Car Tips: গাড়ির ধোঁয়ার রঙ ও গন্ধই চিনিয়ে দেয় ইঞ্জিনের অসুখ, জেনে নিন কোনটা বিপদের লক্ষণ

গাড়ির সবচেয়ে দামি ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল ইঞ্জিন। এটি চার চাকা হোক বা দু’চাকা যে কোনো যানবাহনের প্রাণভ্রোমরা। কোনও কারণবশত এই ইঞ্জিনে যদি মারাত্মক ক্ষতি হয়ে থাকে তবে তা সরানো বেশ কষ্টকর। মানে আপনার পকেট হবে গড়ের মাঠ। সাধারণভাবে গাড়ি তৈরির সময় ইঞ্জিন রোবটের মাধ্যমে তৈরি করা হয় বলে রিপেয়ার করার খরচ এত বেশি। তবে যেহেতু গাড়ির সবচেয়ে দামি অংশ এটি তাই আচমকা এই ইঞ্জিন খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা বেশ কম। তবে ইঞ্জিন খারাপ হওয়ার আগে কিন্তু অনেকদিন থেকেই তার বিভিন্ন লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সেই বিষয়গুলি শুরুতেই নজরে রেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে বড়সড়ো আর্থিক ধাক্কা থেকে বাঁচবেন আপনি।

গাড়ির ইঞ্জিন খারাপ হওয়ার কয়েকটি লক্ষণ-

ধোঁয়ার রং

যে কোনো গাড়ির ইঞ্জিনের মধ্যে থাকা দহন কক্ষে জীবাশ্ম জ্বালানির দহনের ফলে উৎপন্ন হয় ধোঁয়া। আর এগজস্ট পাইপ থেকে বেরোনো সেই ধোঁয়ার রং দেখেই বলে দেওয়া যায় ইঞ্জিনের আসল অসুখ কোনটি।

নীল ধোঁয়া – কোনও কারণে যদি এগজস্ট থেকে নীল ধোঁয়া বেরোতে দেখা যায় তবে এ নিশ্চয়ই কম্বাসন চেম্বারের মধ্যে থাকা জ্বালানির কারণেই হচ্ছে। এমন ঘটনা ঘটলে ইঞ্জিনের পিস্টন রিং এবং ভালভ সিল নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়াও ইঞ্জিনের পজিটিভ ক্র্যাঙ্ককেস ভেন্টিলেশন (PCV) সিস্টেমের সমস্যার জন্যেও এমন ধোঁয়া দেখতে পাওয়া যায়।

সাদা ধোঁয়া – কোনো কারণে ইঞ্জিনের সঙ্গে লাগানো কুলিং সিস্টেমের মধ্যে থাকা কুল্যান্ট কিংবা জল ইঞ্জিনের দহন কক্ষে প্রবেশ করলেই এমন সাদা রঙের ধোঁয়া তৈরি হয়। এর কারণ নিয়ে পর্যালোচনা করলে উঠে আসে নষ্ট হয়ে যাওয়া গ্যাসকিট বা ক্র্যাকড ক্রাঙ্ক সিলিন্ডার হেডের নাম।

কালো ধোঁয়া- ইঞ্জিনের কম্বাশন চেম্বারের মধ্যে সমস্যা হওয়ার কারণে বাতাসের সঙ্গে জ্বালানির মিশ্রণ খুব বেশি পরিমাণে হয়ে গেলে এমন অদ্ভুত রঙের কালো ধোঁয়া দেখতে পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে ফুয়েল ইঞ্জেক্টার, অক্সিজেন সেন্সরে সমস্যা এবং এয়ার ফিল্টারের ক্ষুদ্র মুখগুলি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে এমন ঘটনা ঘটে থাকে।

অতিরিক্ত ধোঁয়া নির্গমন হওয়া

ইঞ্জিনের সঙ্গে যুক্ত এগজস্ট পাইপ দিয়ে আচমকা মাত্রাতিরিক্ত ধোঁয়া নির্গমন হওয়া কিন্তু একপ্রকার বাজে লক্ষণ। আজকালকার দিনের অত্যাধুনিক গাড়িগুলির এগজস্ট পাইপে উন্নত মানের ক্যাটালাইটিক কনভার্টার লাগানো থাকায় ধোঁয়া নির্গমন অনেকাংশই কম হয়ে থাকে। কিন্তু ইঞ্জিনের সমস্যা দেখা দিলে অতিরিক্ত গাঢ় ধোঁয়া বের হওয়ার ঘটনা ঘটে।

বিশেষ ধরনের গন্ধ

গাড়ি-ঘোড়া সম্পর্কে যাদের অল্পবিস্তর জ্ঞান রয়েছে তারা জানেন এর এগজস্ট পাইপ দিয়ে বেরোনো ধোঁয়ার গন্ধ কেমন হওয়া উচিত। এর তুলনায় অতিরিক্ত উগ্র কোন গন্ধ বেরোলে অবশ্যই সে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে মিষ্টি গন্ধযুক্ত ধোঁয়া বেরোলে কুল্যান্ট লিক হতে পারে, পচা ডিমের মতো গন্ধ বের হলে ক্যাটালাইটিক কনভার্টারের সমস্যা থাকতে পারে এবং যদি কিছু পোড়ার গন্ধ পান তবে অবশ্যই ইঞ্জিন অয়েল কিংবা অন্য কোনো তরল পদার্থ ইঞ্জিনের মধ্যে পুড়ছে বলেই ধরে নিতে হবে।

ইঞ্জিন ব্যাকফায়ারিং

এই ইঞ্জিন ব্যাকফায়ারিং আদতে ইঞ্জিনের দহন কক্ষে জ্বালানি এবং বাতাসের মিশ্রন সঠিকভাবে না হওয়ার দৌলতেই ঘটে থাকে। সেই সময় অল্প পরিমাণ করে পেট্রল কিংবা ডিজেল এসে জমা হয় এগজস্ট পাইপে। আর এগজস্ট পাইপের উষ্ণতা মাত্রাতিরিক্ত থাকায় এই জমে থাকা পেট্রোল কিংবা ডিজেল পটকা ফাটার মত শব্দ করে ফাটতে থাকে। একেই বলা হয় ব্যাকফায়ারিং। ইঞ্জিনের স্পার্কপ্লাগ, ইগনিশন সিস্টেম কিংবা ইগনিশন কয়েলের সমস্যার কারণেই এমন ঘটনা ঘটে।

এগজস্ট প্রেসার কমে যাওয়া

গাড়ি চালানোর সময় যদি কোনো কারণে স্বাভাবিকের তুলনায় কম এগজস্ট প্রেসার অনুভূত হয় তবে তা ক্যাটালাইটিক কনভার্টার জ্যাম হয়ে যাওয়ার কারণে হতে পারে। কিংবা এগজস্ট সিস্টেমে কোনো বাধা হওয়ার কারণেও এমন সমস্যা ঘটতে দেখা যায়। কারণ যাই হোক না কেন দীর্ঘদিন ধরে এমন চলতে থাকলে ইঞ্জিন কিন্তু মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।