Starlink: শীঘ্রই ভারতে চালু হতে পারে স্টারলিংকের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা, আগামী মাসেই বৈঠক
চলতি সপ্তাহে চাঁদের দক্ষিণ-মেরুতে সাফল্যের সাথে পা রেখেছে আমাদের গর্বের 'চন্দ্রযান-৩' -এর ল্যান্ডার মেশিন 'বিক্রম'।...চলতি সপ্তাহে চাঁদের দক্ষিণ-মেরুতে সাফল্যের সাথে পা রেখেছে আমাদের গর্বের 'চন্দ্রযান-৩' -এর ল্যান্ডার মেশিন 'বিক্রম'। যারপর থেকেই 'ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন' ওরফে ISRO পরিচালিত এই সফল চন্দ্র-অভিযানের কারণে কোন কোন দিক থেকে ভারত লাভবান হতে পারে সেই নিয়ে চর্চা তুঙ্গে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ISRO -এর সাথে জড়িত এক কর্মকর্তা বলেছেন, এরফলে এদেশের স্যাটেলাইট ইন্ডাস্ট্রি এক নতুন স্তরে পৌঁছাবে। বর্তমানের পরিস্থিতিতে এই সম্ভাবনাকে একদমই উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
মনে করা হচ্ছে আমেরিকা ভিত্তিক বিলিনিয়ার ব্যবসায়ী ইলন মাস্ক (Elon Musk) হয়তো খুব শীঘ্রই তার মালিকাধীন 'Starlink' কোম্পানির মাধ্যমে ভারতে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা অফার করতে চলেছে৷ দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের একটি সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুসারে, 'ডিপার্টমেন্ট অফ টেলিকমিউনিকেশন' ওরফে DoT আধিকারিকরা আগামী ২০ই সেপ্টেম্বর Starlink -কে এদেশে ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করার জন্য লাইসেন্স দেওয়া উচিত হবে কিনা সেই সিদ্ধান্ত নিতে একটি বৈঠক করতে পারে। জানিয়ে রাখি, এর আগেও ইলন মাস্কের কোম্পানি এদেশে ব্যবসা শুরু করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের নিষেধাজ্ঞা বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। Starlink -এর স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ৩২টি দেশে উপলব্ধ। ভারত এই তালিকায় জায়গা করে নিতে পারবে কিনা তা DoT -এর আসন্ন বৈঠকই নিশ্চিত করবে।
ভারতে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করতে বিশেষ আগ্রহী Starlink
স্টারলিংক গত বছর DoT -এর কাছে 'গ্লোবাল মোবাইল পার্সোনাল কমিউনিকেশন বাই স্যাটেলাইট' (GMPCS) লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে। যদিও তার আগে অর্থাৎ ২০২১ সালে স্টারলিংক একটি বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে। মূলত লাইসেন্স ছাড়াই এদেশে 'স্টারলিঙ্ক ইন্টারনেট সার্ভিস' -এর প্রি-সাবস্ক্রিপশন প্রক্রিয়া ঘোষণা করায় কেন্দ্রীয় সরকারের রোষানলে পরে ইলন মাস্কের কোম্পানিটি। যার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার, স্টারলিংক -কে নিজেদের পরিষেবার জন্য প্রি-বুকিং চ্যানেলগুলি বন্ধ করতে বাধ্য করে এবং "স্যাটেলাইট-ভিত্তিক পরিষেবা অফার করার আগে লাইসেন্সপ্রাপ্ত" হওয়ার পরামর্শ দেয়। এই ঘটনার দু'বছর কেটে গেলেও স্টারলিংক DoT -এর কাছ থেকে লাইসেন্স পেতে সক্ষম হয়নি। তাই কোম্পানিটির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট খুললে এখনো "রেগুলারিটি অ্যাপ্রুভাল" (regulatory approval) লেখাটি দেখা যাচ্ছে। DoT -এর আসন্ন বৈঠকে যদি স্টারলিংক এদেশে ব্যবসা করার অনুমতি পায়, তাহলেই শুধুমাত্র এই লেখা পরিবর্তিত হতে পারে।
এই বিষয়ে DoT-এর এক আধিকারিক বলেছেন, "আমরা কোনো কোম্পানিকে লাইসেন্স ছাড়া এদেশে পরিষেবা প্রদান করতে উৎসাহিত করতে চাইনা। এর আগে স্কাইপে (Skype) -এর ক্ষেত্রে এমনটা ঘটেছে এবং পরবর্তী সময়ে কোম্পানিটিকে লাইসেন্সিং ব্যবস্থায় আনতে আমরা সক্ষম হইনি। তাই এখন এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে চাই না। আমরা নিয়মের বাইরে বেরোবো না।"
আধিকারিক আরও জানিয়েছেন যে, অন্যান্য ইন্টারনেট-ভিত্তিক পরিষেবা যেমন 'ওভার দ্য টপ' (OTT) প্ল্যাটফর্মগুলিকেও ভারতীয়দের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে লাইসেন্সিং ব্যবস্থার আওতায় আনার কথা ভেবে দেখা হচ্ছে। কেননা OTT অ্যাপ যদি লাইসেন্সিং ব্যবস্থার অধীনে থাকে, তাহলে কোম্পানিগুলি সরকারী নির্দেশনা মেনে চলতে বাধ্য হবে। ফলে নুহ বা মণিপুরের মতো কোনো ঘটনা ঘটলে, সম্পূর্ণ এলাকার ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পরিবর্তে এই অ্যাপগুলিকে তাদের পরিষেবা বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া সম্ভব হবে।
প্রসঙ্গত, স্টারলিংকের পাশাপাশি দেশীয় টেলিকম কোম্পানি এয়ারটেল (Airtel) এবং জিও (Jio) -ও ভারতে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করার জন্য GMPCS লাইসেন্সের আবেদন করেছে। যদি সংস্থা দুটি DoT থেকে ছাড়পত্র পায়, তবে দেশবাসী এয়ারটেল-পরিচালিত 'ওয়ানওয়েব' (OneWeb) এবং Jio -এর নিজস্ব স্যাটেলাইট সার্ভিস 'জিও স্পেস' (Jio Space) প্রযুক্তির ভরপুর লাভ ওঠাতে পারবেন। লাইসেন্সপ্রাপ্ত হওয়ার পর কোম্পানিগুলির DoT দ্বারা বরাদ্দকৃত স্যাটেলাইট স্পেকট্রাম সংগ্রহ করা আবশ্যক।
স্যাটেলাইট ইন্টারনেট এবং প্রচলিত ইন্টারনেটের মধ্যে কী পার্থক্য আছে?
ট্র্যাডিশনাল বা প্রচলিত ইন্টারনেট ওয়্যারড কেবল সিস্টেমের সাথে সংযুক্ত থাকে। বিপরীতে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট কানেকশন হয় ওয়্যারলেস, যা পৃথিবীকে প্রদক্ষিণকারী উপগ্রহ থেকে সংকেত ব্যবহার করে নেটওয়ার্ক উপলব্ধ করে। যার দরুন যেখানে প্রথাগত ইন্টারনেট (ফাইবার-কেবল যুক্ত) পরিষেবা এখনও উপলব্ধ নয়, সেখানেই নেটওয়ার্ক কভারেজ অফার করতে পারবে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট৷ এমনকি সেলুলার কানেক্টিভিটি নেই এমন এলাকাতেও স্যাটেলাইট ইন্টারনেট কাজ করবে।
স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যবহার করার জন্য, ইউজারদের নিজেদের বাড়িতে বা রিমোর্ট স্টেশনগুলিতে একটি ডেডিকেটেড চ্যানেল ইনস্টল করাতে হবে৷ স্টারলিঙ্কের ক্ষেত্রে, স্পেসএক্স দ্বারা পরিচালিত LEO (লো-আর্থ অরবিট) স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইট ভিত্তিক ইন্টারনেট পরিষেবা অফার করা হবে। জানিয়ে রাখি, আলোচ্য সংস্থাটি ইতিমধ্যেই ৪,০০০টি স্যাটেলাইট লঞ্চ করেছে এবং ভবিষ্যতে এই সংখ্যা আরো বাড়ানোর কাজে ব্যস্ত।