iPhone 11 এর বদলে সাবান ডেলিভারি করেছিল ফ্লিপকার্ট, জরিমানা দিতে হল ৭৩ হাজার টাকা

Published on:

Student Got Soap Instead iPhone 11 Flipkart

ফ্লিপকার্ট (Flipkart) সহ অন্যান্য ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলির মাধ্যমে স্মার্টফোনের পরিবর্তে ডিটারজেন্ট সাবান ডেলিভারি করার ঘটনা এখন আকছার শোনা যাচ্ছে। যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিক্রেতাদের তরফ থেকে হওয়া এই ‘ভুল’ সংশোধন করতে অনলাইন শপিং সাইটগুলি গ্রাহকদের রিফান্ড বা টাকা ফেরত দিয়ে দেয়। কিন্তু প্রত্যেক ভুক্তভোগী এত ভাগ্যবান হন না। এমন অনেক উদাহরণ আছে, যেখানে অনলাইন শপিং সাইটগুলির সাথে যোগাযোগ করে ফল না পেয়ে নিরুপায় হয়ে কিছু ব্যক্তিকে কনজিউমার কোর্ট বা ভোক্তা আদালতে অভিযোগ দায়ের করতে হয়েছে। যেমন সম্প্রতি কোপ্পাল জেলার নিবাসী এক ছাত্র ফ্লিপকার্টের মাধ্যমে অ্যাপল আইফোন ১১ (Apple iPhone 11) অর্ডার করে ফোনের পরিবর্তে রিটেল বক্সে সাবান পান। অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও ফ্লিপকার্টের তরফ থেকে এই বিষয়ে কোনো সহযোগিতা না পেয়ে, রিফান্ডের দাবি নিয়ে এখন তিনি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।

ভুক্তভোগী কোপ্পাল নিবাসী ছাত্র হর্ষ, ই-কমার্স সাইট ফ্লিপকার্ট থেকে ৪৮,৯৯৯ টাকা অগ্রিম পেমেন্ট করে একটি আইফোন ১১ মডেল অর্ডার করেন। নির্দিষ্ট দিনে ডেলিভারিও করা হয়েছিল পার্সেলটি। কিন্তু বক্স খোলার পর তিনি দেখেন যে, তাতে একটি ১৪০ গ্রামের নির্মা ডিটারজেন্ট সাবান এবং একটি কোয়ার্টি কী-প্যাড ফোন রয়েছে। যারপর হর্ষ, ফ্লিপকার্টের কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগ করেন এবং এই বিষয়ে অভিযোগ জানান। কোম্পানির কর্মচারীরা তাকে সমস্যাটি সমাধান করা হবে এবং অর্থ ফেরত দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেছিল। যদিও বাস্তবে এমনটা হয়নি।

দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পরও ফ্লিপকার্ট সমস্যাটির সমাধান তো করেনি, উল্টে টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও বেমালুম ভুলে যায়। যারপর হর্ষ, বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে এবং প্রাপ্য অর্থ ফেরত পেতে ভোক্তা আদালতে যান। গত বছর জুলাই মাসে, ফ্লিপকার্টের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং থার্ড পার্টি রিটেলার সংস্থা সানে রিটেলের ম্যানেজারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন এই ভুক্তভোগী গ্রাহক।

যদিও ফ্লিপকার্টের কর্মকর্তাটি স্বীয় প্রতিরক্ষায় আদালতকে জানায় যে, “ফ্লিপকার্ট হল শুধুমাত্র একটি অনলাইন শপিং প্ল্যাটফর্ম, যা গ্রাহক এবং বিক্রেতাদের পণ্য বিনিময় করতে সহায়তা করে।” তাই আইফোনের পরিবর্তে সাবান পাঠানোর ঘটনা ঘটার জন্য ফ্লিপকার্ট কোনোভাবেই দোষী বা দায়ী নয়। যদিও আদালত সংস্থাটির এই যুক্তির সাথে সহমত পোষণ করেনি।

অভিযোগকারীর সাথে ঘটা সমগ্র ঘটনা এবং এই বিষয়ে অভিযুক্তদের পক্ষ শোনার পর বিচারক মন্তব্য করেন যে – “ফ্লিপকার্ট কোনও বিবেচনা ছাড়াই তাদের গ্রাহকদের সম্পূর্ণরূপে অবাধ পরিষেবা প্রদান করছে, এই দাবি অনুমোদন করা যাচ্ছে না। কারণ ই-কমার্স সাইটটি কোনো চেরিটেবল অর্গানাইজেশনের সাথে জড়িত নয়, যে তারা প্রতিটি বিক্রি হওয়া জিনিসের জন্য নিজস্ব লাভ রাখছে না বা ব্যবসা করছে না।” তাই অনলাইন ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে এই ধরনের আচরণ ও প্রোডাক্ট ডেলিভারি পদ্ধতি একদমই গ্রহণযোগ্য নয় বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন বিচারক।

এক্ষেত্রে দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে বের হওয়া অর্ডারে – “কোম্পানিটির এই ধরণের আইন প্রণয়ন এবং আচরণ, অন্যায্য বাণিজ্য অনুশীলন (unfair trade practice) এবং পরিষেবার ঘাটতি (deficiency in service) আইনের আওতায় পড়ে। কারণ ই-কমার্স সাইটটি প্রোডাক্টের জন্য পুরো টাকা চার্জ করার পরেও, ক্রয়কৃত প্রোডাক্টের পরিবর্তে ভুল আইটেম বিক্রি করে বা পাঠায়।”

যাইহোক, আইফোনের পরিবর্তে সাবান পাঠানোর ‘ভুল’ -এর জন্য আদালতের তরফ থেকে ফ্লিপকার্টকে আইফোন ১১ মডেলের জন্য অগ্রিম পেমেন্ট করা ৪৮,৯৯৯ টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে। আবার সংস্থা দ্বারা ‘পরিষেবার ঘাটতি’ এবং ‘অন্যায্য বাণিজ্য অনুশীলন’ -এর আইন লঙ্ঘন করার শাস্তি স্বরূপ ১০,০০০ টাকার জরিমানা চাপানো হয়েছে। এমনকি অভিযোগকারী অর্থাৎ হর্ষ -কে মানসিক যন্ত্রণা (mental agony) প্রদানের জন্য এবং মামলার খরচ (litigation) বাবদ অতিরিক্তভাবে আরো ১৫,০০০ টাকাও দিতে বলা হয়েছে ই-কমার্স জায়ান্টকে।

অতএব বহুমূল্য আইফোনের পরিবর্তে একটি ৩০ টাকার সাবান ও ১০০০ টাকার ফিচার ফোন ভুলবশত পাঠানোর ফলস্বরূপ এখন মোট ৭৩,৯৯৯ টাকা খরচ বহন করতে হবে ফ্লিপকার্টকে। এযেন ২৫ পয়সার রোজগার করে ১ টাকা খরচ হওয়ার অবস্থা!

সঙ্গে থাকুন ➥