স্ট্যান্ড ছাড়াই সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে, Yamaha-র সেল্ফ ব্যালেন্সিং বাইক তাক লাগিয়ে দিচ্ছে

ছোট বাচ্চাদের সাইকেলের পিছনের চাকার দুপাশে দুটি অতিরিক্ত চাকা লাগানো থাকে সেটা নিশ্চয়ই অনেকেই খেয়াল করেছেন। যেহেতু ছোট বাচ্চাটি সাইকেল চালানোর সময় তার ভারসাম্য সঠিক…

ছোট বাচ্চাদের সাইকেলের পিছনের চাকার দুপাশে দুটি অতিরিক্ত চাকা লাগানো থাকে সেটা নিশ্চয়ই অনেকেই খেয়াল করেছেন। যেহেতু ছোট বাচ্চাটি সাইকেল চালানোর সময় তার ভারসাম্য সঠিক রাখতে পারে না সেই কারণেই যাতে পড়ে গিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত না হয় তার জন্যই লাগানো থাকে ওই অতিরিক্ত দুটি চাকা। আচ্ছা পিছনে অতিরিক্ত চাকা ছাড়াই এমন সুবিধা যদি আপনার পছন্দের বাইকেও উপলব্ধ হয় তবে কেমন হয় বলুন তো? মানে যে কোনো পরিস্থিতিতেই আপনার বাইকটি কোনো পাশে হেলে যদি পড়ে না যায় তবে সহজেই দুর্ঘটনা জনিত আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনাও অনেকাংশেই কমে আসে।

Honda-র পর এবার এমনই এক প্রযুক্তি নিয়ে কাজ অনেকদূর এগিয়ে ফেলল জাপানের বাইক নির্মাতা ইয়ামাহা (Yamaha)। দুর্ঘটনার সময় যাতে বাইক পড়ে গিয়ে আঘাত লাগার ঘটনা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় সেই উদ্দেশ্যেই সেল্ফ ব্যালান্সিং টেকনোলজি আনার পথে এই সংস্থা। আগামী ২০৫০ সালের মধ্যেই মোটরসাইকেল সম্পর্কিত পথ দুর্ঘটনা শূন্যে নামানোই লক্ষ্য বলে জানিয়েছে ইয়ামাহা। উচ্চ গতিতে থাকাকালীন বড় দুর্ঘটনাগুলি থেকে বাঁচতেই এমন প্রযুক্তি আনার কথা ভেবেছে তারা।

এই সেল্ফ ব্যালান্সিং টেকনোলজির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো অ্যাডভান্সড মোটরবাইক স্টেবিলাইজেশন অ্যাসিস্ট সিস্টেম (AMSAS)। Jin- ki Kanno x Jin- ki Anzen সুরক্ষা কর্মসূচির অন্তর্গত এই উদ্যোগে আগামী দিনে বিশ্বব্যাপী তাদের সমস্ত গ্রাহককে দুর্ঘটনা মুক্ত জীবন দেওয়াই প্রধান লক্ষ্য ইয়ামাহার।

Yamaha Self-Balancing Technology আসলে কী?

ইয়ামাহার তৈরি এই সেল্ফ ব্যালান্সিং টেকনোলজি আসলে কম গতিবেগের যানবাহনে উপযুক্ত স্টেবিলিটি প্রদান করে। বাইকের সামনের চাকায় এবং হ্যান্ডেলবারে লাগানো বিশেষ মোটর কন্ট্রোলার প্রতিমুহূর্তে বাইকটির গতি নিয়ন্ত্রণে রাখে। একটি ছয় অক্ষ যুক্ত ইনার্শিয়াল মেজারমেন্ট ইউনিট (IMU) এই কন্ট্রোলারটিকে প্রয়োজনীয় সংকেত পৌঁছে দেয়। এই পদ্ধতির ফলে স্বল্প গতিবেগে বাইকটি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই নিজের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে।

এমনকি পরীক্ষা করার সময় চালকবিহীন অবস্থাতেও নিজে থেকেই চলতে পারছিল বাইকটি। সামনের চাকায় লাগানো এই কন্ট্রোলার যখন বাইকটিকে চালানো কিংবা থামানো হয় তখন পর্যাপ্ত ভারসাম্য প্রদান করে। অন্যদিকে হ্যান্ডেলবারে লাগানো কন্ট্রোলারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৫ কিমি/ঘণ্টা গতিবেগ পর্যন্ত ভারসাম্য নিয়ন্ত্রিত হয়। অর্থাৎ এই সেল্ফ ব্যালান্সিং সিস্টেম সাধারণ মানুষের পায়ে হাটা গতিবেগে সঠিকভাবে কাজ করতে পারে। এর জন্য বাইকের চালকের নিয়ন্ত্রণ অপ্রয়োজনীয়।

ইয়ামাহা বর্তমানে তাদের এই সেলফ ব্যালান্সিং প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণার একদম মধ্যম পর্যায়ে রয়েছে। এর পাশাপাশি আরো বেশ কিছু রাইডার অ্যাসিস্টেন্স সিস্টেম নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজে ব্যস্ত তারা। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় Tracer 9 GT+ এর রাডার সংযুক্ত ইউনিফাইড ব্রেক সিস্টেম তার মধ্যে অন্যতম। এছাড়াও এই সেল্ফ ব্যালান্সিং প্রযুক্তি আগামী দিনে ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে ব্যবহৃত বিভিন্ন যানবাহন এমনকি বাইসাইকেলেও ব্যবহার করার জন্য চিন্তাভাবনা করছে তারা।

Self-Balancing বাইকের উপযোগিতা

যে সকল স্বল্প উচ্চতার চালকরা বাইক স্টার্ট দেওয়া কিংবা থামানোর সময় মোটরসাইকেলের অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সমস্যায় পড়েন তাদের জন্য সেল্ফ ব্যালান্সিং সিস্টেম একটি কার্যকরী সমাধান। এমনকি যারা সদ্য মোটরসাইকেল চালানো শিখছেন তাদের জন্যও অতি প্রয়োজনীয় ফিচার এটি। এর পাশাপাশি শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছেন যারা সেই সমস্ত মানুষের জন্য মোটরবাইক চালানোর ক্ষেত্রে সেল্ফ ব্যালান্সিং সিস্টেম এক আশীর্বাদসম।

নতুন এই প্রযুক্তি আগামী দিনে সারা বিশ্বের দুই চাকার জগতে এক নতুন অধ্যায় শুরু করতে চলেছে। তবে তার আগে সেলফ ব্যালান্সিং টেকনোলজিকে নিয়ে বিস্তর গবেষণা প্রয়োজন। প্রসঙ্গত, জানুয়ারিতে দিল্লিতে আয়োজিত অটো এক্সপো ইভেন্টে Liger X এবং Liger X+ নামে বিশ্বের প্রথম স্ট্যান্ডলেস বৈদ্যুতিক স্কুটারের প্রদর্শন করেছিল ভারতীয় সংস্থা Liger Mobility। চালকের কোনরকম সহায়তা না নিয়েই এই স্কুটারগুলি ভারসাম্য রক্ষা করে স্থির ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই Liger এর তৈরি এই সেলফ ব্যালান্সিং প্রযুক্তি সম্বলিত ইলেকটিক স্কুটারের অগ্রিম বুকিং নেওয়া শুরু হবে আর এর চাবি হাতে পাওয়া যাবে বছরের একদম শেষে।