বেআইনি লেনদেনের অভিযোগে Xiaomi-র পর Vivo-র একাধিক দফতরে হানা দিল ইডি
শাওমি ইন্ডিয়া (Xiaomi India) গ্রুপের পর এবার ভারতীয় সরকারের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED) ল-এজেন্সির কড়াল নজরে পড়লো...শাওমি ইন্ডিয়া (Xiaomi India) গ্রুপের পর এবার ভারতীয় সরকারের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED) ল-এজেন্সির কড়াল নজরে পড়লো ভিভো (Vivo)। উভয় সংস্থার ক্ষেত্রেই অভিযোগ একটাই, বিদেশে আর্থিক আদানপ্রদানে অস্বচ্ছতা। এই বিষয়ে, মঙ্গলবার অর্থাৎ আজ ইডি (ED) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে, চীন ভিত্তিক স্মার্টফোন উৎপাদনকারী ব্র্যান্ড ভিভো এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং মামলার তদন্তে সারা দেশ জুড়ে মোট ৪৪ টি জায়গায় অনুসন্ধান চালানো হয়েছে।
Xiaomi সংস্থার পর এবার মানি লন্ডারিং কেসে ED এর নিশানায় Vivo
প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্টের (PMLA) অধীনে স্বনামধন্য চীনা টেকনোলজি ফার্ম ভিভোর বিরুদ্ধে এই তল্লাশি চালানো হয়েছে। আপাতত ভিভো এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলির সাথে সম্পর্কিত মোট ৪৪টি স্থানে অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে ইডি বিভাগীয় কর্তারা।
প্রসঙ্গত, গত ফেব্রুয়ারি মাসে ইডি, শাওমি টেকনোলজি ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড নামক আলোচ্য সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। তদন্তে উঠে আসা তথ্য অনুসারে, ভারতে ব্যবসা শুরু করার পর ২০১৫ সাল থেকে চীন ভিত্তিক শাওমি গ্রুপ মালিকানাধীন এই সংস্থাটি রয়্যালটি মূল্যের নামে ৭২৫ ডলার মিলিয়ন বা প্রায় ৫,৫৫১.২৭ কোটি টাকা বিদেশে চালান করেছিল। আলোচ্য টেক ব্র্যান্ডটি মোট তিনটি বিদেশি সংস্থার তহবিলে অবৈধভাবে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ স্থানান্তর করেছে বলেও জানা গিয়েছে।
দীর্ঘ তদন্তের পর উপযুক্ত প্রমাণের ভিত্তিতে আলোচ্য সংস্থার স্থানীয় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে উল্লেখিত অঙ্কের টাকা বজয়াপ্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইডি কর্তারা। যদিও, ভারতীয় আদালত শাওমি দ্বারা ফাইল করা আইনি চ্যালেঞ্জের পর তাদের সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখতে বাধ্য হয়েছে। কেননা, এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে চীনা সংস্থাটি জানিয়েছে যে, তাদের প্রত্যেকটি রয়্যালটি পেমেন্টই বৈধ ছিল এবং ভারতীয় পণ্যে ব্যবহৃত "ইন-লাইসেন্স টেকনোলজিস এবং আইপি" এর জন্য এই অর্থ ব্যবহার করা হয়েছিল।
শাওমি তাদের কোর্ট ফাইলিংয়ে আরো বলেছে যে, আমেরিকা ভিত্তিক বহুজাতিক সেমিকন্ডাক্টর ব্র্যান্ড কোয়ালকম (Qualcomm) সহ অন্যান্য প্রোভাইডার সংস্থাগুলিকে এই অর্থ প্রদান করা হয়েছিল। আর এই পুরো ঘটনাটি ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে প্রাসঙ্গিক ছিল বলেও দাবি করা হয়েছে।
অন্যদিকে তদন্তকারীদের মন্তব্য অনুসারে, স্মার্টফোন ও অন্যান্য প্রোডাক্ট তৈরীর ব্যাপারে শাওমি ইন্ডিয়া ভারতীয় প্রস্তুতকারকদের উপরেই পুরোপুরি ভাবে নির্ভরশীল। এক্ষেত্রে, প্রয়োজনের খাতিরে যদি বহিরাগত সংস্থার থেকে যন্ত্রাংশ লেগেও থাকে, তাসত্বেও উপরোক্ত বিরাট অঙ্কের অর্থ বিদেশস্থ সংস্থাগুলির হাতে তুলে দেওয়ার অজুহাত খুব একটা যুক্তিযুক্ত হচ্ছে না। এহেন সম্পর্ক বহির্ভূতভাবে বিদেশে অর্থ চালান করে সংস্থাটি FEMA (Foreign Exchange Management Act.,1999) -র অন্তর্গত ৪ নম্বর ধারা ভঙ্গ করেছে বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন।
মানি লন্ডারিং কেস ছাড়াও, শাওমি ইন্ডিয়ার অফিস এবং ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিটে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে আয়কর ফাঁকির অভিযোগে তল্লাশি চালানো হয়েছিল। আর, জানুয়ারিতে ভারতের রাজস্ব গোয়েন্দা শাখা উক্ত সংস্থাটিকে আমদানি কর ফাঁকির অভিযোগে ৮৪.৫ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৬৫৫ কোটি টাকা জমা দেওয়ার আদেশ দিয়েছিল।
সাম্প্রতিক মানি লন্ডারিং কেসের পরিপ্রেক্ষিতে শাওমি, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট ওরফে ইডির বিরুদ্ধে আদালতে একটি আইনি চ্যালেঞ্জ ফাইল করে। একই সাথে, ভারতীয় ল-এজেন্সির এই সকল পদক্ষেপ "অবিশ্বাসের পরিবেশ তৈরি করছে এবং আন্তর্জাতিক সার্কেলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করছে" বলে মন্তব্য করেছে শাওমি। বিপরীতে, উক্ত সংস্থার বিরুদ্ধে ক্রমাগত উত্থিত অভিযোগের ভিত্তিতে এদেশে শাওমি ইন্ডিয়ার সুনাম যে যথেষ্ট ক্ষুণ্ণ হবে তা বলাই বাহুল্য।