5G Swap: সর্বস্বান্ত করে দিতে পারে 5G, পরিষেবা উপভোগের আগে সতর্ক হোন

সুদীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে আজ অর্থাৎ ১ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, নয়াদিল্লির প্রগতি ময়দানে অনুষ্ঠিত ইন্ডিয়া মোবাইল কংগ্রেস (IMC) ২০২২ ইভেন্টে ভারতে 5G পরিষেবা লঞ্চের কথা ঘোষণা করেছেন। খবরটা ইতিমধ্যেই টেক দুনিয়ায় দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে, যার জেরে আপামর ভারতবাসীর মনে এই মুহূর্তে খুশির সীমা নেই বললেই চলে! নিঃসন্দেহে ভারতের ডিজিটাল যাত্রায় এক বিপ্লব আনতে চলেছে পঞ্চম প্রজন্মের নেটওয়ার্ক সার্ভিস। সরকারের দাবি অনুযায়ী, 5G বিদ্যমান 4G-র থেকে ১০ গুণ বেশি গতিসম্পন্ন হবে। সেক্ষেত্রে 5G-র মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি আসলে মানুষ অনেক সুবিধা পেতে সক্ষম হবেন ঠিকই, তবে এর পাশাপাশি বহু অসুবিধাও কিন্তু দেখা দিতে পারে। আসলে সম্প্রতি এক রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, 5G-র আগমনকে কাজে লাগিয়ে প্রতারকরা মুহূর্তের মধ্যে খালি করে দিতে পারে ইউজারদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট! কি, শুনে চমকে উঠলেন নাকি? হ্যাঁ, সেটা খুব স্বাভাবিক হলেও কথাটা কিন্তু ১০০% সত্যি।

5G রোলআউট হলে বাড়তে পারে সিম সোয়াপ জালিয়াতি

দ্য ইকোনমিক টাইমস (The Economic Times)-এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশেষজ্ঞদের মতে ৫জি চালু হওয়ার পর সিম সোয়াপ জালিয়াতির ঘটনা দ্রুত হারে বাড়তে পারে। আসলে পরবর্তী প্রজন্মের দুরন্ত গতির নেট সার্ভিস ব্যবহার করার জন্য গ্রাহকদেরকে তাদের সিম কার্ড আপগ্রেড করতে হবে, আর এই সুযোগেরই যথাযথভাবে সদ্ব্যবহার করবে হ্যাকাররা। এমনিতেই বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে অন্যের সিম কার্ড নিজের নামে পোর্ট করানোর মাধ্যমে লোক ঠকানোর ব্যবসা বেশ ভালোই রমরমিয়ে চলছে। সংশ্লিষ্ট ইউজারের অজান্তে এইরকম মোবাইল নম্বর পোর্টিং বা সিম কার্ড অদলবদল করার ঘটনাই ‘সিম কার্ড সোয়াপিং’ (Sim Card Swapping) নামে পরিচিত। তবে ৫জি-র আগমন ঘটলে এই ধরনের ভয়ঙ্কর ঘটনার সংখ্যা আরও বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই গ্রাহকদেরকে অবিলম্বে এ সম্পর্কে সচেতন হয়ে যেতে হবে। তাহলে আসুন, সিম সোয়াপ জালিয়াতি (SIM Swap Frauds) সম্পর্কে একটু বিশদে জেনে নেওয়া যাক।

সিম সোয়াপ জালিয়াতি কীভাবে ঘটে?

প্রতারকরা প্রথমে ফিশিং, ভিশিং, কিংবা স্মিশিং-এর মতো সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও পার্সোনাল ডিটেইলস এবং রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বর জোগাড় করে ফেলে। এরপর হ্যাকাররা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিটির আসল সিম কার্ডকে ব্লক করার জন্য চুরি করা যাবতীয় ডকুমেন্টসগুলিকে সাথে নিয়ে টেলিকম পরিষেবা সরবরাহকারীর সাথে যোগাযোগ করে এবং ওই একই নম্বরে একটি নতুন সিম কার্ড ইস্যু করে। আর হ্যাকারদের কাছে যথাযথ প্রমাণ থাকায় টেলিকম সার্ভিস প্রোভাইডাররাও তৎক্ষণাৎ তাদেরকে নতুন সিম কার্ড দিয়ে দেয়। এরপরে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পুরোনো সিম কার্ডটি ডিঅ্যাক্টিভেট হয়ে যায় এবং সেই নম্বরটিকে ব্যবহার করে যাবতীয় অসৎ কার্যকলাপ করতে শুরু করে স্ক্যামাররা। উল্লেখ্য যে, শুধু সিম সোয়াপই নয়, ফোন চুরি হয়ে গেলে কিংবা অজানা কোনো লিঙ্কে অসাবধানতাবশত ক্লিক করে ফেললেও এই ধরনের ঘটনা ঘটার সমূহ সম্ভাবনা থাকে।

ঘটনাটি যে কতটা বিপজ্জনক এবং এর ফলটা যে কী ভয়ঙ্কর হতে পারে, সে সম্পর্কে নিশ্চয়ই আর আলাদা করে কিছু বলে দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। এতক্ষণ পর্যন্ত যা বললাম, তা পড়ে নিশ্চয়ই আপনারা এর ফলাফল সম্পর্কে খানিকটা আঁচ করতে পারছেন। বাস্তবে, সিম সোয়াপ জালিয়াতির সুবাদে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সম্পূর্ণ অজান্তেই তার ফোন নম্বরের অ্যাক্সেস পেয়ে যাওয়ায় হ্যাকাররা সেই নম্বরে আসা যাবতীয় ব্যাংক ওটিপি (OTP)-কে কাজে লাগিয়ে গ্রাহকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এক নিমেষেই খালি করে দিতে পারে। এর পাশাপাশি ব্যবহারকারীদের অনেক গোপন তথ্যও স্ক্যামারদের নখদর্পণে চলে আসে, যেগুলিকে অপব্যবহার করে তারা ইউজারদেরকে আগামী দিনে ভয়ঙ্কর রকমের বিপদের সম্মুখীন করতে পারে।

সুরক্ষিত থাকতে হলে কী করবেন?

চলতি সময়ে নিত্যনতুন একাধিক উপায়ে গ্রাহকদেরকে প্রতারিত করার জন্য হ্যাকাররা অহরহ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে দুর্বৃত্তদের আটকানোর তো কোনো পথ নেই, তাই সুরক্ষিত থাকতে চাইলে ইউজারদেরকেই সবসময় চোখকান খোলা রেখে চলতে হবে। ডিপার্টমেন্ট অফ টেলিকমিউনিকেশনস (DoT) এর আগেও বহুবার গ্রাহকদেরকে সিম কার্ড জালিয়াতির সাথে সম্পর্কিত একাধিক বিষয়ে সতর্ক করেছে; আর সম্প্রতি তারা আবারও একবার 5G রোলআউটের পর ইউজারদেরকে সিম সোয়াপ জালিয়াতি সম্পর্কে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে। সংস্থার কর্মকর্তাদের মতে, যদি কারোর মোবাইল নম্বর হঠাৎ করে ডিঅ্যাক্টিভেট হয়ে যায় এবং যদি সেই নম্বরটি তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে, তাহলে অবিলম্বে তাকে তার মোবাইল অপারেটরের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। এছাড়া, সিম সোয়াপিংয়ের মতো অযাচিত প্রতারণার ঘটনা এড়াতে সর্বদা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্ট চেক করার পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময় অন্তর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করাও ইউজারদের জন্য একান্ত আবশ্যক। তদুপরি, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে কী কী ট্রানজ্যাকশন হচ্ছে, সেদিকেও ব্যবহারকারীদের সর্বক্ষণ কড়া নজর রাখতে হবে।