ভারত থেকে ব্যবসা সরাচ্ছে Xiaomi? বন্ধ করে দেওয়া হল ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাপ পরিষেবা
এবার থেকে আর Xiaomi-র ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাপ সার্ভিস ব্যবহার করতে পারবেন না ভারতীয় ইউজাররা। সম্প্রতি টেকক্রাঞ্চ...এবার থেকে আর Xiaomi-র ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাপ সার্ভিস ব্যবহার করতে পারবেন না ভারতীয় ইউজাররা। সম্প্রতি টেকক্রাঞ্চ (TechCrunch)-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, জনপ্রিয় এই চীনা স্মার্টফোন প্রস্তুতকারক সংস্থাটি ভারতে তাদের অ্যাপ মারফত আর্থিক পরিষেবা প্রদান করা বন্ধ করে দিয়েছে। Xiaomi সম্প্রতি স্থানীয় প্লে স্টোর (Play Store) এবং তাদের নিজস্ব অ্যাপ স্টোর থেকে এমআই পে (Mi Pay) এবং এমআই ক্রেডিট (Mi Credit) অ্যাপ্লিকেশনগুলি সরিয়ে নিয়েছে, যার ফলে কোনো ভারতীয় ইউজার আর এই অ্যাপগুলি ব্যবহার করতে পারবেন না। আচমকাই ভারত থেকে সংস্থার এই আর্থিক পরিষেবা সংক্রান্ত ব্যবসা (financial services business) গুটিয়ে নেওয়ায় হতবাক হয়ে গিয়েছেন সকলেই।
অ্যাপগুলিকে সরিয়ে ফেলার কারণকে ঘিরে রয়েছে বিস্তর ধোঁয়াশা
রিপোর্ট অনুযায়ী, তিন বছর আগে এমআই পে অ্যাপটি চালু করা হয়েছিল। নিয়ন্ত্রক সংস্থা ন্যাশনাল পেমেন্টস কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া বা এনপিসিআই (NPCI) কর্তৃক স্বীকৃত এই অ্যাপটির মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা বিল পেমেন্ট এবং টাকা ট্রান্সফার করতে পারতেন। তবে হালফিলে উক্ত অ্যাপটিকে এনপিসিআই কর্তৃক অনুমোদিত অ্যাপ্লিকেশনের তালিকা থেকেও সরিয়ে ফেলা হয়েছে। উল্লেখ্য, শাওমি এবং এনপিসিআই-এর পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তাই ঠিক কী কারণে চীনা স্মার্টফোন নির্মাতা সংস্থাটি সম্প্রতি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে বিষয়টি এখনও সুস্পষ্ট নয়।
বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় আইন লঙ্ঘনের দায়ে এর আগে Xiaomi-র ৫,৫০০ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করেছিল ED
প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, চীনের বাইরে শাওমির সবচেয়ে বড় বাজার ভারত, তবে বেআইনি লেনদেনের অভিযোগে সংস্থাটি কিন্তু ইতিমধ্যেই কেন্দ্রের কুনজরে চলে এসেছে, যার জেরে আগামী দিনে সংস্থাটি তাদের ব্যবসায়িক আধিপত্যকে ভারতে আদৌ বহাল রাখতে পারবে কি না, সে বিষয়ে রীতিমতো সন্দেহ দেখা দিয়েছে। উল্লেখ্য যে, গত এপ্রিলে শাওমির ৫,৫০০ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করেছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টোরেট বা ইডি (ED)। বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় আইন (Foreign Exchange Management Act, 1999) লঙ্ঘনের দায়ে চীনা স্মার্টফোন নির্মাতা কোম্পানিটির বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ইডি জানিয়েছিল যে, তিনটি বিদেশি কোম্পানিকে এই পাহাড়প্রমাণ টাকা পাঠানো সত্ত্বেও সংস্থা তিনটির কাছ থেকে কোনো পরিষেবা নেয়নি শাওমি। এই গুরুতর অভিযোগের জেরে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে চীনা সংস্থাটি সোচ্চার হলেও কর্ণাটকের হাইকোর্ট শাওমি কর্পোরেশনের এই বিপুল পরিমাণ মূল্যের সম্পদের উপর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করতে অস্বীকার করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে চীনা স্মার্টফোন প্রস্তুতকারক সংস্থাটি জানায় যে, হাইকোর্টের এই পদক্ষেপ ভারতীয় বাজারে তাদের অপারেশন বা কার্যক্রমকে “থামিয়ে দিয়েছে”।
ভারত থেকে তল্পিতল্পা গুটিয়ে কি পাকিস্তানে চলে যাচ্ছে Xiaomi?
ভারতে সংস্থাটির এহেন টালমাটাল অবস্থা দেখে চলতি মাসের শুরুতে সাউথ এশিয়া ইনডেক্স (South Asia Index)-এর এক টুইটে দাবি করা হয়েছিল যে, Xiaomi এবার ভারত থেকে পাকিস্তানে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে সরিয়ে নিতে পারে। তবে চীনা কোম্পানিটি এটিকে সম্পূর্ণ একটি গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছে। সংস্থার মতে, একথা "সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন"। শুধু তাই নয়, সেইসাথে সমালোচকদের চুপ করিয়ে টুইটার (Twitter)-এই জোরদার পাল্টা জবাব দিয়ে ভারতে নিজেদের অবস্থানকে স্পষ্ট করেছে চীনা সংস্থাটি। টুইটে কোম্পানিটি উল্লেখ করে যে, ২০১৪ সালে ভারতে ব্যবসা শুরু করে Xiaomi, এবং এদেশে আসার এক বছরের মধ্যেই তারা প্রধানমন্ত্রীর মেক ইন ইন্ডিয়া উদ্যোগে অংশগ্রহণ করে। এর সুবাদে এখন সংস্থার ৯৯% স্মার্টফোন এবং ১০০% স্মার্ট টিভি ভারতে ও ভারতবাসীর দ্বারাই তৈরি হয়। তাই এদেশে নিজেদের সুনাম বজায় রাখার জন্য Xiaomi প্রাণপণে চেষ্টা চালিয়ে যাবে এবং সেইসাথে প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থাও নেবে। তবে এখন ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাপ সার্ভিস তুলে নেওয়ায় সত্যি সত্যিই ভারতে সংস্থার ব্যবসায়িক কার্যকলাপে কোনো বড়োসড়ো প্রভাব পড়ে কি না, এখন সেটাই দেখার…