রতন টাটার কোম্পানির কারণেই 4G সার্ভিস চালু করতে ব্যর্থ BSNL, জানুন ভিতরের কারণ

একের পর এক পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার পর চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে এদেশে 4G পরিষেবা নিয়ে আসতে রীতিমতো বদ্ধপরিকর Bharat Sanchar Nigam Limited বা BSNL। দেশীয় প্রযুক্তির উপর নির্ভর করে গোটা দেশে 4G চালু করতে টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস বা টিসিএস (TCS) এবং সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট অফ টেলিম্যাটিক্স (C-DoT)-এর সাহায্য নিচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম সংস্থাটি। উল্লেখ্য যে, ২০২৩ সালের প্রথম দিকেই এই পরিষেবা উপলব্ধ হওয়ার কথা ছিল; তবে বর্তমানে তা আবারও পিছিয়ে গিয়েছে। কিন্তু বারংবার এরকম বিলম্বের কারণ কী? এর জবাবে সম্প্রতি BSNL জানিয়েছে যে, একসময় রতন টাটা চালিত কোম্পানি, TCS লাইভ কন্ডিশনে ফিল্ড ট্রায়াল শুরু না করার কারণেই এই ঘটনা ঘটছে। সংস্থার বিবৃতি অনুযায়ী, TCS-এর পক্ষ থেকে ২০০ টি সাইটের একটি পাইলট নেটওয়ার্ক সাপ্লাই এবং লঞ্চ করার কথা ছিল, যা বাস্তবে হয়ে ওঠেনি। এর ফলে BSNL-এর 4G পরিষেবার মুখ দেখার জন্য আপামর দেশবাসীকে আরও বেশ খানিকটা সময় অপেক্ষা করতে হবে।

BSNL-এর 4G পরিষেবা কবে আসবে, তা জানে কেবল সময়

উল্লেখ্য যে, প্রথমে গত বছরের আগস্ট মাসে নিশ্চিতভাবে এদেশে বিএসএনএলের ৪জি সার্ভিসের আগমন ঘটবে বলে জানা গিয়েছিল। তারপর আবার গত বছরের নভেম্বরে এই পরিষেবা রোলআউট হবে বলে আশায় বুক বেঁধেছিলেন আপামর জনগণ। এরপর বিএসএনএল জানায় যে, চলতি বছরের জানুয়ারির মধ্যেই ভারতে কোম্পানির ৪জি সার্ভিসের দেখা মিলবে। আবার, কিছুদিন আগেই ইলেকট্রনিক্স ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব (Ashwini Vaishnaw) বেশ জোর গলায় বলেছিলেন যে, আগামী মার্চ মাসের মধ্যেই এদেশে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিটির ৪জি পরিষেবা উপলব্ধ হবে। তবে সমস্ত জল্পনাকে মিথ্যে করে দিয়ে সম্প্রতি জানা গিয়েছে যে, ২০২৩ সালের দ্বিতীয়ার্ধে এদেশে ৪জি সার্ভিস লঞ্চ করবে বিএসএনএল। সেক্ষেত্রে এবার কবে নিশ্চিতভাবে ভারতে এই পরিষেবা পাওয়া যাবে, তার উত্তর একমাত্র সময়ের কাছেই রয়েছে৷

BSNL-এর 4G আদৌ চলতি বছরে রোলআউট হবে কি না, সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের অক্টোবরে ভারত সরকার ঘোষণা করে যে, তারা বিএসএনএলের জন্য আগামী ৫০০ দিনের মধ্যে ২৫,০০০ টি ৪জি টাওয়ার স্থাপনের পরিকল্পনা করছে। অন্যদিকে, পূর্বে সারা দেশে ১ লক্ষেরও বেশি সাইটকে ৪জি-তে আপগ্রেড করার কথা ভেবেছিল রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম সংস্থাটি। কিন্তু হালফিলে গোটা ব্যাপারটাই বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ এই পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করার জন্য সংশ্লিষ্ট অনুমোদন কমিটির কাছ থেকে এখনও পর্যন্ত সবুজ সংকেত পাওয়া যায়নি। হিন্দুবিজনেসলাইন (HinduBusinessLine)-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টিসিএসের ফিল্ড ট্রায়াল এখনও শুরু হয়নি। উপরন্তু, ৪জি-তে সাইটগুলিকে আপগ্রেড করার কাজও চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের আগে শেষ করা সম্ভব হবে না। ফলে ২০২৩ সালে সংস্থাটি আদৌ এদেশে ৪জি পরিষেবা রোলআউট করতে পারবে কি না, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই বেশ সংশয় দেখা দিয়েছে। যেহেতু ৪জি লঞ্চের টাইমলাইন সম্পর্কে সংস্থাটির কোনো প্রতিশ্রুতিই এখনও পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি, তাই অনেকেই মনে করছেন যে, ভারতে বিএসএনএলের ৪জি পরিষেবা আসতে আসতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়ও লেগে যেতে পারে।

BSNL-এর 4G পরিষেবা লঞ্চের বিলম্বের কারণে লাভবান হচ্ছে বেসরকারি টেলিকম কোম্পানিগুলি

উল্লেখ্য যে, এদেশে BSNL-এর 4G পরিষেবা যত দেরিতে আসবে, তত বেশি করে বেসরকারি টেলিকম কোম্পানিগুলি উপকৃত হবে। ইতিমধ্যেই ভারতের একাধিক শহরে 5G পরিষেবা রোলআউট করে ফেলেছে দেশের অন্যতম প্রধান দুই টেলিকম অপারেটর Reliance Jio এবং Airtel। বর্তমানে বিপুল সংখ্যক ইউজার নিজেদের 4G সিম মারফতই এই বিদ্যুৎ গতির নেট সার্ভিস সম্পূর্ণ সীমাহীনভাবে (আনলিমিটেড) ব্যবহার করার সুযোগ পাচ্ছেন। ফলে ভবিষ্যতে BSNL-এর 4G পরিষেবা যখন এদেশে উপলব্ধ হবে, তখন অনেক মানুষই 5G ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন। তাই সরকারি মালিকানাধীন টেলিকম কোম্পানিটির 4G সার্ভিস সম্পর্কে আপামর জনগণের আগ্রহ ততদিন পর্যন্ত বজায় থাকবে কি না, সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। সেক্ষেত্রে অধিকাংশ মানুষই যদি পঞ্চম প্রজন্মের নেটওয়ার্ক সার্ভিস ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে যান, তাহলে 4G পরিষেবা রোলআউট করা সত্ত্বেও প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকার ক্ষেত্রে BSNL আদৌ বেসরকারি কোম্পানিগুলিকে টেক্কা দিয়ে ব্যবসায় ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কি না, সেটা একমাত্র সময়ই বলতে পারবে।