5G লঞ্চ পরেও অস্বস্তিতে Jio, হাত ছাড়লো 20 লক্ষ গ্রাহক, Airtel এর অবস্থা কেমন?
টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অফ ইন্ডিয়া বা ট্রাই (TRAI) ভারতের বিভিন্ন টেলিকম অপারেটরগুলির গত নভেম্বর মাসের গ্রাহক সংখ্যা...টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অফ ইন্ডিয়া বা ট্রাই (TRAI) ভারতের বিভিন্ন টেলিকম অপারেটরগুলির গত নভেম্বর মাসের গ্রাহক সংখ্যা উল্লেখ করে সম্প্রতি একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। সেখানে দেখা গেছে যে, ভারতের শীর্ষস্থানীয় টেলিকম কোম্পানি Reliance Jio ২০২২ সালের নভেম্বরে প্রায় ১৪,২০,০০০ জন ওয়্যারলেস গ্রাহক যুক্ত করেছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, একদিকে যেমন Jio এবং Airtel নভেম্বর মাসে ওয়্যারলেস গ্রাহক যুক্ত করেছে, তেমনই অন্যদিকে Bharat Sanchar Nigam Limited বা BSNL এবং Vodafone Idea বা Vi বহু সংখ্যক গ্রাহক হারিয়েছে। তবে এটা কিন্তু খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। মূলত টেলিকম কোম্পানিগুলি কতজন সক্রিয় ব্যবহারকারী বা অ্যাক্টিভ ইউজার যুক্ত করতে পেরেছে, সেটাই হল আসল ব্যাপার। সেক্ষেত্রে TRAI কর্তৃক প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, Airtel প্রায় ১০ লক্ষ সক্রিয় ব্যবহারকারী যোগ করেছে এবং Jio ২০ লক্ষ সক্রিয় ব্যবহারকারী হারিয়েছে, যা নিঃসন্দেহে এক আশ্চর্যজনক খবর!
এখন আপনারা নিশ্চয়ই ভাবছেন যে, কেন আমরা এরকম কথা বলছি? আসলে ব্যাপারটা হল, শেষ কবে জিও সক্রিয় ব্যবহারকারী হারিয়েছিল, তা মনে করা বেশ কঠিন ব্যাপার। কারণ প্রতি মাসেই দেখা যায় যে, সংস্থাটি লক্ষ লক্ষ অ্যাক্টিভ ইউজার যুক্ত করছে। এমনকি গত বছরের অক্টোবরের গোড়ার দিকে ৫জি (5G) চালু করার পর জিও এয়ারটেলের থেকে বেশ খানিকটা এগিয়েছিল। সেক্ষেত্রে হঠাৎ করে সংস্থাটি কেন এত বিপুল সংখ্যক সক্রিয় ব্যবহারকারী হারালো, তার সঠিক কারণ জানা খুবই কঠিন ব্যাপার। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, জিও-র রিচার্জ প্ল্যানের দামও অন্যান্য বেসরকারি টেলিকম কোম্পানিগুলির চাইতে কম। কিন্তু তা সত্ত্বেও সংস্থাটিকে কেন এরকম শোচনীয় পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হল, তা বোঝা বেশ মুশকিল। উল্লেখ্য, গত বছরের নভেম্বরে ভোডাফোন আইডিয়া এবং বিএসএনএল যথাক্রমে প্রায় ২০ লক্ষ এবং ৫ লক্ষ সক্রিয় গ্রাহক হারিয়েছে।
Jio-র সক্রিয় গ্রাহক হারানোর পিছনে মূল কারণ কী?
উল্লেখ্য, আপাতদৃষ্টিতে দুর্বল মানের পরিষেবাকেই জিও-র বিপুল সংখ্যক সক্রিয় গ্রাহক হারানোর পিছনে মূল কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে আবার অন্য কথা বলছে ওপেনসিগন্যাল (Opensignal), কারণ তাদের মতে, প্রাপ্যতা এবং কভারেজের দিক থেকে জিও-র ৪জি (4G) নেটওয়ার্ক ভারতে সবচেয়ে সেরা। উল্লেখ্য, হালফিলে কোনো অতিরিক্ত খরচ ছাড়াই ৪জি সিম মারফত ইউজারদেরকে দুরন্ত গতির আনলিমিটেড ৫জি সার্ভিস অফার করছে জিও। অর্থাৎ, হাতে একটি ৫জি স্মার্টফোন এবং সেইসাথে কোম্পানির তরফে ইনভিটেশন পেলেই গ্রাহকরা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এই ঝড়ের গতির নেট পরিষেবা ব্যবহারের মজা উপভোগ করতে পারবেন।
কিন্তু এত সুবিধা দেওয়া সত্ত্বেও কেন গ্রাহক হারালো জিও? সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, কম সক্রিয় গ্রাহক বেসের অর্থ প্রতি মাসে এআরপিইউ (ARPU অর্থাৎ ব্যবহারকারী প্রতি গড় আয়)-এর দুর্বল বৃদ্ধি। উল্লেখ্য, ২০২৩ অর্থবর্ষের তৃতীয় প্রান্তিকে জিও-র ক্ষেত্রে ঠিক এমনটাই ঘটেছিল। বর্তমানে সংস্থাটির এআরপিইউ দাঁড়িয়েছে ১৭৮.২ টাকায়, যা পূর্বের তুলনায় মাত্র ১ টাকা কোয়ার্টার-অন-কোয়ার্টার (QoQ) বেড়েছে। এর অর্থ হল, মুনাফা এবং রাজস্ব বাড়ানোর জন্য ট্যারিফ প্ল্যানের দাম বৃদ্ধি করা সংস্থাটির জন্য একান্ত আবশ্যক, নইলে জিও-র ব্যবসায়িক উন্নতি কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
আগামী দিনে ব্যবসায়িক উন্নতির জন্য Jio কী স্ট্র্যাটেজি অবলম্বন করবে, তা বলবে সময়
প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, অন্যান্য বেসরকারি টেলিকম কোম্পানিগুলির তুলনায় বরাবরই ইউজারদেরকে কিছুটা সস্তায় একাধিক রিচার্জ প্ল্যান অফার করে Jio। বর্তমানে তারা 4G সিম মারফতই ইউজারদেরকে আনলিমিটেড 5G ডেটা ব্যবহারের সুযোগ দিচ্ছে। কিন্তু ব্যবহারকারীদেরকে উক্ত সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি নিজেদের মুনাফা বৃদ্ধির জন্য তারা গ্রাহকদেরকে ন্যূনতম ২৩৯ টাকা মূল্যের রিচার্জ প্ল্যান ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছে। সহজে বললে, ২৩৯ টাকার কমদামি প্ল্যান রিচার্জ করলে ইউজাররা আনলিমিটেড 5G ডেটা ব্যবহার করতে পারবেন না। অর্থাৎ, একটি ন্যূনতম লিমিট সেট করে নিজেদের ব্যবসায়িক আয় বাড়ানোর চেষ্টা করেছে সংস্থাটি। সেক্ষেত্রে আগামী দিনে নিজেদের সামগ্রিক উন্নতির জন্য Jio আর কী কী নতুন পদক্ষেপ নেবে, এবার সেটাই দেখার