এয়ারটেলের পর এবার রিচার্জ প্ল্যানের দাম বাড়াতে পারে Jio ও Vodafone Idea
বর্তমান ডিজিটাল যুগে মোবাইল রিচার্জ প্ল্যান ছাড়া দিন গুজরান করা কার্যত অসম্ভব বললেই চলে। কিন্তু গত বছরের শেষের দিকে...বর্তমান ডিজিটাল যুগে মোবাইল রিচার্জ প্ল্যান ছাড়া দিন গুজরান করা কার্যত অসম্ভব বললেই চলে। কিন্তু গত বছরের শেষের দিকে দেশের শীর্ষস্থানীয় তিনটি বেসরকারি কোম্পানি (Reliance Jio, Airtel, এবং Vodafone Idea বা Vi) তাদের প্রিপেইড রিচার্জ প্ল্যানগুলির দাম ২০%-২৫% পর্যন্ত বাড়িয়ে আমজনতার পকেটে বেশ খানিকটা চাপ ফেলেছে। আবার এ বছরের শুরু থেকেই কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিল যে, চলতি অর্থবর্ষের দ্বিতীয়ার্ধে আরও একবার প্ল্যানের দাম বাড়তে পারে। ইতিমধ্যেই ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম টেলিকম অপারেটর Airtel দুটি সার্কেলে ট্যারিফ বৃদ্ধি করে সেই আশঙ্কাকে নিশ্চিত করেছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, শুধুমাত্র হরিয়ানা এবং ওড়িশায় ন্যূনতম প্ল্যানের দাম একলাফে ৫৭ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি, যার ফলে এই দুই রাজ্যেই Airtel-এর সবথেকে সস্তা ২৮ দিনের প্ল্যানের দাম ৯৯ টাকা থেকে বেড়ে ১৫৫ টাকা হয়ে গিয়েছে। ফলে আগামী দিনে অন্যান্য রাজ্যের বাসিন্দাদের মাথায়ও বাজ পড়তে চলেছে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এমত পরিস্থিতিতে আপামর জনসাধারণের মাথায় সর্বপ্রথম যে প্রশ্নটি ঘোরাফেরা করছে, সেটি হল - তাহলে কি এবার Jio এবং Vodafone Idea-ও তাদের রিচার্জ প্ল্যানের দাম বাড়াবে?
আগামী দিনে Jio এবং Vodafone Idea-র প্রিপেইড রিচার্জ প্ল্যানের দাম বাড়ার সম্ভাবনা প্রবল
একথা নিঃসন্দেহে অনস্বীকার্য যে, করোনা মহামারীর আগমনের পর থেকে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ টালমাটাল হয়ে গিয়েছে। এমত পরিস্থিতিতে ইউজারদেরকে যথাযথ পরিষেবা দিতে গেলে রিচার্জ প্ল্যানের দাম বাড়ানো একান্ত আবশ্যক। কারণ টেলিকম সংস্থাগুলি জানিয়েছে যে, শিল্পের জন্য নেটওয়ার্ক এবং স্পেকট্রামে বিনিয়োগ করতে হলে প্রত্যেক ব্যবহারকারীর এআরপিইউ (ARPU) বাড়াতেই হবে, তা না হলে যথাযথ পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে বলে রাখি, মূলত গ্রাহক পিছু গড় আয় বা এআরপিইউ বৃদ্ধির লক্ষ্যেই গত বছর অপারেটররা প্রিপেইড রিচার্জ প্ল্যানের দাম বাড়িয়েছিল। তাই এ বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে অন্ততপক্ষে ৫ শতাংশ এআরপিইউ বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে টেলিকম সংস্থাগুলি, যার ফলে চলতি অর্থবর্ষে তিনটি শীর্ষস্থানীয় কোম্পানির আয় ২০-২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। তাই নিজেদের মুনাফা বৃদ্ধির খাতিরে আগামী দিনে জিও এবং ভোডাফোন আইডিয়া এয়ারটেলের দেখানো পথই অনুসরণ করবে বলে আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
অদূর ভবিষ্যতে রিচার্জ করতে গেলে পকেটে বেশ ভালোমতো চাপ পড়বে
আইসিআইসিআই সিকিউরিটিজ (ICICI Securities) সম্প্রতি এক রিপোর্টে জানিয়েছে, এমনিতে ভারতের সমস্ত টেলিকম অপারেটররাই ইউজারদেরকে সাশ্রয়ী মূল্যে একাধিক রিচার্জ প্ল্যান অফার করে থাকে। কিন্তু বর্তমান সময়ে চূড়ান্ত রকমের অর্থনৈতিক মন্দার জেরে কোম্পানিগুলিকে একপ্রকার বাধ্য হয়েই রিচার্জ প্ল্যানের দাম বাড়াতে হচ্ছে। তাই গত ১০ বছরে প্ল্যানের দামে উল্লেখযোগ্য ওঠাপড়া চোখে না পড়লেও আগামী দিনে উপভোক্তারা রিচার্জ প্ল্যানের আরও একাধিক মূল্যবৃদ্ধির সাক্ষী হতে পারেন বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। ফলে রিচার্জ করতে গেলে অদূর ভবিষ্যতে আমজনতার পকেটে বেশ ভালোরকম চাপ পড়ার সম্ভাবনা প্রবল।
Jio এবং Vodafone Idea-কে রিচার্জ প্ল্যানের দাম বাড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছে Airtel
প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, ইদানীংকালে ট্যারিফ প্ল্যানের দাম বাড়িয়ে এয়ারটেল একাধারে জিও এবং ভোডাফোন আইডিয়ার পথপ্রদর্শক হয়ে উঠেছে বলেও ভেবে নেওয়া যেতে পারে; কারণ একটি কোম্পানি দাম বাড়ালেই অন্যরাও খুব স্বাভাবিকভাবে তাদের রিচার্জ প্ল্যানের দাম বাড়াতে বাধ্য হবে। সোজা কথায় বললে, জিও এবং ভিআইকে প্ল্যানের দাম বাড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছে এয়ারটেল। এর ফলে আগামী দিনে জিও এবং ভোডাফোন আইডিয়ার রিচার্জ প্ল্যানের দাম বাড়ার সম্ভাবনা প্রবল বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। উল্লেখ্য যে, জিও বরাবরই অন্যদের তুলনায় তুলনামূলক সস্তায় ইউজারদেরকে একাধিক প্রিপেইড রিচার্জ প্ল্যান অফার করে থাকে। সেক্ষেত্রে এবার দাম বাড়ালেও তারা অন্যদের তুলনায় নিজেদের প্ল্যানের দাম কম রাখবে বলেই ধরে নেওয়া যেতে পারে।
অন্যদিকে, হালফিলে বেশ খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে Vodafone Idea। দীর্ঘদিন ধরেই পাহাড়প্রমাণ দেনার দায়ে জর্জরিত হয়ে রয়েছে Vi, যার ফলে ইদানীংকালে টেলিকম কোম্পানিটির ব্যবসার হালহকিকত মোটেই ভালো যাচ্ছে না। প্রায়শই সংস্থাটির লক্ষ লক্ষ গ্রাহক হারানোর খবর শোনা যায়। এমত পরিস্থিতিতে আগামী দিনে ব্যবসায় একটু লাভের মুখ দেখতে চাইলে সংস্থাটিকে অবশ্যই তাদের প্রিপেইড প্ল্যানের দাম বাড়াতে হবে বলে দাবি করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এই প্রসঙ্গে বলে রাখি, Jio এবং Vodafone Idea যদি সাম্প্রতিককালে Airtel-এর দেখানো পথ অনুসরণ না করে, তাহলে কিন্তু বেশ বিপাকে পড়বে সংস্থাটি। সেক্ষেত্রে পুরোনো ৯৯ টাকা দামের প্ল্যানটিকে ফিরিয়ে আনা ছাড়া Airtel-এর কাছে আর অন্য কোনো উপায় থাকবে না। সবমিলিয়ে আগামী দিনে ভারতের টেলিকম দুনিয়ার ছবিটা ঠিক কী দাঁড়াবে, সেটা একমাত্র সময়ই বলতে পারবে।