সার্ভিস সেন্টার বা মেকানিকের ভরসা ছাড়ুন, এক ক্লিকে শিখে নিন গাড়ির ব্যাটারি বদলের জলভাত পদ্ধতি

একটি গাড়ির প্রাণভোমরা ইঞ্জিন হলেও তাকে চালু করা কিংবা অন্যান্য যে কোনো বৈদ্যুতিক কাজকর্ম সম্পাদনের জন্য ব্যাটারির ভূমিকা অনস্বীকার্য। ব্যাটারিতে কোনো কারনে পর্যাপ্ত চার্জ না…

একটি গাড়ির প্রাণভোমরা ইঞ্জিন হলেও তাকে চালু করা কিংবা অন্যান্য যে কোনো বৈদ্যুতিক কাজকর্ম সম্পাদনের জন্য ব্যাটারির ভূমিকা অনস্বীকার্য। ব্যাটারিতে কোনো কারনে পর্যাপ্ত চার্জ না থাকলে গাড়ি চালু করা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। সেই কারণেই প্রতি মুহূর্তে ব্যাটারির চার্জ সঠিক মাত্রায় রয়েছে কিনা তা পরখ করা প্রয়োজন। যদিও ব্যবহারের সঙ্গে ব্যাটারির আয়ু ক্ষয় হওয়া যথেষ্ট স্বাভাবিক। তাই নষ্ট ব্যাটারি বদলে ফেলা ছাড়া তখন আর কিছুই করার থাকে না।

ব্যাটারি বদলের জন্য অনেকেই ছোটেন নিকটবর্তী কোনো মেকানিকের কাছে। আবার অনেকেই এই সামান্য কাজের জন্যও ভরসা রাখেন অনুমোদিত সার্ভিস সেন্টার এর উপরেই। তবে গাড়ির ব্যাটারি বদল করার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি কে.সি. নাগের নল চৌবাচ্চার অঙ্ক সমাধানের তুলনায় যথেষ্ট সহজ। এর জন্য প্রয়োজন সামান্য কিছু যন্ত্রপাতি এবং নির্দিষ্ট কিছু পদ্ধতি অবলম্বন। কীভাবে নিজে থেকেই সহজে গাড়ির ব্যাটারি পাল্টাবেন তার টিপস রইল আজকের প্রতিবেদনে।

ব্যাটারির অবস্থান নির্ণয়

প্রথমেই গাড়িটিকে একটি সঠিক জায়গায় পার্ক করে তার ইঞ্জিনটি বন্ধ করুন। এমনকি চাবিটিও বের করে নেওয়া উচিত। এরপর ইঞ্জিন সংলগ্ন স্থানটি সাধারণ তাপমাত্রায় আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। সাধারণত বেশিরভাগ গাড়িতেই সামনের বনেটের মধ্যেই থাকে তার ব্যাটারি। তবে কিছু ক্ষেত্রে তা পিছনের দিকেও একটি ট্রাঙ্কের মধ্যে লাগানো থাকে। গাড়ির ব্যাটারির অবস্থান কোথায় রয়েছে তা প্রথমেই নির্ণয় করা প্রয়োজন।

ব্যাটারির সংযোগ ছিন্ন করা

একটি ছোট ট্যাবলেট ব্যাটারি হোক কিংবা বড় আকারের গাড়ির ব্যাটারি সব ক্ষেত্রেই এর মধ্যে থাকে দুটি টার্মিনাল। এটি কালো রংয়ের নেগেটিভ (-) পোর্ট, আর অন্যটি লাল রংয়ের পজিটিভ (+) পোর্ট। অনেক সময়ই এই অংশ দুটিকে আলাদা একটি প্লাস্টিকের কভার দিয়ে ঢাকা থাকে। প্রথমেই নেগেটিভ পোর্টটি থেকে সংযুক্ত বর্তনী ছিন্ন করে তারপর পজিটিভ পোর্টে হাত দেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে অবশ্যই হাতে গ্লাভস এবং চোখে চশমা পরে থাকবেন। এই টার্মিনাল দুটি সঙ্গে সংযুক্ত তার অনেক সময়ই নাট-বোল্টের মাধ্যমে চেপে লাগানো থাকে। রেঞ্জের সহযোগে সেগুলি খুলে ফেলুন। বর্তনী ছিন্ন করার এই কাজটি দ্রুততার সঙ্গে না করাই শ্রেয়।

পুরনো ব্যাটারি বের করা

গাড়ির মধ্যে ব্যাটারিটিকে দৃঢ়ভাবে আটকে রাখতে অনেক সময় লোহার তৈরি ক্লাম্পের সাহায্যে সেটিকে আটকানো থাকে। তাই প্রথমেই এই ক্ল্যাম্পের বোল্ট গুলি খুলে নেওয়া প্রয়োজন। মনে রাখবেন গাড়িতে ব্যবহৃত ব্যাটারির মধ্যে থাকে ক্ষতিকারক অ্যাসিড। তাই অতি সাবধানে সম্পূর্ণ সোজা করা অবস্থায় ব্যাটারীটিকে বাইরে বের করে আনুন।

ব্যাটারি ট্রে এবং টার্মিনাল পরিষ্কার করা

চার্জ গ্রহণ এবং বর্জনের ফলে ব্যাটারির টার্মিনাল দুটিতে এক ধরনের সালফারের আস্তরণ জমে খুব স্বাভাবিকভাবেই। তাই পুরনো ব্যাটারি বের করার পরে প্রথমেই এই দুটি টার্মিনালকে ভালোমতো পরিষ্কার করা প্রয়োজন। ব্রাশ এবং ব্যাটারি ক্লিনার এক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। অনেক সময় আবার বেকিং সোডা সহযোগেও এই কাজ সম্পাদন করা সম্ভব। ব্যাটারির পাশাপাশি তার ট্রে-ও সঠিকভাবে পরিষ্কার করা উচিত। পুরনো ব্যাটারিটি পুনরায় ব্যবহারের পূর্বে তা সম্পূর্ণভাবে শুকিয়ে নেওয়া আবশ্যক। তাছাড়াও ব্যাটারির সঙ্গে সংযুক্ত তারগুলিকেও পরখ করে নেওয়া উচিত।

নতুন ব্যাটারি লাগানো

নতুন ব্যাটারি লাগানোর ক্ষেত্রেও রেড ও ব্ল্যাক টার্মিনালের স্থান সঠিক হওয়া আবশ্যক নয়তো ঘটতে পারে বড়সড়ো দুর্ঘটনা। প্রথমেই ব্যাটারির কেসিংয়ের মধ্যে তাকে সঠিকভাবে বসিয়ে ক্ল্যাম্প এর বোল্টগুলি টাইট করে দিতে হবে। এরপর প্রথমে পজিটিভ টার্মিনাল ও তারপর নেগেটিভ টার্মিনাল নাট-বোল্টের মাধ্যমে গাড়ির সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে এই টার্মিনাল দুটিতে এক বিশেষ ধরনের পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে দিলে এগুলির ক্ষয় হওয়ার প্রবণতা অনেকটাই কমে আসে। ব্যাটারির সংযোগ সম্পূর্ণ হওয়ার পর গাড়ি স্টার্ট দিয়ে পরখ করে নেবেন।