Cyber Crime: আমূল, হলদিরাম সহ জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের ফ্যাঞ্চাইজি দেওয়ার নামে চলছে টাকার প্রতারণা

Published on:

বিনা কায়িক শ্রমে পকেট ভর্তি করার হুজুগে আজকাল মানুষ ঠকানোর ব্যবসা খুলে বসেছে কিছু প্রতারক। বিগত কয়েক বছরে অগুনিত জালিয়াতি বা কালোবাজারির ঘটনা খবরের শিরোনামে এসেছে। এছাড়া সম্প্রতি জানা জানি হওয়া ভুয়ো ভ্যাকসিন বা সিমবক্স কান্ডের পর, আরেকটি জালিয়াতির ঘটনা সামনে এল। একাধিক নামীদামী ব্র্যান্ডের ভুয়ো ওয়েবসাইট তৈরী করে, কোম্পানির ফ্যাঞ্চাইজি, ডিলারশিপ ও ডিস্ট্রিবিউটরশিপ পাইয়ে দেওয়ার অজুহাতে ব্যবসায়ীদের প্রতারিত করার অভিযোগে গত রবিবার চারজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, দিল্লি, বিহার, হরিয়ানা এবং পাঞ্জাবের কিছু এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে বিনয় বিক্রম সিং (৩৭), বিকাশ মিস্ত্রি (২৪), বিনোদ কুমার (২৭) এবং সন্তোষ কুমার (৩২) এই চারজন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এক উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই চারজন অভিযুক্ত, আমূল (Amul), পতঞ্জলি (Patanjali) এবং হলদিরামের (Haldiram) মতো জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের ভুয়ো সাইট চালনা করতো এবং ক্রেতাদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য সার্টিফায়েড কোম্পানিগুলির সদৃশ ডোমেইন নেম দিয়ে ভুয়ো ওয়েবসাইট রেজিস্টার করতো। শুধু তাই নয়, নকল ওয়েবসাইটের রাঙ্কিং এবং অনলাইন দৃশ্যমানতা (ভিজিবিলিটি) বাড়াতে গুগল এডস (Google Ads) -এর মাধ্যমে প্রচার কাজও চালাতো অপরাধীরা।

এই প্রতারক দলটি, ১৬টি রাজ্যে সংঘটিত হওয়া প্রায় ১২৬টি সাইবার জালিয়াতির ঘটনার সাথে যুক্ত এবং এখনো পর্যন্ত প্রায় ১.১ কোটি টাকার বেশি প্রতারণা করেছে। এই গ্যাংয়ের মোট ১৭টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

প্রসঙ্গত, এই পুরো জালিয়াতির ইতিবৃত্ত প্রকাশ্যে আসে যখন প্রতারিতদের একজন পুলিশের কাছে মামলা দায়ের করেন। অভিযোগকারী জানান- তিনি একটি হালদিরাম আউটলেট চালাতে চেয়েছিলেন এবং অনলাইনে খোঁজাখুঁজির সময় একটি ওয়েবসাইট তার নজর পড়ে, যেখানে হলদিরামের ফ্যাঞ্চাইজি ও ডিলারশিপ দেওয়ার দাবি করা হয়েছিল। বিজ্ঞাপন দেখে তিনি যখন প্রদত্ত মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করেন, তখন তাকে কিছু ফর্ম ফিলআপ করতে, ডকুমেন্ট জমা দিতে এবং ভ্যারিফিকেশন, সিকিউরিটি ডিপোজিট ইত্যাদির জন্য চার্জ দিতে বলা হয়েছিল। তারপর বিভিন্ন অজুহাতে ২ মাসের মধ্যে ওনার কাছ থেকে ১১.৭৪ লক্ষ টাকা আদায় করেছিল গ্যাংটি। শেষে যখন আরো ১.৬ লক্ষ টাকা দিতে বলা হয়, তখন তিনি বুঝতে পারেন যে হলদিরামের ডিলারশিপের নামে তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

ডেপুটি কমিশনার অফ পুলিশ (সাইবার) অনীশ রায় বলেছেন, “তদন্ত চলাকালীন দেখা যায়, হালদিরামের নামে বিপুল সংখ্যক ভুয়ো ওয়েবসাইট তৈরী করা হয়েছে এবং এই সমস্ত ওয়েবসাইট বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে হলদিরামের ফ্র্যাঞ্চাইজি অফার করছে আগ্রহীদের। এযাবৎ সারা দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ এই নকল ওয়েবসাইটগুলির প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এরই সাথে আমাদের নজরে এসেছে যে, এই প্রতারকরা একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, ৩৬টিরও বেশি স্মার্টফোন এবং বিপুল সংখ্যক ভুয়ো সিম কার্ড ব্যবহার করছে। এই সবকিছুর বিবরণ এবং সন্দেহভাজনদের খুঁজে বের করা হয়েছে।”

আগস্ট মাসের ২৭ ও ২৮ তারিখ নালন্দা (বিহার), ফরিদাবাদ (হরিয়ানা), লুধিয়ানা (পাঞ্জাব) এবং দিল্লি সহ ভারতের বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চালানো হয়। সেই সময়েই গ্যাংয়ের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়, বলে জানান ডিসিপি মহাশয়।

অনীশ রায় আরো বলেছেন যে, “জিজ্ঞাসাবাদের সময়, অভিযুক্ত বিকাশ স্বীকার করেছে যে, সে এবং তার সহযোগীরা নামী ব্র্যান্ডের ডোমেইন নেম ক্রয় করত এবং ওয়েবসাইট গুলিকে এমনভাবে ডেভলপ করতো যাতে সেগুলিকে দেখে আসল মনে হয়। ওয়েবসাইটে একটি ফোন নম্বরও তারা দিয়ে রেখেছিলো। ব্র্যান্ডের ডিস্ট্রিবিউটরশিপ পাওয়ার জন্য প্রদত্ত নম্বরে কোনো আগ্রহী ফোন করলে, তাকে বিভিন্ন চার্জের অজুহাতে টাকা পাঠাতে বলা হতো।”

অভিযুক্ত বিকাশ মিস্ত্রি, বিহার এবং লুধিয়ানার মধ্যে অবস্থান পরিবর্তন করে থাকতো। লুধিয়ানাতে, বিকাশ গ্যাংয়ের অপর দু’জন সদস্য তথা তার আত্মীয় বিনোদ ও সন্তোষের সাথে বেশ কয়েক মাস ছিল। এটাই তাদের সাইবার ক্রাইমের আঁতুরঘর ছিল বলে জানা গেছে।

হোয়াটসঅ্যাপে খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন

সঙ্গে থাকুন ➥