গত বছর ‘ডিপার্টমেন্ট অফ টেলিকমিউনিকেশনস’ (DoT) -এর একটি ঘোষণা ভারতীয় টেলিকম অপারেটরদের যতটা আতঙ্কিত করেছিল, ঠিক ততটাই খুশির জোয়ার নিয়ে এসেছিল প্রাইভেট কোম্পানি বা এন্টারপ্রাইজগুলির জন্য। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এই পুরো ঘটনাই একটা নতুন মোড় নিতে চলেছে। বিষয়টা একটু খুলে বলি তাহলে। আসলে ২০২২ সালে, প্রাইভেট কোম্পানিগুলি সরাসরি স্পেকট্রাম কিনতে পারবে বলে জানিয়ে দিয়েছিল DoT। যা তৎকালীন সময়ে প্রায় প্রত্যেকটি টেলিকম সংস্থার জন্য বিশাল উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
কারণ, এরফলে ভারতের প্রাইভেট কোম্পানিগুলি স্পেকট্রাম কেনার মাধ্যমে ক্যাপটিভ প্রাইভেট নেটওয়ার্ক স্থাপন করতে পারবে এবং অধীনস্ত অন্যান্য সংস্থাকে লিজে স্পেকট্রাম পরিষেবা অফার করতে সক্ষম হবে। কিন্তু বর্তমানের 5G নেটওয়ার্কের যুগে ক্যাপটিভ প্রাইভেট নেটওয়ার্কের চাহিদা ব্যাপক হওয়ায়, প্রাইভেট কোম্পানিগুলি সরাসরি সরকারের কাছ থেকে স্পেকট্রাম পেলে টেলিকম অপারেটরদের বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হতে হতো। আর তাই টেলিকম কোম্পানিগুলি এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ছিল। সেই কারণে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে বেসরকারি কোম্পানিকে স্পেকট্রাম বিক্রি করার সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনতে চলেছে DoT, যা টেলকোগুলিকে স্বস্তি দিতে পারে।
সাম্প্রতিক ইটি (ET) টেলিকমের রিপোর্ট অনুসারে, প্রাইভেট নেটওয়ার্ক স্থাপনের জন্য বেসরকারি সংস্থাগুলিকে সরাসরি স্পেকট্রাম বিক্রি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে DoT। এই পদক্ষেপের কারণে স্বাভাবিকভাবেই – টাটা পাওয়ার, জিএমআর -এর মতো একাধিক নামজাদা প্রাইভেট সংস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হতে চলেছে। কেননা গত বছর ঘোষণার পর থেকেই এইসকল বড় এন্টারপ্রাইজগুলি সরকারের কাছ থেকে স্পেকট্রাম পাওয়ার অপেক্ষায় ছিল। শুধু তাই নয়, স্পেকট্রাম পাওয়ার পর ক্যাপটিভ নেটওয়ার্ক স্থাপনের প্রস্তুতির পরিকল্পনাও সেরে নিয়েছিল কিছু সংস্থা। কিন্তু বর্তমান আইনি কাঠামোর দিকে তাকিয়ে সম্প্রতি DoT সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, বেসরকারি সংস্থাগুলিকে সরাসরি স্পেকট্রাম দেওয়া একদমই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। এতে টেলিকম অপারেটরদের অধিকার খর্ব হতে পারে।
বেসরকারি সংস্থাগুলিকে যেহেতু সরাসরি স্পেকট্রাম দেওয়া হচ্ছে না, সেহেতু তারা ক্যাপটিভ প্রাইভেট নেটওয়ার্ক স্থাপনের জন্য টেলিকম সংস্থাগুলির সাহায্য নিতে অথবা তাদের কাছ থেকে স্পেকট্রাম লিজ নিতে পারে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে DoT। ভারতে ৫জি নেটওয়ার্ক অফার করার জন্য এই স্পেকট্রাম কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা অজানা নয় কোনো টেলিকম সংস্থারই। আর তাই হয়তো DoT -এর এই সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত একটা বড়সড় স্বস্তি নিয়ে এসেছে এয়ারটেল, রিলায়েন্স জিও, বিএসএনএল -দের জন্য।
প্রসঙ্গত, এই বিষয়ে টেলিকম বিভাগ এখনও ‘টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অফ ইন্ডিয়া’ (TRAI) -কে তাদের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবহিত করেনি।
যাইহোক, আপনাদের অবগতির জন্য জানিয়ে রাখি, ‘ডিপার্টমেন্ট অফ টেলিকমিউনিকেশনস’ -এর আজকের এই সিদ্ধান্ত গত বছরের প্রাথমিক নির্দেশিকার থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। কেননা পূর্ববর্তী নির্দেশিকা অনুসারে, বেসরকারি সংস্থাগুলি চাইলে প্রাইভেট নেটওয়ার্ক স্থাপনের জন্য সরাসরি সরকারের কাছ থেকে স্পেকট্রাম নিতে পারতো। শুধু তাই নয়, স্পেকট্রাম কিনতে চায় এমন সংস্থাগুলি স্পেকট্রাম নিলামের কার্যক্রমেও অংশগ্রহণের অধিকার পাবে এবং এবং এর জন্য কোন প্রশাসনিক বরাদ্দ থাকবে না – এমনটাও বলা হয়েছিল। অতএব, DoT যদি তাদের এই সিদ্ধান্ত আজ পুনর্বিবেচনা না করতো, তবে প্রশাসনিক বরাদ্দ খুঁজছে এমন স্যাটেলাইট সংস্থাগুলির জন্যও এই পদক্ষেপ বড় পরিবর্তন আনতে পারতো।