পৃথিবীর বুকে আজ আছড়ে পড়তে পারে সৌর ঝড়; টিভি, মোবাইল, GPS ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা

ঝড় বললেই এখন প্রথমেই আমাদের মনে আমফান বা ইয়াসের নাম ভেসে ওঠে, কারণ গত দু’বছরে এই দুটি ঝড়ের তান্ডবলীলা আপামর জনগণের স্মৃতিতে ভালোরকম জায়গা করে…

ঝড় বললেই এখন প্রথমেই আমাদের মনে আমফান বা ইয়াসের নাম ভেসে ওঠে, কারণ গত দু’বছরে এই দুটি ঝড়ের তান্ডবলীলা আপামর জনগণের স্মৃতিতে ভালোরকম জায়গা করে নিয়েছে। তবে এবার কোনও আমফান বা ইয়াস নয়, পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়তে পারে এক ভয়ঙ্কর শক্তিশালী মহাজাগতিক ঝড়। নাসার (NASA) বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, আজ যে কোনও মুহূর্তে পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়তে পারে সৌর ঝড় এবং এর পরিণতি বেশ গুরুতর হতে পারে। এটি প্রতি ঘণ্টায় ১৬ লক্ষ কিমি বেগে ধেয়ে আসছে, ফলে বিশ্বজুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বিদ্যুৎ পরিষেবা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিকাঠামো। এর ফলে আমরা কমিউনিকেশন ব্ল্যাকআউটের মুখোমুখি হতে পারি।

পৃথিবীতে আছড়ে পড়তে পারে সৌর ঝড়

স্পেস ওয়েদার ডট কমের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সূর্যের ভিতরে একটি ছিদ্র বা গর্ত তৈরি হয়েছে। সেই ছিদ্রপথেই সৌর শিখা ঝড়ের বেগে বেরিয়ে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে। সূর্যের নিরক্ষীয় অঞ্চলের একটি গর্ত থেকে নির্গত এই সৌর শিখার কথা প্রথম জানা যায় ৩ জুলাই। এটি সর্বোচ্চ ৫০০ কিমি প্রতি ঘণ্টা বেগে ধাবিত হতে পারে। যখন চার্জড সৌর কণার এই ঝড় পৃথিবীতে পৌঁছায়, তখন এটি আমাদের গ্রহের বায়ুমণ্ডল এবং চৌম্বক ক্ষেত্রের ওপর প্রভাব ফেলে। একেবারে বিধ্বংসী জিওম্যাগনেটিক (ভূ-চৌম্বকীয়) ঝড় না হলেও মাঝারি তীব্রতার ঝড় উঁচু অক্ষাংশের এলাকায় মেরুচ্ছটা তৈরি করতে পারে। ফলে উচ্চতর অক্ষাংশে অবস্থিত শহরগুলি আজ আকাশে উজ্জ্বল অরোরা বোরিয়ালিস দেখতে পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সৌর শিখার প্রভাবে বায়ুমণ্ডলের ওপরের দিকে থাকা কৃত্রিম উপগ্রহগুলির প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই পৃথিবীতে এই ঝড় এসে পড়লে স্যাটেলাইট যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। এর ফলে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে GPS নেভিগেশন, মোবাইল ফোন সিগন্যাল এবং স্যাটেলাইট টিভি। রেডিও সিগন্যাল বিচ্ছিন্ন হওয়ার পাশাপাশি বিদ্যুতের গ্রিডগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

বিজ্ঞানীদের মতে, যদিও হালকা সৌর ঝড় নিয়মিত ঘটনা, কিন্তু সবসময় এটিকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়, বরং আমাদের সবার সতর্ক থাকা উচিত। কারণ অতীতে ১৯৮৯ সালে সৌর ঝড়ের কারণে পৃথিবীর একটি অংশ চরম বিপদের সম্মুখীন হয়েছিল। কানাডায় সেই সময়ে সৌর ঝড়ের কারণে প্রায় ৯ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। NASA সৌর ঝড়কে তীব্রতার ভিত্তিতে পাঁচটি বিভাগে শ্রেণিবদ্ধ করেছে – A, B, C, M এবং X, এবং আজকের সৌর ঝড়টিকে X1 শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে। সাধারণত বড়ো বড়ো ঝড়গুলিকে X শ্রেণিতে ফেলা হয়। ঝড়ের তীব্রতা যত বেশি হয়, X-এর ডান পাশের সংখ্যাও তত বাড়তে থাকে।

তবে সবশেষে স্বস্তির খবর এটাই যে, বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, GPS সিগন্যালিং ব্যবস্থা, মোবাইল ফোন ও স্যাটেলাইট টিভি সিগন্যাল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আঁধার নেমে আসলেও আজকের আসন্ন সৌর ঝড়ে বড়ো কিছু ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা তেমন নেই, কারণ পৃথিবীর চৌম্বকীয় ক্ষেত্র পৃথিবীকে রক্ষা করবে। এখন আসন্ন সৌর ঝড়ের পরিণতি ঠিক কতটা গুরুতর হবে তা সময়ই বলতে পারবে।

হোয়াটসঅ্যাপে খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন

WhatsApp Follow Button

লেটেস্ট খবর পড়তে হোয়াটসঅ্যাপে

WhatsApp Logo যুক্ত হোন