ভারতে 5G পরিষেবা লঞ্চ হবে শীঘ্রই, স্পিড 4G-র থেকে ১০ গুণ বেশি: প্রধানমন্ত্রী মোদী

আসন্ন পঞ্চম প্রজন্মের নেটওয়ার্ক 5G (৫জি)-কে কেন্দ্র করে আপামর ভারতবাসীর দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান খুব শীঘ্রই হতে চলেছে বলে মনে করা যেতে পারে। কারণ অতিসম্প্রতি নয়াদিল্লির লালকেল্লায় ৭৫তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছেন যে, 5G-র জন্য অপেক্ষার দিন শেষ, খুব শীঘ্রই এদেশে পা রাখবে পরবর্তী প্রজন্মের দুরন্ত গতির নেটওয়ার্ক। তবে এর পাশাপাশি 5G-র আগমন ঘটলে ভারতে ঠিক কী ধরনের প্রযুক্তিগত বিকাশ ঘটবে, সেই বিষয়টির উপরেও বিশেষ আলোকপাত করেন তিনি। তাঁর মতে, 5G নেটওয়ার্কের সুবাদে 4G-র তুলনায় ১০ গুণ দ্রুত নেট স্পিড এবং ল্যাগ-ফ্রি কানেকশন পেতে সক্ষম হবেন ইউজাররা। এছাড়া তিনি আরও জানিয়েছেন যে, খুব শীঘ্রই ভারতের গ্রামগুলি অপটিক্যাল ফাইবার অ্যাক্সেস পাবে, যার ফলে ইন্টারনেট গোটা দেশের প্রতিটি গ্রামে পৌঁছে যাবে এবং সকলেই এই পরিষেবা উপভোগ করতে পারবেন। সবমিলিয়ে ডিজিটাল ইন্ডিয়া গঠনের লক্ষ্যে আমাদের দেশমাতৃকা যে আরও একধাপ এগিয়ে যেতে চলেছে, সেকথা বলাই বাহুল্য। সেক্ষেত্রে, বিপুল সংখ্যক যুগান্তকারী পরিবর্তনের দরুন, শ্রী মোদী, চলতি দশককে ভারতের জন্য “টেকেড” (techade) হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

5G স্পেকট্রাম নিলামে অংশগ্রহণ করেছিল দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি সংস্থাগুলি

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, গত মাসের শেষের দিকে যোগাযোগ মন্ত্রকের অধীনস্থ ডট (DoT অর্থাৎ ডিপার্টমেন্ট অফ টেলিকমিউনিকেশনস) ভারতের বৃহত্তম ৫জি স্পেকট্রামের নিলামপর্বের আয়োজন করেছিল। সদ্য সমাপ্ত এই নিলামপর্বটি অত্যন্ত সফলভাবে সুসম্পন্ন হওয়ার পর থেকে সকলেই আন্দাজ করতে পারছিলেন যে, ভারতে ৫জির আগমন আর কিছুটা সময়ের অপেক্ষা মাত্র। সেক্ষেত্রে এবার প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে আপামর ভারতবাসী এ বিষয়ে একদম নিশ্চিতভাবে আশ্বস্ত হতে পারলেন যে, খুব শীঘ্রই তাদের দরজায় কড়া নাড়তে চলেছে পরবর্তী প্রজন্মের দুরন্ত গতির নেটওয়ার্ক। বলে রাখি, উক্ত নিলামে দেশের চারটি প্রধান টেলিকম প্রযুক্তি সংস্থা – রিলায়েন্স জিও (Reliance Jio), ভারতী এয়ারটেল (Bharti Airtel), ভিআই (Vi বা ভোডাফোন আইডিয়া) এবং নতুন আদানি নেটওয়ার্কস (Adani Networks) অংশগ্রহণ করেছিল। আর এই কার্যক্রম থেকে সরকার দেড় লক্ষ কোটি টাকার ৫জি ব্যান্ড বিক্রি করেছে।

5G আসলে দেশের কোন কোন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন চোখে পড়বে?

এতদিন পর্যন্ত বিভিন্ন প্রযুক্তিগত খবরে, সোশ্যাল মিডিয়ার চর্চায় ৫জির সুবিধার কথা বলা হত। তবে এই নেটওয়ার্কের আগমন ঘটলে দেশের সর্বজনীন বিকাশের ক্ষেত্রে ঠিক কী কী উন্নতি লক্ষ্য করা যাবে, তার বেশ কিছু ঝলকও প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে ফুটে উঠেছে। মোদী জানিয়েছেন যে, ৫জি এলে নেটদুনিয়ায় রীতিমতো বিপ্লব ঘটে যাবে। এর ফলে যে শুধু ১০ গুণ দ্রুত ইন্টারনেট পরিষেবাই মিলবে তা নয়, দেশের বিভিন্ন প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে অনেক বিষয়ের ওপরও এর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। যেমন ৫জির কল্যাণে গেমিং সেক্টরে আমূল পরিবর্তন ঘটার পাশাপাশি মেটাভার্সের সঙ্গে জড়িত ইনোভেশন দেখতে পাওয়া যাবে। এছাড়া, শিক্ষাক্ষেত্র, চিকিৎসাক্ষেত্র, রিমোট চালিত পরিবহন মাধ্যম, এমনকি অনলাইন কেনাকাটার ক্ষেত্রেও বেশ বড়োসড়ো পরিবর্তন চোখে পড়বে।

তদুপরি, আসন্ন দুরন্ত গতির নেটওয়ার্ক সরকারের সিএসসি (CSC, কমন সার্ভিস সেন্টার) স্কিমকেও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করবে। ইতিমধ্যেই দেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে চার লক্ষ কমন সার্ভিস সেন্টারের উন্নয়নের জন্য জোরকদমে কাজ চলছে, যার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। এই সরকারী প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হল ডিজিটাল ইন্ডিয়া ভিশনকে ত্বরান্বিত করা। সেক্ষেত্রে ৫জির সৌজন্যে গোটা দেশে অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা সরবরাহের জন্য, ডিজিটাল উদ্যোক্তাদের কাছে এটি একটি অ্যাক্সেস পয়েন্ট হিসেবে পরিগণিত হবে। আর এর ফলস্বরূপ দেশের যে প্রভূত উন্নতিসাধন হবে, এমনটা চোখ বুজে আশা করা যায়।

কারা সর্বপ্রথম 5G পরিষেবা রোলআউট করবে?

তবে এসবের মধ্যে কারা সর্বপ্রথম এদেশে 5G রোলআউট করবে, সেটাও এই মুহূর্তে টেক মহলের আলোচ্য বিষয়। উল্লেখ্য, চলতি মাসের শুরুর দিকে Airtel দাবি করে যে, তারা আগস্টে ভারতে 5G চালু করা শুরু করবে। আবার, Reliance Jio-র চেয়ারপার্সন আকাশ আম্বানিও প্রায় একইরকম ইঙ্গিত দিয়েছেন। তাই 5G রোলআউটের দৌড়ে শেষ পর্যন্ত কে বিজয়ী হবে, তা নিয়ে মূলত এই সংস্থা দুটির মধ্যেই জোর টক্কর চলছে। অন্যদিকে সম্প্রতি পাওয়া খবর অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, Adani Group বিভিন্ন এন্টারপ্রাইজের জন্য প্রাইভেট 5G নেটওয়ার্ক তৈরি করবে। তবে নিয়মিত গ্রাহকদেরকে তারা কোনো নেটওয়ার্ক পরিষেবা প্রদান করবে কি না, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিতভাবে কিছু জানা যায়নি। এছাড়া, গোটা দেশে 5G রোলআউট করাকে কেন্দ্র করে Vi ঠিক কী পরিকল্পনা করছে, সেই বিষয়ে সংস্থাটির পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত বিশেষ কোনো তথ্য মেলেনি।