SIM কার্ডই লাগানো যাবে না iPhone 14 সিরিজে, কীভাবে কল করবেন ব্যবহারকারীরা?

গত সপ্তাহের ৭ সেপ্টেম্বর বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড Apple (অ্যাপল) তাদের বহুল প্রত্যাশিত iPhone 14 সিরিজটির ওপর থেকে পর্দা সরিয়েছে। নবাগত সিরিজটির অধীনে iPhone 14 (আইফোন ১৪), iPhone 14 Plus (আইফোন ১৪ প্লাস), iPhone 14 Pro (আইফোন ১৪ প্রো), ও iPhone 14 Pro Max (আইফোন ১৪ প্রো ম্যাক্স) – মোট চারটি মডেল লঞ্চ হয়েছে। সেক্ষেত্রে মার্কিনি প্রযুক্তি সংস্থাটির এই ‘নেক্সট জেনারেশন’ iPhone সিরিজটিতে অনেক নতুন পরিবর্তন আনা হয়েছে, যার মধ্যে একটি ব্যবহারকারীদের জন্য বেশ সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। আসলে ব্যাপারটা হল, নতুন সিরিজ থেকে সিম কার্ড ট্রে সরিয়ে দিয়েছে Apple, অর্থাৎ নতুন মডেলগুলিতে ইউজারদেরকে সিম কার্ড ইনস্টল করার অপশন দেওয়া হবে না। কেননা কোম্পানিটি চায় ব্যবহারকারীরা শুধু eSIM (ই-সিম) ব্যবহার করুক, আর তাই যুগের সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে চলার জন্য সকলকে টেক-স্যাভি করে তুলতেই সংস্থার তরফে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

eSIM কী?

যারা জানেন না তাদেরকে বলে রাখি, ই-সিম কোনো ইলেকট্রনিক সিম নয়; এটি এমবেডেড সিম নামে পরিচিত এবং এর কারণ হল, ই-সিম প্রযুক্তি ফোনের মাদারবোর্ডে এমবেডেড বা সোল্ডার করা হয়। ফলে ডিভাইসে একটি অতিরিক্ত সিম কার্ড স্লট তৈরি করার আর কোনো প্রয়োজন পড়ে না। সোজা কথায় বললে, এই এমবেডেড বা ডিজিটাল সিম ইউজারদের একটি ফিজিক্যাল ন্যানো সিম ব্যবহার না করেই কোনো নির্দিষ্ট টেলিকম অপারেটর কর্তৃক প্রদত্ত সেলুলার প্ল্যান ব্যবহার করার সুযোগ দেয়। বিভিন্ন আইফোন মডেলের পাশাপাশি স্মার্টওয়াচ এবং ড্রোনেও এখন এই সুবিধা উপলব্ধ রয়েছে। তবে হালফিলে অ্যাপলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, তাদের আইফোন ১৪ সিরিজটি পুরোপুরি ই-সিমের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে, তাই এই সিরিজের ফোনগুলিতে ইউজাররা কোনো ফিজিক্যাল সিম কার্ড ইন্সটল করতে পারবেন না।

Apple কেন সিম কার্ড ট্রে-টি সরিয়ে ফেললো?

টেক দুনিয়ার বিভিন্ন খবরাখবর সম্পর্কে যারা ওয়াকিবহাল, তারা ইতিমধ্যেই নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন যে প্রতি বছরই আইফোনের ডিজাইনের পাশাপাশি তার ফিচারের ক্ষেত্রেও অনেক পরিবর্তন করছে অ্যাপল। সংস্থাটি ক্রমশ আইফোন থেকে পোর্ট এবং হোলের সংখ্যা কমিয়ে দিচ্ছে। যেমন, ২০১৬ সালে টেক জায়েন্টটি আইফোন ৭ (iPhone 7) থেকে ৩.৫ মিলিমিটার অডিও জ্যাকটি সরিয়ে নেয়। পরবর্তীকালে আবার টাচ আইডিকে সরিয়ে ফেস আইডিকে আইফোনে জায়গা করে দেয় অ্যাপল। আসলে সংস্থাটি এমন একটি ডিভাইস বাজারে আনতে চায় যাতে সবচেয়ে কম সংখ্যায় হোল এবং পোর্ট থাকবে এবং সেই লক্ষ্যেই মার্কিন মুলুকের কোম্পানিটি বারংবার এরকম পরিবর্তন করে চলেছে।

সিম না থাকলে কল এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ কীভাবে হবে?

একটি ফিজিক্যাল সিম কার্ড ট্রে না থাকার অর্থ হল, ব্যবহারকারীরা প্লাস্টিকের সিম কার্ড ব্যবহার করতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে ইউজারদের নিজেদের পছন্দসই টেলিকম অপারেটরের কাছ থেকে একটি ই-সিম নিতে হবে, যার সুবাদে ফোনে কোনো সিম কার্ড না থাকলেও তারা একটি ফোন নম্বর ব্যবহার করতে পারবেন। আর আগেই বলেছি যে, ই-সিম সাধারণ সিম কার্ডের মতো ফোনে ঢোকানো বা বের করা যায় না। কিন্তু তার মানে এই নয় যে গ্রাহকদের কেবলমাত্র একটি নেটওয়ার্কেই আবদ্ধ থাকতে হবে। আসলে ই-সিম পোর্টেবল, অর্থাৎ ইউজাররা চাইলেই নতুন নেটওয়ার্কে স্যুইচ করতে পারবেন। সোজা কথায় বললে, ই-সিম হল এক নতুন ধরনের সিম টেকনোলজি, যা প্রচলিত সিম ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে সক্ষম। এই প্রযুক্তিটি বিদ্যমান আইফোন মডেলগুলিতেও মজুত রয়েছে; তবে, এই হ্যান্ডসেটগুলিতে একটি ফিজিক্যাল সিম কার্ডও ইনস্টল করা যেতে পারে।

eSIM অপশন কি ভারতেও উপলব্ধ রয়েছে?

Reliance Jio (রিলায়েন্স জিও), Bharti Airtel (ভারতী এয়ারটেল)-এর মতো সংস্থাগুলি ভারতে ই-সিমের বিকল্প সরবরাহ করে। এর জন্য নিকটস্থ স্টোরে গিয়ে কিংবা বাড়িতে বসেই কেওয়াইসি (KYC) সংক্রান্ত যাবতীয় প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে প্রয়োজনীয় নথি জমা দেওয়ার পর ইউজাররা Apple বা অন্যান্য প্রিমিয়াম ডিভাইসে ই-সিম অ্যাক্টিভেট করতে পারবেন। তবে যারা ঘন ঘন সিম কার্ড পরিবর্তন করেন, তাদের জন্য এই প্রযুক্তি খুব একটা ফায়দাজনক নয়। এক্ষেত্রে একটি আনন্দের বিষয় হল যে, iPhone-এর উক্ত পরিবর্তনটি এই মুহূর্তে কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই সীমাবদ্ধ; তাই ভারতীয় ব্যবহারকারীদের এখনই এ বিষয়ে চিন্তা করার কোনো দরকার নেই।