HomeTech NewsOnline Money Scam: ডাক্তারকে টাকা পাঠাতে গিয়ে অ্যাকাউন্ট খালি, এই ভুল আপনিও...

Online Money Scam: ডাক্তারকে টাকা পাঠাতে গিয়ে অ্যাকাউন্ট খালি, এই ভুল আপনিও করছেন না তো?

ইন্টারনেটের প্রাচুর্যতা এবং সেইসাথে কমবেশি সকল পরিষেবাই অনলাইন হয়ে যাওয়ায় বর্তমান ডিজিটাল যুগে অধিকাংশ মানুষই অন্তর্জালের মায়ায় আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে পড়েছেন, যার জেরে আমাদের জীবনে ঘটে গিয়েছে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন। এখন কেনাকাটা থেকে শুরু করে বেড়াতে যাওয়ার টিকিট বুক করা – সবকিছুই অনলাইনে এক চুটকিতেই করে ফেলা যায়। এমনকি আচমকা কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ডাক্তারখানায় গিয়ে লাইন দেওয়ারও প্রয়োজন পড়ে না, পরিবর্তে কোনো ডাক্তারের সাথে অতি অনায়াসে অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করার সুযোগ মেলে। তবে সমস্যাটা হল, চলতি সময়ে ইন্টারনেটের প্রতি মানুষের এই অগাধ নির্ভরতার সুযোগ নিয়ে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে হ্যাকাররা। নিজেদের মস্তিষ্কপ্রসূত নানাবিধ অসৎ ফন্দিফিকিরকে হাতিয়ার করে সহজসরল সাধারণ মানুষকে জালিয়াতরা ক্রমাগত প্রতারিত করে চলেছে। সাম্প্রতিককালে গোটা দেশ জুড়েই এই ধরনের ঘটনার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং স্ক্যামারদের প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে ইতিমধ্যেই বহু মানুষ তাদের কষ্টার্জিত টাকা হারিয়েছেন। সম্প্রতি পাওয়া খবর অনুযায়ী, ইন্টারনেট মারফত একজন ডাক্তারের সাথে অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করতে গিয়ে মাসখানেক আগে ৬০,০০০ টাকারও বেশি খুঁইয়েছেন দিল্লির তাবাসসুম কুরেশি (Tabasassum Qureshi) নামের এক মহিলা। আসুন, ঘটনাটি বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।

অনলাইনে ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করতে গিয়ে প্রায় ৬০,০০০ টাকা হারালেন দিল্লির এক মহিলা

রিপোর্ট অনুযায়ী, সাম্প্রতিককালে দিল্লির টেলিভিশন প্রযোজক তাবাসসুম কুরেশিকে ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেওয়ার কথা বলে তার থেকে প্রায় ৬১,৯০০ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এক অনলাইন প্রতারক। সংবাদ সংস্থা এএনআই (ANI) জানিয়েছে যে, ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর মধ্য দিল্লির দরিয়াগঞ্জের বাসিন্দা তাবাসসুম কুরেশি অনলাইনে ডাঃ সুমিত জৈন (Dr Sumit Jain) নামক একজন ডাক্তারের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করতে চেয়েছিলেন। তিনি গুগল (Google)-এ ওই ডাক্তারের প্রাইভেট ক্লিনিকের নম্বর পেয়েছিলেন এবং অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করার জন্য ক্লিনিকটির ওই সংশ্লিষ্ট নম্বরে কল করেছিলেন। কিন্তু বহুবার চেষ্টা করার পরেও সঠিক জায়গায় কলটি কানেক্ট হয়নি।

এর কয়েক মিনিট পরে এক অজানা নম্বর থেকে কুরেশির কাছে একটি ফোন আসে। ফোনের অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তিটি উক্ত ক্লিনিকের স্টাফ মেম্বার হিসেবে নিজের পরিচয় দেন এবং ওই মহিলাকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করতে সাহায্য করবেন বলে নিশ্চিত প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফেলেন। ফলে তাবাসসুম খুব সহজেই ভেবে নেন, তিনি যে কল করার জন্য বহুবার চেষ্টা করছিলেন, তার কোনো নোটিফিকেশন নিশ্চয়ই ক্লিনিকে পৌঁছেছে, যে কারণেই তারা সেখান থেকে পুনরায় কল ব্যাক করেছে। তাই ফোনের অপর প্রান্তে থাকা অজানা ব্যক্তিটির সম্পর্কে কোনো সন্দেহই তার মনে উদ্রেক হয়নি।

৫ টাকা অনুদান দিতে গিয়ে খোয়া গেল প্রায় ৬০,০০০ টাকা!

এরপর অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করার আগে ফোনের অপর প্রান্তে থাকা ওই ব্যক্তি তাবাসসুমকে অনাথ শিশুদের জন্য অনুদান হিসেবে একটি পেমেন্ট লিঙ্কের মাধ্যমে মাত্র ৫ টাকা দেওয়ার অনুরোধ জানান। আর মোটে ৫ টাকা ডোনেশন দিতে কেই বা অরাজি হবে! ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই তাবাসসুমও ওই লিঙ্ক মারফত পেমেন্ট করতে রাজি হয়ে যান। তবে কুরেশি প্রথমবার পেমেন্টটি করতে ব্যর্থ হন। তাই তিনি অর্থ প্রদান করার জন্য তার এক আত্মীয়ের মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন, কিন্তু সেক্ষেত্রেও ট্রানজ্যাকশন ব্যর্থ হয়। তবে এরপরেই শুরু হয় আসল খেলা!

এর পরমুহূর্তেই কুরেশির কাছে ব্যাংক থেকে একটি এসএমএস আসে, যেখান থেকে তিনি জানতে পারেন যে, তার অ্যাকাউন্ট থেকে ৫১,৯০০ টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে। এর ৫-১০ মিনিট পরে তিনি আবারও একটি এসএমএস পান, যার দরুন জানা যায় যে, তার মা সর্দার কুরেশির (Sardar Qureshi) অ্যাকাউন্ট থেকেও ১০,০০০ টাকা খোয়া গিয়েছে। স্বভাবতই একাধিক আনঅথোরাইজড ট্রানজ্যাকশন এসএমএস রিসিভ করার পর কুরেশি হাড়ে হাড়ে টের পান যে, তিনি সাইবার জালিয়াতির শিকার হয়েছেন। ফলে আর এক মুহূর্তও দেরি না করে তিনি তৎক্ষণাৎ নিজের অভিযোগ জানাতে পুলিশের দ্বারস্থ হন।

ঠিক কী কারণে ঘটলো এই অঘটন?

উল্লেখ্য যে, এখন ভারত সহ গোটা বিশ্বজুড়ে সাইবার জালিয়াতির ঘটনা অহরহ ঘটছে। সেক্ষেত্রে ব্যবহারকারীদেরকে প্রতারিত করার জন্য জালিয়াতরা সাধারণভাবে নানা অছিলায় ইউজারদের কাছ থেকে তাদের নানাবিধ পরিষেবার ওটিপি (OTP) সংগ্রহ করে। মূলত গোটা বিশ্বের অধিকাংশ সাইবার জালিয়াতির ঘটনা এই পদ্ধতিতেই ঘটে থাকে। কিন্তু এখন প্রশ্ন হল, আলোচ্য ঘটনায় তো কুরেশি হ্যাকারদের সঙ্গে কোনো ওটিপি শেয়ার করেননি, কিন্তু তা সত্ত্বেও কীভাবে ঘটলো এই দুর্ঘটনা? সেক্ষেত্রে পুলিশের মতে, অনাথ বাচ্চাদেরকে ৫ টাকা অনুদান দেওয়ার জন্য ফোনের অপর প্রান্তে থাকা অজানা কলার তাবাসসুমকে যে পেমেন্ট লিঙ্কে ক্লিক করার অনুরোধ করেছিলেন, সম্ভবত সেটাই ছিল ফিশিং লিঙ্ক। সেক্ষেত্রে যদিও ওই লিঙ্কে ক্লিক করার পর দুবার পেমেন্ট করতে ব্যর্থ হন কুরেশি, কিন্তু এই সুযোগে তার যাবতীয় ব্যাংকিং ডিটেইলসের অ্যাক্সেস পেয়ে যায় হ্যাকাররা, যার জেরেই তারা অতি অনায়াসে সরাসরি তাবাসসুমের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা চুরি করতে সক্ষম হয়। ফলে এটিকে ফিশিং জালিয়াতি বা সামাজিক প্রকৌশল জালিয়াতির ঘটনা বলা চলে।

হ্যাকারদের হাত থেকে বাঁচতে হলে চোখকান খোলা রাখা খুবই জরুরি

উল্লেখ্য যে, গোটা বিশ্বজুড়ে রোজই নিত্যনতুন উপায়ে সাইবার জালিয়াতির বিভিন্নরকম ঘটনা ঘটছে। সেক্ষেত্রে হ্যাকারদেরকে আটকানোর যেহেতু কোনো উপায় নেই, তাই এই বিষয়গুলি সম্পর্কে নিজেকে ওয়াকিবহাল রাখতে সবসময় চোখকান খোলা রাখুন। কখনো কোনো অজানা সোর্স থেকে পাওয়া লিঙ্কে ক্লিক করবেন না, এমনকি কোনো অজানা নম্বর থেকে আসা কল বা এসএমএসের রিপ্লাই দেওয়াও একেবারেই উচিত নয়। তদুপরি, অজানা কোনো ব্যক্তির সঙ্গে কোনো পরিষেবার ওটিপি শেয়ার করা থেকেও ইউজারদেরকে সর্বদা বিরত থাকতে হবে। আর কখনো যদি কারোর মনে হয় যে তিনি সাইবার জালিয়াতির শিকার হয়েছেন, তাহলে বিন্দুমাত্রও দেরি না করে তৎক্ষণাৎ সাইবার সেলের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। মোদ্দা কথা হল, বর্তমান ডিজিটাল যুগে হ্যাকারদের হাত থেকে বাঁচতে হলে সর্বদা চোখকান খোলা রাখুন, সতর্ক থাকুন, সুরক্ষিত থাকুন।

RELATED ARTICLES

Most Popular