5G টাওয়ারের রেডিয়েশন ক্ষতিকর? DoT এর নয়া নির্দেশে তুঙ্গে চর্চা

সুদীর্ঘ প্রতীক্ষার পর গত অক্টোবরের শুরুতে ভারতে রোলআউট হয়েছে 5G পরিষেবা। দেশের অন্যতম দুই প্রধান টেলিকম কোম্পানি Jio এবং Airtel ইতিমধ্যেই দিল্লি, মুম্বাই, বারাণসী সহ এদেশের বেশ কয়েকটি শহরে তাদের পঞ্চম প্রজন্মের নেটওয়ার্ক সার্ভিস উপলব্ধ করেছে, যার ফলে ইদানীংকালে অনেক ইউজাররাই নিজেদের 5G স্মার্টফোনে বিদ্যুৎ গতির ইন্টারনেট অ্যাক্সেস করতে সক্ষম হচ্ছেন। তবে এই ঝড়ের গতির নেট সার্ভিস ব্যবহারের মজা উপভোগ করতে চাইলে বিমানবন্দরের নিকটবর্তী অঞ্চলের বাসিন্দাদেরকে কিন্তু আরও বেশ কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে। কারণ সম্প্রতি ডিপার্টমেন্ট অফ টেলিকমিউনিকেশনস বা ডিওটি (DoT) সমস্ত টেলিকম কোম্পানিগুলিকে বিমানবন্দরের কাছে কোনো শক্তিশালী 5G টাওয়ার ইন্সটল না করার নির্দেশ দিয়েছে। ফলে যে সমস্ত শহরে ইতিমধ্যেই 5G রোলআউট হয়ে গিয়েছে, সেখানকার সমস্ত মানুষ এই দুরন্ত গতির নেট পরিষেবা পেতে সক্ষম হলেও বিমানবন্দরের কাছাকাছি অঞ্চলের বাসিন্দারা এখনই এই সুবিধা পাবেন না।

বিমানবন্দরের কাছাকাছি ইনস্টল করা যাবে না 5G বেস স্টেশন

ডিওটি টেলিকম অপারেটরদের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছে এবং তাদেরকে বিমানবন্দরের আশেপাশের ২.১ কিলোমিটার এলাকায় ৩.৩-৩.৬ গিগাহার্টজ ব্যান্ডের ৫জি বেস স্টেশন ইনস্টল না করার নির্দেশ দিয়েছে। টেলিযোগাযোগ বিভাগ স্পষ্টভাবে এদেশের সকল টেলিকম কোম্পানিগুলিকে জানিয়ে দিয়েছে, যে-কোনো ভারতীয় বিমানবন্দরের রানওয়ের উভয় প্রান্ত থেকে ২,১০০ মিটার এবং রানওয়ের সেন্টার লাইন থেকে ৯১০ মিটার দূরবর্তী অঞ্চলে কোনো ৩,৩০০-৩,৬৭০ মেগাহার্টজের ৫জি বেস স্টেশন স্থাপন করা যাবে না। মূলত ৫জি টাওয়ার থেকে নির্গত জোরালো বিকিরণ (বা রেডিয়েশন) যাতে রেডিও অল্টিমিটারের কোনো ক্ষতি না করতে পারে, তার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বহুদিন ধরেই 5G নেটওয়ার্কের কুপ্রভাব নিয়ে চলছে বিস্তর আলোচনা

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, দীর্ঘদিন ধরেই ৫জি নেটওয়ার্কের ‘কুপ্রভাব’ নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলছে। কেউ বলেন, ৫জি টাওয়ার থেকে নির্গত RF (রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি) রেডিয়েশনের প্রভাব মোটেও ভালো নয়। এর ফলে নাকি চাষের ক্ষতি হয় এবং ফলন কমে যায়। আবার কারোর মতে, মৌমাছি সহ অন্যান্য নানা পতঙ্গ এই জোরালো বিকিরণের জেরে পথভ্রষ্ট হয়, যার ফলে বিঘ্নিত হয় পরাগমিলনের প্রক্রিয়া এবং এর সরাসরি প্রভাব গিয়ে পড়ে ফলনের ওপর। আবার অনেকেই আশঙ্কা করেন যে, শুধু গাছপালা বা পশুপাখি নয়, মোবাইল টাওয়ারের জন্য মানুষের শরীরেও নানা ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। তবে এইসব সম্ভাবনার প্রসঙ্গ বিশেষভাবে ধোপে না টিকলেও সাম্প্রতিককালে ডিওটি-র তরফে নেওয়া আলোচ্য সিদ্ধান্তটি আরও একবার পুরানো বিতর্ককে উসকে দিয়েছে।

বিমানের রেডিও অল্টিমিটার এবং জিপিএসে হস্তক্ষেপ করতে পারে 5G রেডিয়েশন

সম্প্রতি ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল এভিয়েশন (DGCA) এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রক (Ministry of Civil Aviation) 5G ব্যান্ড সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছেন যে, বিমানের রেডিও অল্টিমিটার এবং জিপিএসে হস্তক্ষেপ করতে পারে 5G রেডিয়েশন। বিশেষত এর ফলে পুরোনো বিমানবন্দরগুলির ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তাই কোনোভাবেই বিমানবন্দরের কাছাকাছি অঞ্চলে 5G টাওয়ার ইনস্টল করা যাবে না। উল্লেখ্য যে, শুধু ভারতেই নয়, বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশের বিশেষজ্ঞরাই এই একই ধারণা পোষণ করে থাকেন। মার্কিন বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (Federal Aviation Administration)-এর মতে, 5G টাওয়ার কোনো বিমানকে রানওয়েতে থামতে বাধা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে বিমানবন্দরের নিকটবর্তী অঞ্চলের বাসিন্দাদেরকে দুরন্ত গতির পঞ্চম প্রজন্মের নেটওয়ার্ক পরিষেবা প্রদান করার ক্ষেত্রে ভারতের টেলিকম মন্ত্রক আগামী দিনে কী সিদ্ধান্ত নেয়, এখন সেটাই দেখার।