WhatsApp: ঠিক যেন বাস্তবের ‘থ্রি ইডিয়েটস’, ভিডিয়ো কলে প্রসব করে মহিলার জীবন বাঁচালেন চিকিৎসকরা

Avatar

Published on:

WhatsApp helps delivering baby Jammu and Kashmir

২০০৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত রাজকুমার হিরানি পরিচালিত বলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় সিনেমা ‘থ্রি ইডিয়টস’-এর কথা নিশ্চয়ই সকলেরই মনে আছে? অবশ্য থাকারই কথা; এখনও পর্যন্ত এই সিনেমাটি দেখেননি, এমন কোনো মানুষের দেখা মেলা বর্তমানে প্রায় দুষ্কর বললেই চলে। হাস্যরসে পরিপূর্ণ এই মুভিটির প্রতিটি মুহূর্তই সকলের মনে গেঁথে রয়েছে, তবে একটি বিশেষ দৃশ্য যেন একেবারেই ভোলার নয়। আপনাদের সকলেরই নিশ্চয়ই মনে আছে যে, থ্রি ইডিয়টস ছবিতে র‍্যাঞ্চো (আমির খান অভিনীত চরিত্র) প্রিয়াকে (যে চরিত্রে দেখা গিয়েছিল করিনা কপূর খানকে) ভিডিও কল করে তার কলেজের ভাইস চ্যান্সেলর (ভাইরাস অর্থাৎ বোমান ইরানি অভিনীত চরিত্র)-এর মেয়ের (যে চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন মোনা সিং) সন্তান প্রসব করিয়েছিলেন। সেক্ষেত্রে এবার জম্মু-কাশ্মীরে সিনেমাটির এই দৃশ্যই যেন একেবারে বাস্তবায়িত হল। সম্প্রতি পাওয়া খবর অনুযায়ী, হালফিলে WhatsApp ভিডিও কল মারফত চিকিৎসকের সাহায্য নিয়ে কাশ্মীরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এক মহিলার সন্তান প্রসব করালেন সেখানকার স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মীরা। আসুন, এই চাঞ্চল্যকর ঘটনাটির সম্পর্কে একটু বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।

জম্মু-কাশ্মীরে সন্তান প্রসবে চিকিৎসককে সাহায্য করল WhatsApp 

সংবাদ সংস্থা পিটিআই (PTI)-এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাশ্মীরের কুপওয়াড়া জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম কেরানে এখনও চলছে তীব্র শীত। লাগাতার তুষারপাতে কার্যত শহরের সঙ্গে সেখানকার যোগাযোগ সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। এরই মধ্যে গত শুক্রবার রাতে ওই গ্রামের অন্তঃসত্ত্বা এক মহিলা প্রসবযন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছোন। তবে দুর্ভাগ্যের বিষয় হল, সেখানে প্রসব করানোর মতো পরিকাঠামো ছিল না। তদুপরি, একাধিক শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি ওই মহিলার সাথে যুক্ত ছিল এক্লাম্পসিয়া (eclampsia) এবং এপিসিওটমি (episiotomy)-র সাথে সম্পর্কিত প্রসবজনিত জটিলতার এক সুদীর্ঘ ইতিহাস, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছিল। সাধারণত এইসব ক্ষেত্রে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স বা হেলিকপ্টারের সাহায্যে ভূস্বর্গের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মহিলাদেরকে জম্মু কিংবা শ্রীনগরে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু প্রবল তুষারপাতের কারণে এক্ষেত্রে তা করা মোটেই সম্ভব ছিল না। তাহলে ওই মহিলাকে কীভাবে বাঁচানোর যাবে, সেকথা ভেবে রীতিমতো শিউরে উঠেছিলেন অনেকেই।

কিন্তু এই কঠিন পরিস্থিতিতেও মাথা ঠান্ডা রেখে মহিলাটিকে প্রাণে বাঁচাতে থ্রি ইডিয়েটস সিনেমার টেকনিক অবলম্বন করার কথা পরিকল্পনা করেন স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকেরা। ওই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মহিলাটিকে প্রাণে বাঁচানোর তাগিদে তারা তৎক্ষণাৎ শহরের ডাক্তারদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ ভিডিও কলের মাধ্যমে যোগাযোগ করেন। এরপরে প্রচণ্ড ঝুঁকি নিয়ে একেবারে সিনেমার মতোই ভিডিও কল মারফত শহরের ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী অন্তঃসত্ত্বা মহিলাটির অস্ত্রোপচার করেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকেরা। আর সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হল, থ্রি ইডিয়েটস ছবির মতো বাস্তবেও এই অস্ত্রোপচার সফল হয়। প্রায় ৬ ঘণ্টা প্রসবযন্ত্রণা সহ্য করার পর এক ফুটফুটে সন্তানের জন্ম দেন ওই মহিলা।

এবার অবশেষে মানুষের জীবন রক্ষাকর্তা হয়ে উঠলো WhatsApp

সুষ্ঠুভাবে সব কাজ মেটার পর মা এবং সদ্যোজাত বর্তমানে ভালো আছে বলেই জানা গিয়েছে। এই ঘটনাটির প্রসঙ্গে ক্রালপোড়ার ব্লক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ মীর মহম্মদ শফি (Dr. Mir Mohammad Shafi) জানিয়েছেন যে, অনেক কঠিন অবস্থার মধ্যে দিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদেরকে এই কাজ করতে হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত মা ও শিশু যে সুস্থ আছে, এটাই সবচেয়ে বড়ো পাওয়া। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, কাজের প্রয়োজনে কিংবা অবসর সময় কাটাতে চেনাপরিচিতদেরকে মেসেজ, ছবি এবং ভিডিও পাঠানোর জন্যই মূলত WhatsApp ব্যাপক মাত্রায় গোটা বিশ্বে ব্যবহৃত হয়। তবে আলোচ্য ঘটনাটির সৌজন্যে এবার Meta মালিকানাধীন এই ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং প্ল্যাটফর্মটি মানুষের জীবন রক্ষাকর্তা হিসেবেও প্রমাণিত হল।

সঙ্গে থাকুন ➥