Samsung Galaxy S20+ ফোনের ডিসপ্লে সমস্যা নিয়ে জেরবার বহু ভারতীয় ইউজার

লঞ্চ-পরবর্তী সময় থেকে Samsung Galaxy S22 সিরিজ সম্পর্কে একাধিক অভিযোগ সামনে এসেছিল। এবার নালিশের ভাগিদারী হল ২০২০ সালের প্রথমার্ধে আত্মপ্রকাশ করা Samsung Galaxy S20+ মডেলটিও।…

লঞ্চ-পরবর্তী সময় থেকে Samsung Galaxy S22 সিরিজ সম্পর্কে একাধিক অভিযোগ সামনে এসেছিল। এবার নালিশের ভাগিদারী হল ২০২০ সালের প্রথমার্ধে আত্মপ্রকাশ করা Samsung Galaxy S20+ মডেলটিও। কিছু ভারতীয় ব্যবহারকারী জানিয়েছেন, তাদের S-সিরিজের এই ফোনের ডিসপ্লেতে গোলাপী বা সবুজ রঙের উল্লম্ব রেখা প্রতীয়মান হতে শুরু করেছে। ক্ষতিগ্রস্থ ইউজারদের একটি বড় অংশ সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তাদের এই সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন এবং একই সাথে কিছু সংখ্যক মানুষ স্যামসাং কমিউনিটি ফোরামে অভিযোগও পোস্ট করেছেন। তবে, পুরো ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, সমস্যাটি একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক Samsung Galaxy S20+ ব্যবহারকারীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ বলে মনে হচ্ছে। প্রসঙ্গত, ভুক্তভোগীদের মধ্যে কয়েকজন মনে করছেন যে, সাম্প্রতিক ওয়ান ইউআই (One UI) ওএস আপডেট পাওয়ার পর থেকেই তাদের ফোনে ডিসপ্লে জনিত এই সমস্যাটি দেখা দিতে শুরু করেছে।

গোলাপি-সবুজ রঙের উল্লম্ব রেখা ভেসে উঠছে Samsung Galaxy S20+ ফোনের ডিসপ্লেতে

মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটারে প্রথমে কিছু ইউজার বলেছেন যে, স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২০+ স্মার্টফোনের ডিসপ্লেতে হঠাৎ করে গোলাপী বা সবুজ রঙের উল্লম্ব (ভার্টিক্যাল) রেখা আবির্ভূত হতে দেখা গেছে। সব থেকে আশ্চর্যের বিষয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অভিযোগকারীরা জানিয়েছেন যে, তাদের ফোন কোনো ভাবে হাত থেকে পড়ে যায়নি বা দুর্ঘটনার কবলে পড়েনি। ফলত, কোনও দুর্ঘটনা ছাড়াই উল্লম্ব রেখাগুলির আকস্মিক উপস্থিতির সঠিক কারণ কি হতে পারে তা এই মুহুর্তে অজানা। তবে কিছু অভিযোগকারীর দাবি, ফোনে ওয়ান ইউআই ৪.০১ (One UI 4.01) ইনস্টল করার পরই এই সমস্যা দেখা দিয়েছে।

এমত পরিস্থিতিতে, ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবহারকারীরা তাদের গ্যালাক্সি এস২০+ ফোনকে নিকটস্থ সার্ভিস সেন্টারে নিয়ে যান। যেখানে তাদের স্ক্রিন রিপ্লেসমেন্ট বা প্রতিস্থাপন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। জানিয়ে রাখি, আলোচ্য প্রিমিয়াম রেঞ্জের এই ফোনের স্ক্রিন পরিবর্তনের জন্য প্রায় ১৫,৫০০ টাকা চার্জ করা হয় বলে এক গ্যালাক্সি এস২০+ মালিক দাবি করেছেন। ২০২০ সালে এই হ্যান্ডসেটকে ৭৩,৯৯৯ টাকায় লঞ্চ করা হয়েছিল। ফলে দেখতে গেলে, স্ক্রিন রিপ্লেসমেন্ট করানোর জন্য ফোনের অফিসিয়াল দামের ২০% এরও বেশি খরচ করতে হবে ব্যবহারকারীদের। প্রসঙ্গত, এই মডেলটিকে বিভিন্ন চ্যানেলের মাধ্যমে বর্তমানে প্রায় ৫৫,০০০ টাকায় কেনা যাচ্ছে।

যাইহোক, স্যামসাং কমিউনিটি ফোরামে অভিযোগ দায়ের করা এক ব্যবহারকারী জানিয়েছেন যে, স্যামসাং সাপোর্ট টিম এই সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছে এবং তাকে জানানো হয়েছে যে লাইনগুলি স্বাভাবিক ইউসেজ বা ব্যবহারের সময় উপস্থিত হয়েছিল। এক্ষেত্রে ব্যক্তিটি স্যামসাং সাপোর্ট টিমের সাথে কথোপকথনের একটি স্ক্রিনশট শেয়ার করেছেন। যেখানে, সংস্থার তরফ থেকে ক্ষতিপূরণ হিসাবে সেই ব্যক্তিকে মোট রিপেয়ারিং চার্জের অর্থাৎ ১৫,৫১৫ টাকার ২৫% ডিসকাউন্ট অফার করতে দেখা গেছে।

অ্যান্ড্রয়েড পুলিশের (Android Police) একটি সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুসারে, গত বছরের আগস্ট মাস থেকেই Samsung Galaxy S20+ ফোনে উল্লম্ব রেখা দেখা দিতে শুরু করেছিল। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, এই ডিসপ্লে কেন্দ্রিক সমস্যাটি এমন ডিভাইসগুলিতে প্রদর্শিত হচ্ছে, যেগুলির ওয়ারেন্টি পিরিয়ড শেষ হয়ে গেছে৷ যার অর্থ, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ফোনের ডিসপ্লে প্যানেল প্রতিস্থাপনের রিপেয়ারিং চার্জ নিজেদের পকেট খালি করে দিতে হবে।

রিপোর্টে আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই সমস্যা হয়তো স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২০+ মডেলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কারণ, সিরিজের স্ট্যান্ডার্ড মডেল Galaxy S20 বা টপ-এন্ড ভ্যারিয়েন্ট Galaxy S20 Ultra -তে এরূপ কোনো সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে এখনো অবধি কোনো অভিযোগ সামনে আসেনি। তবে, এটা এখনও স্পষ্ট নয় যে, ভারত ব্যতীত অন্যান্য বাজারে বিদ্যমান গ্যালাক্সি এস২০+ ফোন উল্লম্ব রেখার সমস্যা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে কিনা। কেননা, এযাবৎ শুধুমাত্র ভারতীয় ইউজাররাই এই অভিযোগ রিপোর্ট করেছে।

প্রসঙ্গত, এটা প্রথমবার নয় যখন আমরা স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২০+ ব্যবহারকারীদের ডিসপ্লে জনিত সমস্যা নিয়ে অভিযোগ করতে দেখছি। কিছু সময় পূর্বে, স্বল্প সংখ্যক ব্যবহারকারী স্ক্রীন-অফ-ডেথ সমস্যার কথা জানিয়েছিলেন। যেখানে ফোনের ডিসপ্লেতে সাদা বা সবুজ প্যাচ তৈরি হচ্ছে এবং সময়ের সাথে তা আরও খারাপের দিকে এগোচ্ছে বলে দাবি করা হয়েছিল। আবার, Samsung Galaxy S20 Ultra মডেলেও এই অনুরূপ সমস্যা উপস্থিত হয়েছিল বলে জানা যায়।

এই মুহূর্তে স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২০+ স্মার্টফোনের ভার্টিকাল ডিসপ্লে লাইন বা উল্লম্ব রেখা প্রতীয়মান হওয়ার এই সমস্যা সম্পর্কে স্যামসাং কোনও মন্তব্য প্রদান করেনি। তবে, ক্ষতিগ্রস্থদের বাড়তে থাকা সংখ্যার নিরিখে টেক সংস্থাটি শীঘ্রই কোনো পদক্ষেপ নেবে বলে আমরা আশা করি।