স্মার্টফোন ও বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য প্রস্তুতকারীরা যে ভাবে বৈদ্যুতিক যানবাহন তৈরিতে আগ্রহ শুরু করেছে, তাতে এখন থেকেই সিঁদুরে মেঘ দেখছে প্রতিষ্ঠিত গাড়ি সংস্থাগুলি। এর ফলে এখন থেকেই ইন্টারনাল কম্বাশন ইঞ্জিনের উপর থেকে নজর ঘুরিয়ে সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক পাওয়ারট্রেনকে পাখির চোখ করছে তারা। যার সম্প্রতিকতম উদাহরণ হুন্ডাই (Hyundai)।
দক্ষিণ কোরিয়ার একটি সংবাদপত্রকে উদ্ধৃত করে এক আর্ন্তজাতিক সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে যে, হুন্ডাই তাদের আইসি (ইন্টারনাল কম্বাশন) ইঞ্জিনের গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। হুন্ডায়ের নতুন রিসার্চ ও ডেভেলপমেন্ট প্রধান পার্ক চুং কুক ইমেল মারফত ওই বিভাগের ১২০০ জন কর্মচারীকে খবরটি জানিয়েছেন।
এর অর্থ, পেট্রোল-ডিজেল ইঞ্জিন নিয়ে নতুন করে গবেষণার পথে হাঁটতে আর আগ্রহী নয় হুন্ডাই। সংস্থাটির একটি ছোট দল এবার থেকে বিদ্যমান ইঞ্জিনগুলি প্রয়োজনমতো টুকটাক অদলবদলের কাজ করবে। এবং হুন্ডাইয়ের ইঞ্জিন ডিজাইন বিভাগের ওয়ার্কফোর্স’ বা কর্মিশ্রেণির সিংহভাগ বৈদ্যুতিক গাড়ি বিকাশের উপরে মনোনিবেশ করবে।
ভবিষ্যতের পৃথিবী বৈদ্যুতিক গাড়িতে চড়বে। জ্বালানি তেলের ভান্ডার শেষ হলে পেট্রোল-ডিজেল চালিত গাড়ির কফিনে শেষ পেরেকটি পোঁতা হয়ে যাবে। যে কারণে বিদ্যুতে গাড়ি চালানোর পরিকল্পনা করছে প্রত্যেকটি দেশ। তাতে কমতে থাকবে পরিবেশ দূষণও। বর্তমানে বৈদ্যুতিক যানবাহনের ক্ষেত্রে অগ্রগতি আমরা চারপাশে প্রত্যক্ষ করছি। ইলেকট্রিক রিকশা থেকে ইলেকট্রিক গাড়ি, প্রত্যেকটি গাড়ির ব্যাটারিচালিত বিকল্প সামনে আসছে। এমনজি এরোপ্লেন, জাহাজও খুব শীঘ্রই বৈদ্যুতিক শক্তিতে চালানো যাবে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞরা।
প্রসঙ্গত, সময় যত গড়ায় একটা পেট্রল বা ডিজেল ইঞ্জিন স্বাভাবিকভাবেই ক্ষয় হতে শুরু করে। একটা পেট্রল বা ডিজেল ইঞ্জিনে চলমান অংশের সংখ্যা প্রায় ২০০০টি। কিন্তু বৈদ্যুতিক গাড়ির ক্ষেত্রে সেটি ২০০টির কাছাকাছি। অর্থাৎ বিদ্যুৎচালিত গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের খরচ যেমন কম, তেমনই এই ধরনের গাড়ি কম খারাপ হয়।
জ্বালানি তেল নির্ভর গাড়ির কম্বাশন ইঞ্জিন তৈরিতে যতটা সময় ও দক্ষতার প্রয়োজন হয়, ততটা কিন্তু ইলেকট্রিক গাড়ির ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় না। এর ফলে যে কোনও সংস্থার পক্ষেই ব্যাটারিচালিত গাড়ি তৈরি ও ব্যবহারের জন্য বাজারে আনা অপেক্ষাকৃত সহজ। ঠিক এই কারণেই বৈদ্যুতিক যানবাহনের দুনিয়ায় পা রাখতে চলেছে Apple, Xiaomi, Realme, Oppo, OnePlus-এর মতো স্মার্টফোন ও ভোগ্যপণ্য প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি।
সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে নিজেকে না বদলাতে পারলে কী অবস্থা হয়, তার জলজ্যান্ত উদাহরণ Nokia। জ্বালানি চালিত গাড়ির তুলনায় বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি এখনও নগণ্য। তবে সুদূর ভবিষ্যতে বৈদ্যুতিক গাড়ির উত্থান অবশ্যম্ভাবী। তাই আগামীতে পরিবহন ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তনের কথা ভেবে বৈদ্যুতিক যানবাহনের উপরেই বাজি রাখছে হুন্ডাই।