বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো ক্রিপ্টোকারেন্সি চুরি! প্রায় ৪,৫০০ কোটি টাকা হাতালো উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা
ক্রিপ্টোকারেন্সি চুরির ঘটনা ইদানীংকালে বিশ্বের বহু জায়গাতেই ঘটছে বলে শোনা যাচ্ছে। তবে সম্প্রতি পাওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, এবার গোটা দুনিয়া ক্রিপ্টো জগতের সবচেয়ে বড়ো হ্যাকিংয়ের ঘটনার সাক্ষী থাকল। ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্র্যাকিং সাইট Etherscan-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, গত মাসে উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা ব্লকচেইন প্রযুক্তিনির্ভর ‘Axie Infinity' (অ্যাক্সি ইনফিনিটি) নামক ভিডিও গেম থেকে ৬০০ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৪,৫০০ কোটি টাকা) চুরি করেছে! গেমাররা এই প্ল্যাটফর্মে গেম খেলে এবং সেইসাথে নিজেদের অ্যাভাটার বিনিময় করে ক্রিপ্টো মুদ্রা কামাই করতেন। কিন্তু সেই ক্রিপ্টোই হাতিয়ে নিয়েছে হ্যাকাররা।
চমকের এখানেই শেষ নয়, দ্যা ওয়াশিংটন পোস্ট (The Washington Post)-এর এক প্রতিবেদনে আরও চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে যে, হ্যাকাররা যে শুধু চুরি করেছে তাই নয় বরঞ্চ তারা এখনও চুরি হওয়া ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করতে সক্ষম। ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট এই ক্রিপ্টো আক্রমণে হ্যাকারদের অর্জিত যাবতীয় অর্থ বাজেয়াপ্ত করার চেষ্টা করলেও তা শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠেনি। জানা গিয়েছে যে, হ্যাকাররা ইতিমধ্যেই ৪.৫ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ইথেরিয়াম (Ethereum) লেনদেন করে ফেলেছে। আর এই চমকপ্রদ ঘটনা যে দলটি ঘটিয়েছে, সেটিকে ল্যাজারাস গ্রুপ (Lazarus Group) হিসেবে চিহ্নিত করেছে ট্রেজারি বিভাগ।
উল্লেখ্য যে, এর আগে উত্তর কোরিয়ার এই গ্রুপটি ২০১৪ সালে সোনি পিকচার্স হ্যাক করে প্রথমবারের মতো আলোচনায় এসেছিল। ব্লকচেইন অ্যানালিটিক্স ফার্ম এলিপ্টিক (Elliptic)-এর মতে, সাইবার অপরাধীদের এই গ্রুপটি এখনও পর্যন্ত চুরি হওয়া ক্রিপ্টোকারেন্সির ১০০ মিলিয়ন ডলার পাচার করেছে। তবে আশার খবর এটাই যে, হ্যাকিং গ্রুপটির সন্ধান পুরোপুরিভাবে না পাওয়া গেলেও এই চক্রের সাথে সম্পর্কিত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ইতিমধ্যেই ট্রেজারি বিভাগের হাতে এসেছে, আর এর সুবাদেই তারা হ্যাকারদের ট্রান্সফার করা ৫.৮ মিলিয়ন ডলার ক্রিপ্টোকারেন্সি ফ্রিজ করতে সক্ষম হয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ বিন্যান্স (Binance)-এর এক রিপোর্টে এই তথ্যটি প্রকাশ্যে এসেছে। ফলে হ্যাকিং গ্রুপটিকে ধরার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা যে জোরকদমে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, সেকথা বলাই বাহুল্য।
যত দিন যাচ্ছে, সারা বিশ্বে বিভিন্ন রকম হ্যাকিংয়ের ঘটনা যে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে সে সম্পর্কে আর নতুন করে কিছু বলার কোনো প্রয়োজন নেই। তবে সাম্প্রতিক এই ঘটনাটি যে হ্যাকারদের যাবতীয় অভিনব তথা সুকৌশলী কর্মকাণ্ডের সর্বশ্রেষ্ঠ উদাহরণ – তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই! সবচেয়ে বড়ো ব্যাপার হল, ক্রিপ্টো অর্থনীতির দুর্বলতার দিকটিকে সম্পূর্ণভাবে বুঝে নিয়ে কীভাবে সেটিকে সুচতুরভাবে অপব্যবহার করা যায়, তা এই ঘটনায় উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে। তারা ক্রিপ্টো প্ল্যাটফর্মগুলিতে উপলব্ধ যাবতীয় ত্রুটিগুলিকে বেশ সুনিপুণ কায়দায় কাজে লাগিয়েছে, আর এভাবেই সকলের অজান্তে সম্পূর্ণ গোপনীয়তা বজায় রেখে তারা এই বিশাল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। ফলে এরকম একটি অসম্ভবকে সম্ভব করায় হ্যাকারদের একটি দুর্দান্ত সাধুবাদ প্রাপ্য বটে, তবে দীর্ঘদিন ধরে যাতে তারা এরকম ঘটনা ঘটাতে না পারে, তার জন্য আগামী দিনে প্রযুক্তিবিদ এবং গবেষকরা আরও অত্যাধুনিক টেকনোলজি নিয়ে আসবে বলেই আশা করা যায়। সেক্ষেত্রে সমস্ত ঝামেলা কাটিয়ে উঠে কবে যে আমরা এক হ্যাকিংমুক্ত পৃথিবীর দেখা পাবো, তার উত্তর হয়তো একমাত্র সময়ের কাছেই রয়েছে।