WhatsApp Scam: QR কোডকে হাতিয়ার করে এভাবে সহজসরল ইউজারদের অ্যাকাউন্ট সাফ করছে হ্যাকাররা

একথা নিঃসন্দেহে অনস্বীকার্য যে, দেশে ডিজিটাল বিপ্লব আনতে ইউপিআই (UPI) বা ইউনিফাইড পেমেন্ট ইন্টারফেস বিগত কয়েক বছরে একটি...
techgup 25 April 2022 12:07 PM IST

একথা নিঃসন্দেহে অনস্বীকার্য যে, দেশে ডিজিটাল বিপ্লব আনতে ইউপিআই (UPI) বা ইউনিফাইড পেমেন্ট ইন্টারফেস বিগত কয়েক বছরে একটি অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছে। নোটবন্দি এবং বিশেষ করে করোনা মহামারীর আবির্ভাবের পর থেকে বেশিরভাগ মানুষই নগদ লেনদেন এড়িয়ে ডিজিটাল পেমেন্টকে আলিঙ্গন করে নিয়েছে। আসলে ইউপিআই-ভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশনগুলি ব্যবহার করে যে-কোনো ব্যক্তিকে অর্থ প্রদান করা নিতান্তই খুব সহজ, তাই এই ধরনের অ্যাপ্লিকেশনগুলি এখন বহুল পরিমাণে ব্যবহার তথা ডাউনলোড হতে দেখা যায়। এই একই কারণেই, WhatsApp (হোয়াটসঅ্যাপ)-এর মতো মেসেজিং অ্যাপগুলিও এখন টাকা পাঠানো এবং রিসিভ করার জন্য একটি অপশন অফার করে, যার সাহায্যে বন্ধুবান্ধব কিংবা পরিবারের কাউকে খুব সহজেই পেমেন্ট করা যায়।

যারা জানেন না তাদেরকে বলে রাখি, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পেমেন্ট করার জন্য ইউজারদের প্রথমে একটি QR (কিউআর) কোড স্ক্যান করতে হয়; তারপর টাকার পরিমাণটি এন্টার করার পর সেটি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে পাঠিয়ে দিলেই কাজ শেষ। আর সবচেয়ে বড়ো ব্যাপার হল, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে টাকা ট্রানজ্যাকশনের জন্য ইউজারদের কোনো চার্জও লাগে না। এই কারণে ইদানীংকালে বহু মানুষই এই পদ্ধতিতে পেমেন্ট করছেন। কিন্তু এই সুযোগ নিয়ে প্রতারকরাও সহজে টাকা রোজগারের জন্য এক দুর্দান্ত ফাঁদ পেতে রেখেছে। আদতে দিন-কে-দিন দেশ যত ডিজিটাল হচ্ছে, ততোই বাড়ছে অনলাইন জালিয়াতি! সেক্ষেত্রে, সম্প্রতি হোয়াটসঅ্যাপের এই কিউআর (QR) কোডকে হাতিয়ার করে মানুষকে প্রতারিত করার এক অভিনব উপায় বার করেছে হ্যাকাররা।

এমনিতে কথাতেই আছে যে, দুর্জনের ছলের অভাব হয় না। কিন্তু অসাধু ব্যক্তিরা যে কী কী দুরভিসন্ধি এঁটে মানুষকে প্রতারিত করার চেষ্টা করছে, তার আঁচ অনেক সহজসরল ইউজারই পাননা। আর এই কারণেই কিউআর কোডকে কাজে লাগিয়ে নিরীহ কিছু ইউজারদের ঠকাতে সক্ষম হচ্ছে হ্যাকাররা। কিউআর কোড প্রসঙ্গে আপনাদেরকে একটা কথা জানিয়ে রাখি যে, কাউকে টাকা পাঠাতে গেলে তবেই এই কোডের প্রয়োজন হয়, টাকা রিসিভ করার ক্ষেত্রে কোনোভাবেই এই জিনিসটির দরকার হয় না। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হল যে, এই কথাটি অনেকেই জানেন না, যার সুযোগ নিচ্ছে সাইবার আক্রমণকারীরা। চলুন, একটা ছোট্ট উদাহরণ দিয়ে আপনাদের এই বিষয়টি একটু বিশদে খুলে বলা যাক।

ধরা যাক, আপনি কোনো একটি প্রোডাক্টকে অনলাইন ওয়েবসাইট মারফত বিক্রি করতে চাইছেন। তাহলে খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রোডাক্ট এবং সেই সংক্রান্ত যাবতীয় ডিটেইলস আপনাকে সেই প্ল্যাটফর্মে এন্টার করতে হবে। আর এক্ষেত্রে আপনাকে প্রতারিত করার লক্ষ্যে আপনার প্রোডাক্ট কিনতে আগ্রহী, এমন একজন ক্রেতার রূপ ধরে আবির্ভূত হয় স্ক্যামাররা। এরপরে আপনার সরলতার সুযোগ নিয়ে হ্যাকাররা হোয়াটসঅ্যাপে আপনাকে একটি কিউআর কোড সেন্ড করে এবং সাথে একথাও বলে যে গুগল পে (Google Pay) বা অন্য কোনো ইউপিআই-ভিত্তিক পরিষেবা ব্যবহার করে সেটি স্ক্যান করলে ওই প্রোডাক্টের জন্য নির্ধারিত অর্থ আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চলে যাবে। আর একবার ভুলবশত এই কথা বিশ্বাস করে ফেললেই সূত্রপাত হয় যাবতীয় সমস্যার!

আগেই বললাম যে, কিউআর কোড কিন্তু টাকা পাঠানোর জন্য ব্যবহৃত হয়, টাকা রিসিভ করার জন্য নয়। কিন্তু একথা যেহেতু আপনার জানা নেই, তাই প্রতারক তথা হ্যাকারদের কথায় প্রভাবিত হয়ে সহজসরল বিশ্বাসে আপনি তৎক্ষণাৎ তাদের সেন্ড করা কিউআর কোডটি স্ক্যান করে ফেলেন। আর এর ফলে অ্যাকাউন্টে টাকা আসার পরিবর্তে আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে আপনার কষ্টার্জিত অর্থ চলে যায় হ্যাকারদের জিম্মায়, যা নিঃসন্দেহে এক ভয়ঙ্কর তথা বেদনাদায়ক ব্যাপার।

যত দিন যাচ্ছে, প্রযুক্তিও তত উন্নত হচ্ছে আর সেইসাথে হ্যাকাররাও নিত্যনতুন ফন্দি অবলম্বন করে মানুষকে ঠকিয়ে তাদের কষ্টার্জিত টাকা হাতিয়ে নেওয়ার যাবতীয় প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গোটা বিশ্বই হ্যাকারদের জ্বালায় একপ্রকার অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। সেক্ষেত্রে হ্যাকারদের রোখার তো কোনো উপায় নেই, কিন্তু নিরাপদ ও সুরক্ষিত থাকতে হলে আপনাকে নিজেকেই যথাযথ সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। তাই কাউকে পেমেন্ট করার সময় সর্বদা WhatsApp-এ QR কোড স্ক্যান করার পরে নাম বা UPI ID-টি ডাবল চেক করে নিয়ে তারপর অর্থ প্রদান করুন। আর একটা কথা সবসময় মনে রাখবেন, বর্তমান যুগে ডিজিটাল পেমেন্ট বহুলভাবে প্রচলিত হয়েছে বলে আপনাকেও যে করতেই হবে, তার কিন্তু কোনো মানে নেই। অনলাইন পেমেন্ট করার আগে এই বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সবকিছু জেনে নিন, যাতে কেউ কোনো অছিলায় আপনাকে ঠকাতে না পারে। আর যতদিন না সবকিছু জানতে পারছেন, ততদিন পর্যন্ত ডিজিটাল পেমেন্ট এড়িয়ে নগদে লেনদেন করাই শ্রেয়।

Show Full Article
Next Story