Wi-Fi HaLow: ১ কিলোমিটার দূরেও ব্যবহার করা যাবে ওয়াই-ফাই, আসছে নয়া প্রযুক্তি
পরবর্তী প্রজন্মের ওয়াই-ফাই প্রযুক্তির হাত ধরে কানেক্টিভিটির জগতে আসতে চলেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। Wi-Fi HaLow নামের সঙ্গে প্রকাশ্যে আসা এই প্রযুক্তিকে ঘিরে ইতিমধ্যেই অসংখ্য টেক-অনুরাগীর মধ্যে জল্পনার সৃষ্টি হয়েছে। আর তা হবে নাই বা কেন? আলোচ্য Wi-Fi HaLow প্রযুক্তি ব্যবহার করে কম ব্যাটারি খরচে ১ কিমি পর্যন্ত দীর্ঘ দূরত্বের মধ্যে ইন্টারনেট সংযোগ রক্ষা করা সম্ভব বলে জানা গিয়েছে। সারা বিশ্বে ওয়াই-ফাই পরিষেবা সরবরাহকারী সংস্থাগুলির যৌথ প্রতিষ্ঠান Wi-Fi Alliance সম্প্রতি আলোচ্য Wi-Fi HaLow প্রযুক্তিকে সার্টিফিকেশন প্রদান করেছে, যা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার।
সাধারণভাবে Internet of Things বা IoT ডিভাইসের ব্যাপক উত্থানের ঘটনাকে মাথায় রেখেই নবীন প্রজন্মের Wi-Fi HaLow প্রযুক্তি ডিজাইন করা হয়েছে। বর্তমানে ঘরে-বাইরে IoT ডিভাইসের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে যা কোনভাবেই অলক্ষ্যণীয় নয়। এই ডিভাইসগুলিকে সারা দিন ইন্টারনেটের সঙ্গে জুড়ে রাখতে সাহায্য করবে আলোচ্য ওয়াই-ফাই হ্যালো প্রযুক্তি। স্বভাবতই ওয়াই-ফাই অ্যালায়েন্সের পক্ষ থেকেও এর উপযোগিতা সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত মন্তব্য করা হয়েছে।
জানিয়ে রাখি, ওয়াই-ফাই হ্যালো ব্যবহারের জন্য নতুন করে পরিকাঠামো নির্মাণের দরকার নেই। বর্তমান ওয়াই-ফাই প্রোটোকলের উপরে ভিত্তি করেই এই প্রযুক্তি কাজ করবে। এমনকি এসময় উপলব্ধ ওয়াই-ফাই ডিভাইস ব্যবহার করে আলোচ্য প্রযুক্তির সুবিধা নিতে কোনো সমস্যা হবে না।
Wi-Fi HaLow যেভাবে কাজ করে
আমরা যে স্ট্যান্ডার্ড ওয়াই-ফাই পরিষেবা ব্যবহার করে থাকি তা মূলত ২.৪ গিগাহার্টজ (GHz) - ৫ গিগাহার্টজ (GHz) রেডিও ফ্রিক্যুয়েন্সির মধ্যে কাজ করে। এক্ষেত্রে ব্যান্ডউইথ বেশি হওয়ার কারণে অল্প সময়ে অধিক পরিমাণ ডেটা পরিবহন সম্ভব হয়। অন্যদিকে ওয়াই-ফাই হ্যালো প্রযুক্তি পরিচালনার জন্য ১ গিগাহার্টজের (GHz) স্পেক্ট্রাম জরুরি। স্বল্প ফ্রিক্যুয়েন্সির কারণে এটি অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ ওয়েভলেংথ প্রদান করে। অর্থাৎ আলোচ্য প্রযুক্তির সিগন্যাল স্ট্যান্ডার্ড ওয়াই-ফাই সংস্করণের তুলনায় দীর্ঘ দূরত্ব অতিক্রম করতে সক্ষম। আর সে কারণেই ওয়াই-ফাই অ্যালায়েন্সের দাবী, Wi-Fi HaLow অ্যাক্সেস পয়েন্টের মাধ্যমে এক কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে অবস্থিত প্রায় ৮,০০০ ডিভাইসে ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি প্রদান করা যেতে পারে।
তবে পরিষেবা ব্যবহারের সীমানা বৃদ্ধির ফলে ওয়াই-ফাই হ্যালো প্রযুক্তিতে ডেটা পরিবহনের গতি অনেকটাই কম হবে। তাই ক্রমবর্ধমান আইওটি (IoT) ডিভাইসের জন্য এই প্রযুক্তি আদর্শস্থানীয় হতে পারে। কারণ তাদের ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের মাধ্যমে খুব বেশি পরিমাণ ডেটা পরিবহনের দরকার নেই। তাছাড়া সেখানে অতি সাধারণ কিছু নির্দেশ পাঠানোর প্রয়োজন হয়, যা Wi-Fi HaLow প্রযুক্তির মাধ্যমেই প্রেরণ করা সম্ভব। উল্লেখ্য, স্মার্ট ডোর লক, ক্যামেরা, এয়ার কন্ডিশনার প্রভৃতি আরো অনেক সরঞ্জাম আইওটি (IoT) ডিভাইসের উদাহরণ।
ঘরের কথা বাদ দিলে শিল্প এবং কৃষিক্ষেত্রেও Wi-Fi HaLow প্রযুক্তি দারুণ উপযোগী হতে পারে। বিভিন্ন স্মার্ট সিটিতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। এছাড়াও Wi-Fi HaLow আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একাধিক প্রয়োজন পূরণে কার্যকর হবে বলে প্রযুক্তিপ্রেমীরা মনে করছেন।