Mobile Phone: ফোনে কথা বললে হৃদরোগের ঝুঁকি, উদ্বেগ বাড়াচ্ছে গবেষকদের নতুন রিপোর্ট

Avatar

Published on:

Mobile Phone Calls Risk

বর্তমানে আমাদের যেকোনো সমস্যা সমাধানের মাধ্যম হয়ে উঠেছে স্মার্টফোন। আর তাই জন্য এই মুঠোবন্দি ডিভাইসটি আমাদের প্রত্যেকের জীবনের একটা অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে। তবে কথায় আছে, প্রত্যেকটা ভালো জিনিষের একটা খারাপ দিকও আছে। আমরা স্মার্টফোন ব্যবহারের নানাবিধ খারাপ দিক সম্পর্কে এর আগেও জেনেছি। সম্প্রতি আবার একটি স্টাডি থেকে উঠে এসেছে যে, অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের কারণে উচ্চ-রক্তচাপের (হাইপারটেনশন) সমস্যা দেখা দিতে পারে।

অত্যাধিক মোবাইল ব্যবহার উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়াতে পারে

ইউরোপিয়ান সোসাইটি অফ কার্ডিওলজি (ESC) প্রকাশিত একটি নতুন জার্নাল অনুসারে, প্রতি সপ্তাহে ৩০ মিনিট বা তার বেশি সময় ধরে সেল-ফোনে কথা বললে উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার ঝুঁকি ১২% বৃদ্ধি পেতে পারে। এই গবেষণার সাথে যুক্ত চীনের সাউদার্ন মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জিয়ানহুই কিন (Xianhui Qin) বলেছেন যে – “একজন ব্যক্তি কত মিনিট মোবাইলে কথা বলছেন সেই সময়ের উপর নির্ভর করবে তার হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের অবস্থা। বেশি সময় ধরে ফোনে কথা বলার অর্থ হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া “।

সার্ভে বলছে, বিশ্বব্যাপী ৩০ থেকে ৭৯ বছর বয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ১৩০ কোটি প্রাপ্তবয়স্কের উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেশন -এর সমস্যা আছে। আর উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হওয়ার অন্যতম একটি প্রধান কারণ। এমনকি বর্তমানে বিশ্বব্যাপী অকাল মৃত্যুর জন্যও দায়ী এই সমস্যাটি। তবে শুধুমাত্র অতিরিক্ত চিন্তিত থাকলে, বিশ্রাম কম নিলে বা জেনেটিক কারণে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দেয় – এই ভাবনা এখন ভুল প্রমাণিত হয়েছে। গবেষণায় উঠে এসেছে, অত্যাধুনিক মোবাইলগুলির থেকে যে নিম্ন স্তরের রেডিওফ্রিকোয়েন্সি এনার্জি নির্গত হয় তা স্বল্পমেয়াদী এক্সপোজারের পরে মানুষের দেহে রক্তচাপ বৃদ্ধি করায়। কিন্তু দেখতে গেলে, বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় তিন-চতুর্থাংশ মোবাইল ফোন মালিকের বয়স ১০ বছর বা তার কিছুটা বেশি। ফলে খুবই অল্প বয়স থেকে মানুষের মধ্যে হাইপারটেনশনের বীজ রোপন হয়ে যাচ্ছে। ফলস্বরূপ বয়স ৩০-এর গোড়ায় পৌঁছতে না পৌঁছতেই হৃদরোগের উপসর্গ দেখা দিচ্ছে মানুষের মধ্যে।

জিয়ানহুই কিন, ফোন কল করা বা গ্রহণ করার সাথে হাইপারটেনশনের কিরূপ সম্পর্ক বুঝতে পরীক্ষাটি করেছেন। এই গবেষণায়, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা নেই এমন ৩৭ থেকে ৭৩ বছর বয়সী মোট ২,১২,০৪৬ জন প্রাপ্তবয়স্কদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। ভয়েস কল করা / গ্রহণ করার জন্য মোবাইল ফোনের ব্যবহার সম্পর্কিত তথ্য বেসলাইনে একটি সেলফ-রিপোর্টেড টাচস্ক্রিন প্রশ্নাবলীর মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়।

মূলত – কত বছর ধরে মোবাইল ব্যবহার করা হচ্ছে, প্রতি সপ্তাহে কত ঘন্টা মোবাইলে কাটানো হয় এবং হ্যান্ডস-ফ্রি ডিভাইস/স্পিকারফোন ব্যবহার করা সংক্রান্ত কিছু প্রশ্ন করা হয়েছিল অংশগ্রহণকারীদের। তদুপরি মোবাইল ফোনের ব্যবহার এবং উচ্চ রক্তচাপের মধ্যে সম্পর্ক বুঝতে, অংশগ্রহণকারীদের – বয়স, লিঙ্গ, বডি মাস ইনডেক্স, জাতি, ডিপ্রিভেশন, উচ্চ রক্তচাপের পারিবারিক ইতিহাস, শিক্ষাগত যোগ্যতা, ধূমপানের অভ্যাস, রক্তচাপ, ব্লাড লিপিড, ইনফ্লামেশন, ব্লাড গ্লুকোজ, কিডনির কার্যকারিতা এবং কোলেস্টেরল বা ব্লাড গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে ওষুধের ব্যবহার করা হয় কিনা – এই সম্পর্কিত তথ্যও বিশ্লেষণ করেছেন গবেষকরা।

গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের গড় বয়স ছিল ৫৪ বছর। যার মধ্যে ৬২% মহিলা এবং ৮৮% মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী ছিলেন। মোট ১২ বছর ধরে পরীক্ষা করে দেখা যায় – ১৩,৯৮৪ জন (৭%) অংশগ্রহণকারীর মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দিয়েছে। অর্থাৎ, মোবাইল ব্যবহার করেন না এমন ব্যক্তিদের তুলনায় মোবাইল ব্যবহারকারীদের উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি ৭% বেশি থাকছে। আরও বিস্তারিতভাবে গবেষণার ফলাফল সম্পর্কে বললে – প্রতি সপ্তাহে ৫ মিনিটের কম সময় মোবাইলে ব্যয় করা অংশগ্রহণকারীদের তুলনায় যাদের সাপ্তাহিক কল টাইম ৩০-৫৯ মিনিট, ১-৩ ঘন্টা, ৪-৬ ঘন্টা এবং ৬ ঘন্টার বেশি ছিল তাদের ক্ষেত্রে যথাক্রমে ৮%, ১৩%, ১৬% ও ২৫% উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি দেখা দিতে পারে। এই ফলাফল মহিলা এবং পুরুষদের জন্য অনুরূপ এসেছে।

এই বিষয়ে প্রফেসর কিন বলেছেন – “আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে যে, যদি সাপ্তাহিক কল টাইম আধ ঘণ্টার নিচে রাখা হয়, তবে মোবাইলে কথা বলা উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিকে প্রভাবিত করতে পারবে না। তাই হৃদরোগ থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য মোবাইল ফোনে কম কথা বলাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।”

সঙ্গে থাকুন ➥