চাঁদের গায়ে রঙের মেলা! নাসা প্রকাশিত ছবি যেন মহাজাগতিক ক্যানভাস

Published on:

মহাবিশ্বের গহীনে লুকিয়ে থাকা অনেক জানা-অজানা তথ্য এবং সেই সংক্রান্ত চিত্র পৃথিবীবাসীর কাছে উপস্থাপন করার জন্য আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা, নাসা (NASA)-র জুড়ি মেলা ভার। মঙ্গলগ্রহের আশ্চর্যজনক প্রাকৃতিক দৃশ্য হোক বা স্বপ্নময় নীহারিকা, মহাকাশের বিভিন্ন জিনিসের মোহময়ী ছবি তুলে NASA একাধিকবার বিশ্ববাসীকে চমকে দিয়েছে, এবং আমরা অনেকেই NASA-র কাছ থেকে মহাশূন্যের এরকম আরও অনেক আকর্ষণীয় ও মনোমুগ্ধকর ছবি দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকি। NASA-র সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলগুলি ফলো করলে এরকম অনেক অত্যাশ্চর্য ছবি ও তথ্যের সন্ধান পাওয়া যায়।

আমাদের চোখের খিদে মেটানোর জন্য সম্প্রতি NASA একটি ছবি আমাদের উপহার দিয়েছে। এই “false-colour mosaic” ফটোটি ৫৩ টি ছবির একটি সিরিজ থেকে নির্মিত। আপনারা কি আন্দাজ করতে পারছেন এটা কিসের ছবি (নীচে দেখুন)?

অধিকাংশেরই হয়তো মনে হচ্ছে এটি কোনো গ্রহ বা উপগ্রহ বা নতুন আবিষ্কৃত কোনো নতুন জিনিসের ছবি। তবে এমনটা যারা মনে করছেন তাদের ধারণা একেবারেই ভুল, এটি মোটেই কোনো গ্রহ বা উপগ্রহ নয়; Instagram-এর এই ছবিটি আমাদের সবার অতি প্রিয় চাঁদের! কী, খুব অবাক লাগলো তো? সেটাই স্বাভাবিক। নাসা জানিয়েছে যে, তাদের গ্যালিলিও মহাকাশযান (Galileo spacecraft) এই “false-colour mosaic” ফটোটি তুলেছে। বৃহস্পতির দিকে যাত্রাকারী মহাকাশযানটি ৭ ডিসেম্বর, ১৯৯২ সালে চাঁদের উত্তরাঞ্চলের উপর জুম করেছিল, এবং ফলস্বরূপ ছবিটি ৫৩ টি চিত্রের একটি সিরিজ থেকে নির্মিত হয়েছে।

ছবিটিতে চাঁদজুড়ে একাধিক রঙের ছিটে উক্ত অঞ্চলগুলির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যেকে চিহ্নিত করে। উজ্জ্বল গোলাপী রঙযুক্ত অঞ্চলগুলি উচ্চভূমি, যা নীচের দিকে দেখা যায়। আবার, প্রাচীন লাভাসমৃদ্ধ অঞ্চলগুলি নীল-কমলা শেড দ্বারা প্রদর্শিত হয়। নীচে গাঢ় নীল রঙের প্রসারিত অঞ্চলটি Mare Tranquillitatis, যেখানে Apollo 11 অবতরণ করেছিল। এটি অন্য কোনো জায়গার তুলনায় অধিক টাইটানিয়াম সমৃদ্ধ এলাকা। আবার, হালকা নীল রঙ খনিজ সমৃদ্ধ মাটির অস্তিত্বের জানান দেয়। এগুলি সাম্প্রতিক উল্কাপিণ্ড বা গ্রহাণুর প্রভাবের সাথে যুক্ত। এক্ষেত্রে উজ্জ্বলতম নীল আলোর স্ফুলিঙ্গগুলি সবচেয়ে ছোটো গর্ত থেকে উদ্ভূত হয়।

চাঁদের সৌন্দর্যের প্রতি আসক্ত নয় এরকম মানুষ প্রায় দেখা যায় না বললেই চলে। ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই Instagram ব্যবহারকারীরা চাঁদের এই রঙিন চিত্রটি পছন্দ এবং এর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। পোস্টটি ২০,০০,০০০-এরও বেশি লাইক এবং ৭,০০০-এরও বেশি কমেন্ট পেয়েছে। অনেকে রেড হার্ট এবং হার্ট-আই ইমোজির মাধ্যমে নিজেদের মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। এবং অধিকাংশ মানুষই এক বাক্যে স্বীকার করেছেন যে, চাঁদের এত সুন্দর ছবি তারা আগে কখনো দেখেননি।

আপনাদেরকে জানিয়ে রাখি, গ্যালিলিও মহাকাশযানটি ১৯৯৫ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত বৃহস্পতিকে প্রদক্ষিণ করেছে এবং বিজ্ঞানীদের অনেক আবিষ্কারে সাহায্য করেছে। ইতালীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলির (Galileo Galilee) নামে এই মহাকাশযানটি বৃহস্পতির চারটি বৃহত্তম চাঁদ (অর্থাৎ বৃহস্পতির উপগ্রহ) আবিষ্কার করে, এবং সাথে এও জানায় যে, বৃহস্পতির বরফে ঢাকা উপগ্রহ ইউরোপা (Europa) তার ভূমিপৃষ্ঠের নীচে একটি সমুদ্রকে স্থান দিতে পারে। NASA-র ক্যাপশনে Galileo-র উত্তরসূরি মিশন Juno-র কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা সৌরজগতের উৎস বুঝতে আমাদের সহায়তা করার জন্য গ্রহটি সম্পর্কে গবেষণা করছে।

হোয়াটসঅ্যাপে খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন

সঙ্গে থাকুন ➥