সঞ্জুকে সরিয়ে প্রথম তিন ম্যাচে ক্যাপ্টেন রিয়ান পরাগ, চোট নাকি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত?

ভারতীয় ক্রিকেটে রিয়ান পরাগ এক অদ্ভুত চরিত্র। তিনি তারকা না হয়েও বারবার আলোচনায় উঠে আসেন। কখনও মাঠে সতীর্থকে চোখ রাঙিয়ে, কখনও ম্যাচ শেষে মাঠকর্মীদের সঙ্গে ছবি তোলা নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধে তাকে নিয়ে। দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে খেলায় তার ব্যাটের মাপ নিয়েও আম্পায়ারদের সঙ্গে তর্কাতর্কি হয়। তা সত্ত্বেও, রাজস্থান রয়্যালস তাকেই এবারের আইপিএলের প্রথম তিনটি ম্যাচে অধিনায়ক করেছিল। কারণ কি শুধুই সঞ্জু স্যামসনের চোট? না কি এর পিছনে রয়েছে অন্য কারণ? আসুন জেনে নেওয়া যাক।
অসমের ছেলে রিয়ান পরাগ রাজস্থান দলের মুখ হয়ে উঠেছেন। একসময়ের শুধুমাত্র জয়পুরভিত্তিক দল রাজস্থান রয়্যালস এখন গুয়াহাটিকেও তাদের হোম ভেন্যু করেছে। ২০২৩ সালে প্রথমবার বর্ষাপারা স্টেডিয়ামে রাজস্থানের হোম ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। ২০২০ সালে পরিকল্পনা থাকলেও কোভিডের কারণে তা সম্ভব হয়নি। এবার ২০২৪-এ মরসুমের শুরু থেকেই রাজস্থান গুয়াহাটিতে খেলছে। এই সিদ্ধান্ত শুধুই ক্রিকেটীয় নয়, এর সঙ্গে রয়েছে বোর্ডের বৃহত্তর পরিকল্পনা- উত্তর-পূর্ব ভারতে ক্রিকেটের প্রসার।
উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে ফুটবলের জনপ্রিয়তা বরাবরই বেশি। অথচ ক্রিকেটে এই অঞ্চল পিছিয়ে। কোনও আইপিএল দল এই অঞ্চল থেকে নেই। সেই শূন্যতা পূরণে অসমকে ব্যবহার করছে বোর্ড। আর সেই পরিকল্পনায় সুবিধা করে দিয়েছে রিয়ান পরাগের উত্থান। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য ছিলেন পরাগ। এরপর রাজস্থানের হয়ে আইপিএলে অভিষেক। বয়স মাত্র ১৭ বছর ১৭৫ দিনে অর্ধশতরান করে নজির গড়েন তিনি। আইপিএলে গত বছর ৫৭৩ রান করে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসেন।
পরাগের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে বোর্ড গুয়াহাটিতে ম্যাচ আয়োজন করে। দর্শকদের উল্লাস, মাঠভরা ভিড়, পরাগের জন্য চিৎকার- সবই বোঝায়, পরিকল্পনা সফল। এখানেই শেষ নয়। বোর্ড সচিব দেবজিৎ শইকীয়া এবং রাজস্থান রয়্যালসের এগজিকিউটিভ চেয়ারম্যান রঞ্জিত বড়ঠাকুর, দু’জনেই অসমের। তাদের ভূমিকাও এই সিদ্ধান্তে গুরুত্বপূর্ণ।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ২০১৬ সাল থেকে অসমে বিজেপি সরকার এবং বিসিসিআই-এর সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের সুসম্পর্ক পুরানো। তাই জয়পুর থেকে প্রায় ২০০০ কিলোমিটার দূরের গুয়াহাটিকে রাজস্থানের কেন্দ্র করা নিছক কাকতালীয় নয়।
যে কারণেই হোক, এই সিদ্ধান্তে অসম তথা উত্তর-পূর্ব ভারতে ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে নিঃসন্দেহে। আর সেই আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন রিয়ান পরাগ।