Android 13: শীঘ্রই আপনার ফোনে আসছে অ্যান্ড্রয়েড ১৩ আপডেট, সেরা ৭টি ফিচার দেখে নিন

মোবাইল ফোনের দুনিয়ায় Android হল সর্বাধিক বেশি ব্যবহৃত স্মার্টফোন অপারেটিং সিস্টেম। যদিও কয়েক বছর আগেও, Google তাদের অ্যান্ড্রয়েডের প্রতিটি সংস্করণের জন্য – জিঞ্জারব্রেড, হানিকম্ব, কিটক্যাট,…

মোবাইল ফোনের দুনিয়ায় Android হল সর্বাধিক বেশি ব্যবহৃত স্মার্টফোন অপারেটিং সিস্টেম। যদিও কয়েক বছর আগেও, Google তাদের অ্যান্ড্রয়েডের প্রতিটি সংস্করণের জন্য – জিঞ্জারব্রেড, হানিকম্ব, কিটক্যাট, আইস-ক্রিম স্যান্ডউইচের মতো ডেজার্ট বা মিষ্টান্নের নাম ব্যবহার করত। কিন্তু ইদানীং, আমেরিকা ভিত্তিক টেক জায়ান্টটি তাদের অপারেটিং সিস্টেমের নামকরণের পদ্ধতিতে পরিবর্তন করেছে। যেমন গত বছর অক্টোবরে Google একাধিক নতুন ফিচার সহ Android 12 চালু করেছিল। আর দীর্ঘ জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে চলতি বছরের আগস্ট মাসে Google তাদের লেটেস্ট অপারেটিং সিস্টেম, Android 13 এর বিটা ভার্সন রিলিজ করে, যা গত বছরের তুলনায় বেশ কয়েকটি নতুন ফিচার ও ছোটোখাটো আপগ্রেডের সাথে এসেছে। আর সেপ্টেম্বরে আলোচ্য ওএস সংস্করণের স্টেবল ভার্সন Google Pixel 4 এবং তার উপরি ভার্সনের পিক্সেল মডেলগুলির জন্য রোলআউট করা হয়। যদিও, সব স্মার্টফোন ইউজাররা এখনই এই OTA (ওভার-দ্য-এয়ার) আপডেট পাবেন না এবং এতে কিছুটা সময়ও লাগবে। তাই আপনি যদি এখনো এই ওএস আপডেট না পেয়ে থাকেন, তবে একদম চিন্তিত হবেন না। বরং এই লেটেস্ট ওএস আপডেট আসার পর আপনার ডিভাইস নতুন কোন কোন ফিচারের সাথে সেজে উঠতে পারে সেই সম্পর্কে আগাম জেনে নিন…

Android 13 অপারেটিং সিস্টেমের ৭টি শীর্ষ ফিচারের তালিকা :

পরিশ্রুত ‘মেটেরিয়াল ইউ’ (Refined ‘Material You’) :

অ্যান্ড্রয়েড ১২ ওএস ভার্সনের সাথে গুগল প্রথম পরিমার্জিত ‘ম্যাটেরিয়াল ইউ’ ফিচার চালু করেছিল, যা অ্যান্ড্রয়েড ১৩ -এও দেখা যাবে। এই ফিচার কাস্টমাইজেশনের মাধ্যমে ডিভাইসকে একটি নতুন ‘লুক’ দিতে সক্ষম। আরো সোজাসাপ্টা ভাবে বললে, ‘ম্যাটেরিয়াল ইউ’ ফিচার ফোনের বর্তমান ওয়ালপেপারের রঙকে শোষণ করে এবং পরিবর্তে UI (ইউজার ইন্টারফেস) জুড়ে থাকা আইকন ও উইজেটগুলিকে অধিক রঙিন করে রাখে৷ এর ফলে ওয়ালপেপার ও সিম্বলগুলির মধ্যে রঙের সামঞ্জস্য বজায় থাকছে এবং একটি ‘সিঙ্গেল কালার’ স্কিম/থিম তৈরী হচ্ছে। বিটা পরীক্ষার সময়, রঙের এই অভিযোজন সিস্টেম অ্যাপের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে থার্ড-পার্টি অ্যাপও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এই ফিচারের অধীনে। এছাড়াও, অ্যান্ড্রয়েড ১৩ ওএস ১৬টিরও বেশি নতুন প্রিসেট এবং অন্যান্য সলিড কালার-গুচ্ছ সহ এসেছে।

ক্লিপবোর্ড সেটিংস (Clipboard settings) :

কপি এবং পেস্ট ফিচার সামান্য পুনর্বিন্যাস বা ‘রি-এডজাস্টমেন্ট’ পেয়েছে। যেমন, একটি টেক্সট কপি করার পর সেই টেক্সটের একটি অংশ এবং একটি শেয়ার বাটন ডিভাইসের নীচে বাম দিকে ছোট পপ-আপ বক্স হিসাবে প্রদর্শিত হবে৷ আপনি যদি কপি করা টেক্সটে কিছু পরিবর্তন করতে চান, তবে আপনি এখান থেকেই তা করতে পারবেন এবং তারপর নির্দিষ্ট কোথাও পোস্ট বা শেয়ার করার বিকল্প পাবেন। এছাড়া, আপনি যদি একটি URL কপি করেন, তবে এই পপ-আপ বক্সে লিংকটি সরাসরি ব্রাউজারে ওপেন করার অপশনও দেখাবে। এগুলি ছাড়াও, আপনি কপি করা কনটেন্টকে সরাসরি মেইলের মাধ্যমে বা ‘নেয়ার বাই শেয়ার’ ফিচার ব্যবহার করে কারো সাথে শেয়ার করতে পারেন। সময় সাশ্রয়ের জন্য এই ফিচারটি যথেষ্ট সাহায্য করতে পারে।

কিউআর কোড স্ক্যানার (QR Code Scanner) :

কিউআর কোড স্ক্যানার, হল এখন পর্যন্ত সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত সংযোজনগুলির মধ্যে একটি। আইওএস (iOS) ওএস চালিত ডিভাইসের ক্যামেরা অ্যাপে একটি অন্তর্নির্মিত QR কোড স্ক্যানার অনেক আগের থেকেই বিদ্যমান। কিন্তু অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ইউজারদের বেসিক QR কোড স্ক্যানের জন্য থার্ড-পার্টি অ্যাপ ডাউনলোড করতে হত। কিন্তু অ্যান্ড্রয়েড ১৩ ওএসের আগমনে এই সমস্যার সমাধান হয়েছে। কেননা, উক্ত ওএস ভার্সন ডিভাইসে থাকা ফাস্ট টাইলস ট্যাবের মধ্যে এই ফিচারটি যুক্ত করেছে। যার সাহায্যে, রেস্তোরাঁ, শপিং মল বা যেকোনো স্থানে QR কোড স্ক্যান করা সহজ হবে এবং এর জন্য আপনাকে কোনও অতিরিক্ত অ্যাপও ডাউনলোড করতে হবে না। এই ফিচার এনাবল করতে, আপনাকে নোটিফিকেশন প্যানেল থেকে সেটিংস উইন্ডোতে চলে যেতে হবে৷

মিডিয়া প্লেয়ার (Media Player) :

অ্যান্ড্রয়েড ১৩ মিডিয়া প্লেয়ারে কিছু পরিবর্তন এনেছে, যা প্রথমে অদ্ভুত দেখায় কিন্তু পরবর্তীতে স্বতন্ত্র লুক প্রদান করে। এক্ষেত্রে ‘ম্যাটেরিয়াল ইউ’ কালার স্কিমটি মিডিয়া প্লেয়ারেওও অনুসরণ করা হয়েছে। সুতরাং, আপনি যদি মিউজিকের ভলিউম বাড়ান, তাহলে হোম স্ক্রিনে আপনার দ্বারা সেট করা কালার থিম মিডিয়া প্লেয়ারেও দেখা যাবে। আবার, নোটিফিকেশন প্যানেলে প্রদর্শিত মিনিমাইজড মিডিয়া প্লেয়ারটিও নতুন ডিজাইন পেয়েছে। যারপর, নোটিফিকেশন প্যানেলে চলমান মিউজিক ট্র্যাকের ‘টাইম ডিউরেশন’ তরঙ্গ রূপে দেখা যাবে, যা দেখতে বেশ আকর্ষণীয় এবং অনন্য। এছাড়াও, অডিও আউটপুট পিকারেও সামান্য পরিবর্তন লক্ষণীয়।

পার-অ্যাপ ল্যাঙ্গুয়েজ চয়ন (Per-App Language Preference) :

যারা তাদের ডিভাইসে একাধিক ভাষা ব্যবহার করতে পছন্দ করেন তাদের জন্য এটি খুবই সুবিধাজনক ফিচার হবে। অ্যান্ড্রয়েড ১৩ অ্যাপ-বাই-অ্যাপ ভিত্তিতে পার-অ্যাপ ল্যাঙ্গুয়েজ চয়নকে এনাবল করে। অর্থাৎ, আপনি ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামের মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে মিম পড়তে এবং পোস্ট শেয়ার করতে ইংরেজি বা হিন্দি ভাষার ব্যবহার করতে পারেন। আবার, হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করার জন্য মাতৃভাষা বাংলা বা অন্য কোনো ভাষা বেছে নিতে পারেন। যদিও, এই ফিচার এই মুহূর্তে প্রত্যেকটি অ্যাপের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তবে পরবর্তী সময়ে যখন ফিচারটি সর্বজনীন হবে, তখন ইউজাররা যথেষ্ট উপকৃত হবেন। বিশেষভাবে, যারা ডিভাইসে একাধিক ভাষা ব্যবহার করতে চান বা ভিন্ন ভাষাভাষীর একাধিক ব্যক্তি দ্বারা একটি ডিভাইস ব্যবহৃত হচ্ছে, এমন ইউজারদের জন্য এই ফিচার খুব কাজের হবে। প্রসঙ্গত, গুগল গত মে মাসে অনুষ্ঠিত তাদের I/O ইভেন্টে বলেছিল যে, তারা অনেক নতুন ভাষা যোগ করেছে অ্যান্ড্রয়েড ১৩ ওএসে। যারপর, মোট ১৩৩টি ভাষা ডিভাইস সাপোর্ট করবে।

নোটিফিকেশনে সীমাবদ্ধতা (Limited Notifications) :

ডিভাইসে ইনস্টল থাকা প্রতিটি অ্যাপ যখন তখন ইচ্ছানুসারে নোটিফিকেশন পাঠিয়ে থাকে। যার মধ্যে বেশিরভাগই অকাজের। কিন্তু অ্যান্ড্রয়েড ১৩ নিজের সাথে, নোটিফিকেশন পাঠানোর অবাধ ছাড়কে সীমিত করার বিকল্প এনেছে। এই লেটেস্ট ওএস চালিত প্রত্যেকটি ডিভাইসে, সমস্ত অ্যাপকে নোটিফিকেশন পাঠানোর জন্য ইউজারের থেকে অনুমতি চাইতে হবে। যার দরুন, অপ্রয়োজনীয় তথা স্প্যাম নোটিফিকেশনের হাত থেকে যেমন রেহাই হওয়া যাবে, তেমনি প্রয়োজনীয় অ্যাপ থেকে পাঠানো নোটিফিকেশন সম্পর্কে আরো ভালো ভাবে জ্ঞাত হতে পারবেন আপনারা।

মাল্টি-উইন্ডো ট্রিক (Multi-Window Trick) :

আপনি যদি মাল্টিটাস্কিং পছন্দ করেন, তাহলে এই বৈশিষ্ট্যটি কাজে আসতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ধরা যাক আপনি একটি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টে কাজ করছেন এবং সেই সময়েই আপনার বন্ধু বা পরিজনের থেকে একটি মেসেজ এলো। এমত অবস্থায় কাজও ছাড়া যায় না, আবার মেসেজের উত্তর না দিয়েও থাকা মুশকিল হয়। তাই এই ফিচারের সাথে আপনারা নোটিফিকেশন প্যানেল থেকে মেসেজটি ড্রাগ (টেনে) করে এনে ডকুমেন্টের বা অন্য যে অ্যাপ ব্যবহার করছেন ঠিক তার নীচে প্লেস করতে পারেন। এমনটা করলে একটি নতুন উইন্ডো ওপেন হবে। যারপর, আপনি আপনার কাজের উপর ফোকাস করতে পারবেন এবং একই সাথে বার্তালাপও চালিয়ে যেতে পারবেন।

উল্লেখিতগুলি ছিল সদ্য রিলিজ হওয়া অ্যান্ড্রয়েড ১৩ অপারেটিং সিস্টেমের কয়েকটি হাইলাইটেড ফিচার। তবে আরও বেশ কয়েকটি বৈশিষ্ট্যও যুক্ত করা হয়েছে এই ওএস ভার্সনে, যেমন – প্রাইভেসি-কেন্দ্রিক ফটো পিকার এবং ব্লুটুথ এলই (LE) অডিও সমর্থন, যা মূলত ওয়্যারলেস কানেকশন থেকে কম শক্তি খরচ করে।