বাতাস থেকে তৈরি করা যাবে জল! এই চমকপ্রদ মেশিনের বিশেষত্ব এবং দাম জানেন?

একথা আমাদের সকলেরই জানা যে, জলের অপর নাম জীবন। জল জীবনধারণের এক মৌলিক চাহিদা তথা পরিবেশ সুরক্ষার এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ৷ এর যথাযথ ব্যবহারের ওপর মানব…

একথা আমাদের সকলেরই জানা যে, জলের অপর নাম জীবন। জল জীবনধারণের এক মৌলিক চাহিদা তথা পরিবেশ সুরক্ষার এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ৷ এর যথাযথ ব্যবহারের ওপর মানব সভ্যতার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। কিন্তু বর্তমানে শুধু ভারতেই নয়, বরং সারা বিশ্বেই জলের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এদিকে প্রাকৃতিক সম্পদের বহুল অপব্যবহারের কারণে পানীয় জলের সমস্যা ক্রমাগত বাড়ছে, আর তা দূর করতে বেশ কিছু কোম্পানি অহরহ পরিশ্রম করে চলেছে। সেক্ষেত্রে এই লক্ষ্যে দিনরাত মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কাজ করে সম্প্রতি এক বিস্ময়কর আবিষ্কার করল ইসরায়েলের Watergen (ওয়াটারজেন) কোম্পানি৷

ঠিক কী নতুন আবিষ্কার?

আসলে এই সংস্থাটি এমন একটি মেশিন তৈরি করেছে, যা পরিবেশে উপস্থিত বায়ু (আর্দ্রতা) থেকে জল তৈরি করতে সক্ষম! আজ্ঞে হ্যাঁ, ঠিকই বলছি; শুনে অবিশ্বাস্য বলে মনে হলেও ঘটনাটি কিন্তু একদম সত্যি। আর ইতিমধ্যেই এসএমভি জয়পুরিয়া গ্রুপ এই প্রযুক্তিটি ভারতে আনার জন্য ইসরায়েলের ওয়াটারজেনের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। অর্থাৎ, আলোচ্য টেকনোলজির সহায়তায় খুব শিগগিরই এদেশেও বাতাস থেকে জল তৈরি হবে বলে আশা করা যেতে পারে।

আপনাদেরকে জানিয়ে রাখি যে ইসরায়েলি কোম্পানি ওয়াটারজেন, ওয়াটার ফ্রম এয়ার টেকনোলজির ওপর ভিত্তি করে জেনি হোম (Genny Home), জেনি (Genny), জেন-এম১ (Gen-M1), জেন-এম প্রো (Gen-M Pro), জেন-এল (GEN-L)-এর মতো একাধিক প্রোডাক্ট তৈরি করেছে যেগুলি প্রতিদিন বায়ু থেকে ৩০ লিটার – ৬,০০০ লিটার পর্যন্ত জল তৈরি করতে সক্ষম। আর দামের কথা বলতে গেলে, ভারতীয় মুদ্রায় এই মেশিনগুলি কিনতে হলে ন্যূনতম খরচ পড়বে ২.৫০ লক্ষ টাকা। স্কুল, কলেজ, আর্মি বেস ক্যাম্প, হাসপাতাল, আবাসিক ভবন, কনস্ট্রাকশন সাইট, রিসর্ট, পার্কের পাশাপাশি যেসব জায়গায় জলের সমস্যা রয়েছে, সেখানে এই মেশিনগুলিকে অতি অনায়াসে ব্যবহার করা যেতে পারে।

শুধুমাত্র বৈদ্যুতিক সংযোগের সাহায্যে কাজ করবে Watergen-এর মেশিন

আপনারা জানলে অবাক হবেন যে, এই মেশিনটি চালানোর জন্য কোনো জলের পাইপ কিংবা ওয়াটার সোর্সের প্রয়োজন নেই, কেবলমাত্র বৈদ্যুতিক সংযোগের সাহায্যেই এটিকে অপারেট করা সম্ভব। ইতিমধ্যেই ৯০টিরও বেশি দেশে এই টেকনোলজিটি ব্যবহৃত হচ্ছে। তদুপরি, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের অনুমোদনও পেয়েছে এই প্রযুক্তি। সেইসাথে বিজ্ঞানের এই চাঞ্চল্যকর আবিষ্কারকে সিইএস বেস্ট ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ডও দেওয়া হয়েছে।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জনসংখ্যা বাড়ছে, আর জীবনযাত্রার মান বাড়াতে কৃষি ও শিল্পের উত্তরোত্তর উন্নতি সাধন ঘটছে। এর ফলে জলের প্রয়োজনীয়তা এবং চাহিদাও ক্রমশ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, আর বাড়তি দরকার মেটাতে হাত পড়ছে ভূগর্ভস্থ জলের ভাণ্ডারে। তাই যত দিন যাচ্ছে, ধীরে ধীরে এই অফুরন্ত জলরাশিও শেষ হয়ে আসছে, যা রীতিমতো এক ভয়ঙ্কর চিন্তার বিষয়। সেক্ষেত্রে মেশিনটির নির্মাতা সংস্থাটি দাবি করেছে যে, ওয়াটার ফ্রম এয়ার টেকনোলজি এই সমস্যার দূরীকরণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই যন্ত্রটি ব্যবহারের ফলে পরিবেশের কোনোরকম ক্ষতি হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। এই টেকনোলজি পরিবেশে কোনো হানিকর প্রভাব না ফেলে কেবলমাত্র বাতাসে উপস্থিত আর্দ্রতা থেকে জল তৈরি করে নিশ্চিতভাবে গোটা বিশ্বের জলের সমস্যার সমাধান করবে।