চার্জার ছাড়া iPhone বেচায় ১৫০ কোটি টাকার বেশি জরিমানা, বিপাকে Apple

Avatar

Published on:

Brazil Court fines Apple 19 Million Dollars for sell iPhone without Charger

একথা আমাদের সকলেরই জানা যে, পরিবেশগত সমস্যার দোহাই দিয়ে ২০২০ সাল থেকে iPhone-এর সাথে চার্জিং অ্যাডাপ্টার দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি সংস্থা Apple। একই কারণে তারা সদ্য গত মাসে লঞ্চ হওয়া iPhone 14 সিরিজের ফোনের বক্সেও চার্জার দেয়নি। কোম্পানির দাবি অনুযায়ী, iPhone-এর সঙ্গে চার্জার না দিলে প্রতি বছর কয়েক লক্ষ টন কার্বন নিঃসরণ কমে যাবে, যা পরিবেশের সুস্থতার জন্য খুবই ফলদায়ক। সেক্ষেত্রে মার্কিনি টেক জায়েন্টটির এই দাবিকে অনেক দেশ মেনে নিলেও এমন একটি দেশ আছে যারা Apple-এর এই সিদ্ধান্তের সাথে মোটেই একমত হতে পারেনি; এবং সেই কারণেই তারা মোটা টাকা জরিমানার বোঝাও চাপিয়ে দিয়েছে প্রযুক্তি সংস্থাটির কাঁধে। আর সেইসাথে একথাও স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে, চার্জার ছাড়া অসম্পূর্ণ প্রোডাক্ট কোনোমতেই সেদেশে বিক্রি করা যাবে না। আসুন ঘটনাটি ঠিক কী ঘটেছে, সে সম্পর্কে একটু বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।

ফোনের বক্সে চার্জার না দেওয়ায় Apple-কে মোটা টাকা জরিমানা করলো ব্রাজিল সরকার

সংবাদ সংস্থা রয়টার্স (Reuters)-এর এক রিপোর্ট অনুযায়ী, আইফোনের বক্সে চার্জার না দেওয়ার জন্য অ্যাপলকে সম্প্রতি ১৯ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ১৫৬ কোটি টাকা) জরিমানা করেছে ব্রাজিল। ব্রাজিলিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব বরোয়ার্স, কনজিউমার্স অ্যান্ড ট্যাক্সপেয়ার্স (AMBCC)-এর দায়ের করা একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রাজিলের আদালত সংস্থাটিকে এই জরিমানার আদেশ দিয়েছে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে, ব্রাজিলে অ্যাপলকে তাদের নতুন আইফোন মডেল চার্জার সহ বিক্রি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

iPhone-এর বক্সে অবশ্যই চার্জার দিতে হবে – Apple-কে কড়া নির্দেশ ব্রাজিল সরকারের

প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, আইফোনের বক্সে চার্জার না দেওয়াকে কেন্দ্র করে বেশ কিছুদিন ধরেই ব্রাজিলের আদালত এবং অ্যাপলের মধ্যে দ্বন্দ্বযুদ্ধ চলছে। উল্লেখ্য যে, বক্সের মধ্যে চার্জার না দেওয়ার ফলে ইতিমধ্যেই গোটা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ গ্রাহককে চরম অসুবিধায় পড়তে হয়েছে, ফলে তিতিবিরক্ত হয়ে বারংবার তারা সংস্থাটিকে কাঠগড়ায় তুলেছেন। যদিও অ্যাপল তাদের সাফাইয়ে বরাবরই জানিয়েছে যে, পরিবেশ দূষণ কমানোর পাশাপাশি সবুজ পৃথিবী গড়ে তোলার লক্ষ্যেই তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে; কিন্তু ব্রাজিল সরকার স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে, চার্জার ছাড়া স্মার্টফোন বিক্রির সঙ্গে পরিবেশ সুরক্ষার কোনো সম্পর্কই নেই। দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশের সরকারের মতে, চার্জার না দেওয়ায় গ্রাহকদেরকে অসম্পূর্ণ প্রোডাক্ট বিক্রি করছে মার্কিনি টেক সংস্থাটি, যা একেবারেই উচিত নয়। তাই সম্প্রতি সেদেশের আমলারা কার্পেটিনো ভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটিকে ১৯ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ১৫৬ কোটি টাকা) জরিমানা করেছে, এবং সেইসাথে সংস্থাটিকে কড়া নির্দেশ দিয়েছে যে, অ্যাপলকে অবশ্যই আইফোনের বক্সে চার্জার দিতে হবে।

এর আগেও Apple-কে মোটা টাকা জরিমানা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল ব্রাজিল

আগেই বলেছি যে, iPhone-এর বক্সে চার্জার না দেওয়াকে কেন্দ্র করে ব্রাজিল সরকার এবং Apple-এর মধ্যে বহুদিন ধরেই ঠান্ডা লড়াই চলছে। আর এর দরুন গত মাসে ব্রাজিলের বিচার মন্ত্রণালয় মার্কিনি টেক কোম্পানিটিকে ২.৩৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ১৯ কোটি টাকা) জরিমানার নির্দেশ দিয়েছিল। সেইসাথে সরকারের তরফে এও জানানো হয়েছিল যে, চার্জার ছাড়া ব্রাজিলে কোনো iPhone বিক্রি করতে পারবে না Apple। নিজেদের কড়া নির্দেশিকার প্রেক্ষিতে ব্রাজিলের সরকার যথাযথ যুক্তিসঙ্গতভাবে জানিয়েছিল যে, পরিবেশ সুরক্ষার দোহাই দিয়ে কোম্পানিটি ফোনের বক্সে চার্জার দেওয়া বন্ধ করলেও গ্রাহকদের কিন্তু সেটিকে আলাদাভাবে অনলাইন কিংবা অফলাইনে কিনতেই হচ্ছে। ফলে চার্জারের বিক্রি কিন্তু কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না, বরং বক্সে চার্জার না দিয়ে ঘুরপথে সেটি বিক্রি করে নিজেদের ব্যবসায়িক মুনাফা বৃদ্ধি করছে Apple। তাই ফোনের সাথে চার্জার না দেওয়ার জন্য প্রযুক্তি সংস্থাটির তরফে দেখানো যুক্তি সম্পূর্ণভাবে অর্থহীন তথা অযৌক্তিক। যদিও এ সম্পর্কে Apple-এর তরফে এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি; সেক্ষেত্রে আগামী দিনে কোথাকার জল কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, এখন সেটাই দেখার…

সঙ্গে থাকুন ➥