সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সাররা এই ভুল করলে ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা, সরকারের নতুন নিয়ম
বর্তমানের ইন্টারনেট-ভিত্তিক যুগে, সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার (Social media influencers) নামটি ব্যাপক ভাবে জনপ্রিয়...বর্তমানের ইন্টারনেট-ভিত্তিক যুগে, সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার (Social media influencers) নামটি ব্যাপক ভাবে জনপ্রিয় হয়েছে, যাদের কে অনেক মানুষ অনুসরণ করে। শহর ছাড়িয়ে গ্রামাঞ্চলে ও এখন ইউটিউবার বা ইনস্টাগ্রাম ইনফ্লুয়েন্সার খুঁজে পাওয়া যায়। এইসকল ইনফ্লুয়েন্সাররা তাদের পেজ বা চ্যানেল মনিটাইজ করে অর্থ উপার্জন করে। পাশাপাশি তারা 'পেইড প্রমোশন' (paid promotions) করেও আয় করে। এক্ষেত্রে পেইড প্রমোশনের ক্ষেত্রে, বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ৫,০০০ বা তার অধিক ফলোয়ার-বেস আছে এমন ব্যক্তিদের সাথে বড় বড় কোম্পানি যোগাযোগ করে এবং ফলোয়ার বা অনুগামীদের মধ্যে ব্র্যান্ডের নানা প্রোডাক্টের প্রচার করানোর বিনিময়ে অর্থ দেয়। তবে এখন থেকে সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের পেইড প্রমোশন করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। আসলে ভারত সরকার একটি নতুন নিয়ম এনেছে, যেখানে কোনো ইনফ্লুয়েন্সার যদি অনুগামীদের কাছে পেইড প্রমোশনের কথা লুকিয়ে যান, তবে তাকে ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা দিতে হবে।
পেইড প্রমোশন উল্লেখ না করে প্রচারমূলক পোস্ট শেয়ার করলে জরিমানা দিতে হবে সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের
কনজিউমার অ্যাফেয়ার্স মিনিস্ট্রি আজ অর্থাৎ ২৪শে ডিসেম্বর থেকে সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের জন্য নতুন নির্দেশিকা বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ এই নতুন গাইডলাইনের অধীনে, প্রত্যেক ইনফ্লুয়েন্সারকে নিজেদের ফলোয়ারদের কাছে ঘোষণা করতে হবে যে তাদের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলগুলিতে পোস্ট করা ভিডিও বা ছবিতে প্রদর্শিত প্রোডাক্টের প্রচারকার্যের জন্য তারা অর্থ পেয়েছেন। আর যদি এই নিয়মের অবমাননা করা হয়, তবে বিনা ঘোষণায় কোনো পণ্যের পেইড প্রমোশন করার জন্য সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে 'কেন্দ্রীয় ভোক্তা সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ' বা সংক্ষেপে CCPA বিভাগে অভিযোগ দায়ের করা যাবে এবং সর্বোচ্চ ৫০ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হতে পারে। তাই আজ থেকেই প্রত্যেক সোশ্যাল মিডিয়া প্রভাবশালীরা এই নতুন নির্দেশিকা বিষয়ে সতর্ক হয়ে যান এবং ফলোয়ারদের মধ্যে কোনো দ্রব্য প্রচার করার আগে অবশ্যই 'পেইড প্রমোশন' কথাটির উল্লেখ করুন।
আকস্মিক এরূপ গাইডলাইন নিয়ে আসার কারণ হিসাবে বলা হয়েছে - শুধুমাত্র রোজগারের লোভে সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারা, পোস্ট বা ভিডিওর মাধ্যমে প্রচার করা প্রোডাক্টগুলিকে অনেক সময় নিজেরা ব্যবহার না করেই ভালো রিভিউ দিয়ে দেন এবং অনুগামীদের তা কেনার পরামর্শ দেন। ফলস্বরূপ, ইনফ্লুয়েন্সারদের কথায় পরোক্ষভাবে প্রভাবিত হয়ে বহু ফলোয়ার সেই বস্তুটি ব্যবহার বা সেবন করে। এমত পরিস্থিতিতে, একটি প্রোডাক্টের গুনাগুন না জেনেই তা ব্যবহার করার কারণে যেকোন প্রকারের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতেই পারে। তাই, ইনফ্লুয়েন্সারদের এই ধরনের মিথ্যা দাবির থেকে ভোক্তাদের রক্ষা করার জন্যই মূলত উক্ত নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে।
এবিষয়ে এক কর্মকর্তার বিবৃতি অনুসারে - "যেকোনো সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারকে (Social media influencers) কোনও নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের পণ্যকে ফলোয়ারদের মধ্যে প্রচার করার আগে, সেটি যে পেইড প্রমোশন তা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে হবে।"
এতদিন যাবৎ সোশ্যাল মিডিয়ার ইনফ্লুয়েন্সারদের দ্বারা করা এই ধরনের প্রমোশন বন্ধ করার জন্য কোনো নির্দেশিকা ছিল না সরকারের। তবে সরকারের এই নয়া গাইডলাইন প্রোডাক্টের ভুল রিভিউ দেওয়ার প্রবণতাকে রোধ করার ক্ষেত্রে বিশেষ কাজে আসবে বলেই মনে হচ্ছে। নতুন গাইডলাইনটি কেবলমাত্র সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং সেলিব্রিটি, ফিন্যান্সিয়াল ইনফ্লুয়েন্সারদের জন্যও সমানভাবে প্রযোজ্য হবে।
উল্লেখ্য, যেসকল সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সাররা বিজ্ঞাপন দাতাদের থেকে টেস্টিংয়ের জন্য বিনামূল্যে প্রোডাক্ট পান, তাদের এর জন্য কর দিতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো ব্যক্তি প্রচারকার্যের দরুন - গাড়ি, মোবাইল, প্রসাধনী বা পোশাকের মতো পণ্য কোম্পানির থেকে গ্রহণ করে এবং সেগুলিকে নিজের কাছে রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তবে তারা 'ট্যাক্স ডিডাক্টেড অ্যাট সোর্স' বা TDS দিতে দায়বদ্ধ। তবে যদি কোনো ইনফ্লুয়েন্সার প্রাপ্ত প্রোডাক্টগুলি ব্যবহার করার পর কোম্পানিকে ফেরত পাঠিয়ে দেয় তবে তাদের কোনও কর দিতে হবে না।