমির মতো নামিদামি সংস্থাগুলি এখন নতুন প্রিমিয়াম এবং মিড-রেঞ্জ মডেলের উপর কাজ করার প্রতি মনোনিবেশ করেছে। যেগুলি চলতি কোয়ার্টারের প্রথম দিকে আত্মপ্রকাশ করতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে৷

Show Full Article
Next Story
Share it