বর্ষায় গাড়ির যত্ন-আত্তি করুন এই ভাবে, প্রচন্ড বৃষ্টি ও জলমগ্ন জায়গাতেও থাকবেন নিশ্চিন্তে

গোটা মে মাস এবং জুন মাসের শুরুর দিকে তাপপ্রবাহের বাউন্সার সামলেছি আমরা। অবশেষে বর্ষার আগমনে গরমের সেই গলদঘর্ম অবস্থা থেকে স্বস্তি মিলেছে অনেকটাই। মৌসুমী অক্ষরেখার কল্যাণে দেশের সর্বত্রই বজ্রগর্ভ মেঘের আনাগোনা। মাঝেমধ্যেই একটানা কয়েক পশলা বৃষ্টিতেই জলমগ্ন হয়ে পড়ছে এলাকা। তবে এই বৃষ্টির দিনে কিন্তু বাড়তি হ্যাপা সামলাতে হয় গাড়ি মালিকদের। কারণ জলের সঙ্গে ধাতব জিনিসের শত্রুতা চিরকালের। গাড়ির বেশিরভাগ অংশই যেহেতু ধাতব উপাদানে তৈরি এবং তার সাথে রয়েছে বিভিন্ন প্লাস্টিকের অংশ, তাই বর্ষা ঋতুতে চার চাকার যত্ন একটু আলাদাভাবেই নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। বর্ষার বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে আমাদের যেমন ছাতার প্রয়োজন হয় তেমনভাবেই এই সময়ে আগলে রাখতে হবে গাড়িটিকেও।

যেহেতু বর্ষাকালের সময় গড় তাপমাত্রা খানিকটা নিম্নমুখী থাকে তাই এই সময়েই অনেকে গাড়ি নিয়ে দূরে ভ্রমণের পরিকল্পনা করে থাকেন। এমনিতেও এই সময়ের নির্মল পরিবেশ শরীরের বাড়তি অক্সিজেন যোগায়। তাই বর্ষার দিনে গাড়ি নিয়ে রোড ট্রিপে বেরোনোর আগে সামান্য কিছু দিক নজরে রাখতে হবে সবাইকে।

বর্ষায় গাড়ির যত্ন নেওয়ার 5টি টিপস –

গাড়ির বাইরের অংশে ওয়াক্স পলিশ

বৃষ্টির সময় গাড়ির বাইরের অংশে ধুলো, ময়লা এবং কাদা জমার সম্ভাবনা প্রবল। একটানা মুষলধারে বৃষ্টিতে গাড়ির বাইরের সারা শরীর ধুয়ে গেলেও পরবর্তীতে চাকার সঙ্গে রাস্তার কাদা ও ময়লা অতি দ্রুত জমা হতে থাকে গাড়ির বিভিন্ন অংশে। তাই এই সময় আপনার গাড়িটিকে এই ধুলো ময়লার হাত থেকে বাঁচাতে সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার করা প্রয়োজন। একবার জলের সাহায্যে বাইরের অংশ ধুয়ে নিয়ে তারপর মাইক্রো ফাইবার যুক্ত কাপড় দিয়ে পুরোটা শুকনো করে মুছে ফেলতে হবে। এই সময় প্রয়োজনে কার ওয়াক্স পলিশ লাগানো যেতে পারে। এটি জলের হাত থেকে গাড়ির নিজস্ব রং রক্ষা করবে এবং উজ্জ্বলতা বজায় রাখবে।

নষ্ট হয়ে যাওয়া ওয়াইপার ব্লেড পরিবর্তন

বর্ষাকালে প্রবল বৃষ্টির মধ্যে গাড়ি চালানোর সময় সামনের উইন্ডস্ক্রীন পরিষ্কার রাখতে ওয়াইপার ব্লেডের জুড়ি মেলা ভার। সেই কারণেই এই ব্লেডের রবারের অবস্থা সঠিক থাকা প্রয়োজন। নয়তো সামনের কাচের উপর জলকণার দাগ থেকে গিয়ে সামনের দৃশ্য ঝাপসা হয়ে যাবে। গরমের সময় দীর্ঘদিন ওয়াইপার ব্লেডের ব্যবহার না হওয়ায় রবারের গ্যাসকিট অতিরিক্ত তাপমাত্রায় নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই এই সময় রোড ট্রিপে বেরোনোর আগেই ভালো করে দেখে নিন ওয়াইপার ব্লেডের অবস্থা। যদি এগুলি নষ্ট হয়ে গিয়ে থাকে বলে মনে হয় তবে অবশ্যই বাড়িতে বসেই বদলে ফেলুন। উন্নত মানের ওয়াইপার ব্লেড ব্যবহার করতে পারলে বৃষ্টির দিনেও স্বাচ্ছন্দে গাড়ি নিয়ে চলতে পারবেন। যদি কখনো এই ওয়াইপার ব্লেড ব্যবহার করার প্রয়োজন না পড়ে সে ক্ষেত্রে কাচের থেকে সামান্য উপরে তুলে রাখলে ঠিক থাকবে।

গাড়ির আলোর যত্ন নেওয়া

বর্ষাকালে এমনিতেই অতিরিক্ত বর্ষণের সময় দৃশ্যমানতা তুলনামূলকভাবে কমে আসে। সেই সময় গাড়ির হেডলাইট, টেললাইট এবং ইন্ডিকেটর বাড়তি সুরক্ষা যোগায়। সে কারণেই লাইটের পারফরমেন্স সঠিক হচ্ছে কিনা সেই বিষয়টিতে নজর দিতে হবে। সামনের রাস্তা পরিষ্কারভাবে দেখা হোক কিংবা অন্য গাড়ির চালকদের সিগন্যাল দেওয়া সর্বক্ষেত্রেই প্রয়োজন পরে গাড়ির এই আলোগুলির। পর্যবেক্ষণ করার সময় যদি হেডলাইট, টেললাইট এবং ইন্ডিকেটর লাইটে কোনো ধরনের সমস্যা বলে মনে হয় তবে প্রশিক্ষিত মেকানিক দিয়ে সেগুলি পরিবর্তন করে নেওয়াই শ্রেয়। এমনকি দৃশ্যমানতার সঠিক রাখতে এই আলোর সামনের দিক সর্বসময় পরিষ্কার রাখা বাঞ্ছনীয়।

ব্রেকিং সিস্টেমের অবস্থা যাচাই

যে কোনো যানবাহনের ক্ষেত্রেই সুরক্ষা ব্যবস্থার একদম প্রাইমারি লেভেলে রয়েছে তার ব্রেকিং সিস্টেম। আপৎকালীন পরিস্থিতিতে প্রতিরক্ষার অন্যতম অস্ত্র হলো এই ব্রেক। সেজন্যই গাড়ির ব্রেকের কার্যকারিতা সব সময় সঠিক হওয়া প্রয়োজন। এমনিতেই বর্ষার সময়ে রাস্তা ভিজে থাকায় চাকার আঁকড়ে ধরার ক্ষমতা খানিকটা হলেও কমে আসে। এই সময় ব্রেকের সঠিক ব্যবহার না করতে পারলেই বিপদ অবশ্যম্ভাবী। ব্রেকপ্যাডের অবস্থা ও ব্রেক ফ্লুইড এর লেভেল এগুলি আগে থাকতেই যাচাই করে নিন।

টায়ারের অবস্থা এবং সঠিক হাওয়ার পরিমাণ

আমরা অনেক সময় টায়ারের অবস্থাকে তেমন নজর দেওয়ার প্রয়োজন অনুভব করি না। কিন্তু গাড়ির টায়ারের অবস্থার উপর তার সামগ্রিক পারফরমেন্স অনেকটাই নির্ভর করে। বৃষ্টির সময় পিচ্ছল রাস্তায় সঠিকভাবে চলতে হলে উন্নত মানের টায়ার ব্যবহার করতে হবে। সেই কারণেই টায়ারের স্বাস্থ্যও যেমন ভালো থাকা প্রয়োজন, তেমনই এর মধ্যে থাকা বাতাসের পরিমাণ গাড়ির ম্যানুয়াল বইতে রেঞ্জ অনুসারে রাখতে হবে। অতিরিক্ত কিংবা অল্প হাওয়া ভরা থাকলে গাড়ির পারফরমেন্স কিন্তু অনেকটাই কমে আসে। এর সাথেই টায়ারের গায়ে থাকা খাঁজ কাটা অংশগুলির গভীরতা নিয়মিত পর্যবেক্ষণের রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।