D2M Pilot: নতুন বছরে দেশবাসীকে উপহার কেন্দ্রের, ইন্টারনেট বা সিম ছাড়াই মোবাইলে চলবে লাইভ ভিডিয়ো

ইন্টারনেট বা সিম কার্ড বিহীন কনটেন্ট স্ট্রিমিংয়ের জন্য মোবাইল ডিভাইসগুলিতে নির্দিষ্ট কিছু হার্ডওয়্যার কম্পোনেন্টের উপস্থিতি আবশ্যক হবে, যা D2M প্রযুক্তি সমর্থন করবে

ইন্টারনেট-ফ্রি ভিডিও স্ট্রিমিংয়ের সুবিধা প্রদানের জন্য খুব শীঘ্রই ভারত সরকার ‘ডাইরেক্ট-টু-মোবাইল’ (D2M) প্রযুক্তি নিয়ে আসতে চলেছে। এক্ষেত্রে নয়া D2M পরিষেবার সাহায্যে দেশবাসী তাদের স্মার্টফোনে ইন্টারনেট সংযোগ ও সিম কার্ড কানেকশন ছাড়াই লাইভ টিভি থেকে শুরু করে অন্যান্য মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট স্ট্রিমিং উপভোগ করতে পারবেন বলে দাবি করা হচ্ছে। সর্বোপরি সাম্প্রতিক একটি রিপোর্ট অনুসারে, কেন্দ্রীয় সরকার দেশের মোট ১৯টি শহরে এই ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ পরিষেবাটি পরীক্ষামূলক ভাবে প্রয়োগ করার পরিকল্পনা করছে।

ডাইরেক্ট-টু-মোবাইল (D2M) প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করবে?

বেঙ্গালুরু ভিত্তিক সাংখ্য ল্যাবস এবং কানপুর আইআইটি ডাইরেক্ট-টু-মোবাইল (D2M) প্রযুক্তি বিকাশের দায়িত্বে আছে, যা পরীক্ষামূলক প্রয়োগের সময়ে প্রসার ভারতীর পরিকাঠামো ব্যবহার করবে। এই প্রযুক্তিটি ইতিমধ্যেই জরুরিকালীন সতর্কতা (এমার্জেন্সি অ্যালার্ট) এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার (ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট) জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এর মাধ্যমে মোবাইল বা যেকোনও স্মার্ট ডিভাইসে ভিডিও এবং অডিও ট্রান্সমিট করে দেখা যাবে বলে দাবি করা হচ্ছে।

তবে যেহেতু প্রথমবারের জন্য D2M প্রযুক্তি ইন্টারনেট-ফ্রি কনটেন্ট স্ট্রিমিংয়ের জন্য ব্যবহার করা হবে, সেহেতু ছোটোখাটো কিছু সমস্যা বা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলেও হতে পারে বিকাশকারীরা। যেকারণে কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার বিভাগ এই প্রযুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করার আগে, প্রথমে পরীক্ষামূলক পর্যায়ের মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

জানা গেছে, ইন্টারনেট বা সিম কার্ড বিহীন কনটেন্ট স্ট্রিমিংয়ের জন্য মোবাইল ডিভাইসগুলিতে নির্দিষ্ট কিছু হার্ডওয়্যার কম্পোনেন্টের উপস্থিতি আবশ্যক হবে, যা D2M প্রযুক্তি সমর্থন করবে। যদিও সরকারী আধিকারীকেরা জানিয়েছেন, স্মার্টফোন নির্মাতাদের জন্য এই মুহুর্তেই D2M-এনাবল প্রয়োজনীয় কম্পোনেন্ট সহ মোবাইল লঞ্চ করা বাধ্যতামূলক নয়। তবে ভবিষ্যতে এই সম্পর্কিত নয়া নিয়ম প্রবর্তন করা হতে পারে।

সাম্প্রতিক একটি রিপোর্ট অনুসারে, স্মার্টফোন নির্মাতারা যদি D2M-এনাবল চিপ দিতে বাধ্য হয় তবে ইউনিট পিছু কমপক্ষে ৩০ ডলার (প্রায় ২,৫০০ টাকা) মূল্য বৃদ্ধি ঘটতে পারে। যদিও সাংখ্য ল্যাবসের এমডি তথা সিইও পরাগ নায়েক (Parag Naik) দাবি করেছেন যে, পর্যাপ্ত ডিভাইস থাকলে চিপ নির্মাণের জন্য মাত্র ১২০ টাকা থেকে ২০০ টাকা খরচ পড়তে পারে। অর্থাৎ স্মার্টফোনের দাম খুব একটা বাড়ানোর প্রয়োজন পড়বে না বলেই ইঙ্গিত দিয়েছেন পরাগ।

অন্যদিকে এই বিষয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের সচিব অপূর্ব চন্দ্র (Apurva Chandra) বলেছেন – “ভারতের যে আট-নয় কোটি বাড়িতে এখনো টেলিভিশন নেই, সেখানে D2M প্রযুক্তি লাইভ টিভি দেখার সুযোগ করে দেবে। সর্বোপরি এই নয়া প্রযুক্তি চালু হলে ভিডিও ট্রাফিকের ২৫-৩০% চলে আসবে D2M -এর কাছে। যার ফলে ৫জি নেটওয়ার্কের ট্রাফিক অনেকাংশে কমে যাবে। ফলস্বরূপ দেশে ঘটবে ডিজিটাল বিপ্লব।”

ডাইরেক্ট-টু-মোবাইল (D2M) প্রযুক্তি কী এবং কেন এটি চালু করতে তৎপর কেন্দ্রীয় সরকার?

ডাইরেক্ট-টু-মোবাইল (D2M) হল একটি সম্প্রচার প্রযুক্তি, যা মোবাইল ডিভাইসে সরাসরি কনটেন্ট স্ট্রিমিংয়ের অনুমতি দেয়। এক্ষেত্রে D2M, সম্প্রচারের জন্য ইন্টারনেট সংযোগ বা সিম কার্ডের উপর নির্ভরশীল নয়। আরো সহজ করে বললে, আপনারা যেভাবে ডাইরেক্ট-টু-হোম (DTH) প্রযুক্তির মাধ্যমে স্মার্টফোনে এফএম রেডিও বা বাড়িতে লাইভ টিভি অ্যাক্সেস করতে পারেন ঠিক একই পদ্ধতিতে D2M কাজ করবে। তবে ইন্টারনেট বা সিম কার্ডের প্রয়োজন না হলেও, মোবাইলে D2M ব্রডকাস্ট নেটওয়ার্ক গ্রহণ করতে সক্ষম একটি বিশেষ হার্ডওয়্যার কম্পোনেন্ট উপস্থিত থাকতে হবে।

যদি পরীক্ষামূলক প্রয়োগ সফল হয়, তবে আপামর জনসাধারণের জন্য এ প্রযুক্তি চালু করা হবে। ফলে দেশবাসীকে আর কনটেন্ট স্ট্রিমিং এবং লাইভ টিভি দেখার জন্য ইন্টারনেট সংযোগ অথবা ডেটা প্ল্যানের উপর নির্ভর করতে থাকতে হবে না। যার দরুন অপূর্ব চন্দ্রের দাবি অনুযায়ী দেশে ঘটবে ‘ডিজিটাল বিপ্লব’। একারণেই কেন্দ্রীয় সরকার ডাইরেক্ট-টু-মোবাইল (D2M) প্রযুক্তি নির্মাণের উপর এতটা জোর দিচ্ছে।