যন্ত্রমেধার যুগে স্মার্টফোনের আসক্তি কাটানো যে বেশ শক্ত তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু, এটা করতে পারলে তার ফসল হাতেনাতে পাবেন আপনি! সম্প্রতি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, স্মার্টফোন থেকে ৭২ ঘণ্টার সংক্ষিপ্ত বিরতি বা ডিজিটাল ডিটক্স মানুষের মস্তিষ্কে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। এমনকী, মস্তিষ্ক চাঙ্গা করে দিতে পারে ডিজিটাল ডিটক্স।
মূলত, স্মার্টফোন এখন আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমানো পর্যন্ত, মোবাইল ফোন কখনই আমাদের থেকে এক হাতের বেশি দূরে থাকে না। তবে এই অভ্যাস থেকে যদি কয়েক দিনের জন্য বিরতি নেন, তাহলে আপনার মস্তিষ্কে মৌলিক পরিবর্তন আসতে পারে।
স্মার্টফোনের ডিটক্স কীভাবে মস্তিষ্কের কার্যকলাপকে প্রভাবিত করে?
স্মার্টফোনের ব্যবহার কমিয়ে মস্তিষ্কের রসায়নকে কীভাবে প্রভাবিত করে তা অনুসন্ধান করা হয়েছে কম্পিউটার ইন হিউম্যান বিহেভিয়ার একটি গবেষণায়। এই পরীক্ষায়, তরুণদের ৭২ ঘন্টার স্মার্টফোন ডিটক্স করার অনুরোধ করা হয়েছিল। এই সময়ে, ব্যবহারকারীদের শুধু কাজ, রুটিন কার্যকলাপ, অথবা ঘনিষ্ঠ পরিবার এবং সঙ্গীর সাথে কথা বলার মতো প্রয়োজনীয় উদ্দেশ্যে তাদের ফোন ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
তিন দিনের গবেষণায় বিজ্ঞানীরা অংশগ্রহণকারীদের মস্তিষ্কের কার্যকলাপ স্ক্যান করার জন্য ফাংশনাল ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (fMRI) ব্যবহার করেন। ফলাফলে দেখা গিয়েছে যে, স্মার্টফোন ব্যবহার বন্ধ করার ফলে মস্তিষ্কে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হতে পারে। এই পরিবর্তনগুলি অনেকটা মাদক বা অ্যালকোহল আসক্তির ক্ষেত্রে রিপোর্ট করা লোকেদের মতোই ছিল।
এই গবেষণায় ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী ২৫ জন অংশগ্রহণকারী ছিলেন। যাদের পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে স্মার্টফোন ব্যবহারের সমস্যা, মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা এবং গেম খেলার অভ্যাসের জন্য স্ক্রিনিং করা হয়েছিল। তিন দিন পর মস্তিষ্কের স্ক্যানগুলিতে কিছু অংশের কার্যকলাপ দেখা গেছে, যা ডোপামিন এবং সেরোটোনিনের সাথে যুক্ত। এগুলি মেজাজ, আবেগ এবং আসক্তি নিয়ন্ত্রণের সাথে সম্পর্কিত।
সাম্প্রতিক সময়ে”স্মার্টফোন আসক্তি” ধারণাটি মনস্তাত্ত্বিক সাহিত্যে যথেষ্ট আগ্রহ পেয়েছে। যদিও বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা দ্বিমত পোষণ করেছেন। বিতর্ক যাই হোক না কেন, স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারের প্রতিকূল শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের পরিণতি অস্বীকার করা যায় না। স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার, স্নায়বিক লক্ষণগুলির দিকে ইঙ্গিত করে। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্মার্টফোনের আচরণ, স্বাস্থ্যকর জীবনধারা এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।