অফারের নামে ‘ডাকাতি’ করছে অনলাইন শপিং কোম্পানিগুলি! বোকা বনতে না চাইলে সতর্ক হন এখনই

Avatar

Published on:

Online Shopping Scam

স্মার্টফোন, ল্যাপটপের মতো দামী ইলেকট্রনিক্স কেনার ক্ষেত্রে এখন আমাদের অধিকাংশেরই প্রধান ঠিকানা Flipkart, Amazon-এর মতো বিভিন্ন অনলাইন শপিং প্ল্যাটফর্মগুলি। এগুলির সাহায্যে বাড়ি বসে ইচ্ছেমতো যেকোনো প্রোডাক্ট তো হাতে মেলেই, তার সাথে থাকে সস্তায় কেনাকাটা করার সুবিধা। কিন্তু সত্যিই কি এইসব অনলাইন অফার, বিশেষ সেল খুব লাভজনক? এই প্রশ্ন অনেকেরই মাঝেমধ্যে মাথায় আসে। আবার কিছু দোকানদারও এই বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে থাকেন। এক্ষেত্রে আমরা বলব, আপনি যদি ইলেকট্রনিক্স আইটেম কেনার জন্য অনলাইন সেলের জন্য অপেক্ষা বা ভরসা করেন, তাহলে কিন্তু আপনার সতর্ক থাকা দরকার। কারণ বর্তমানে দেখা যাচ্ছে যে, অনেক সময়ই ই-কমার্স কোম্পানিগুলি সেলের নামে ক্রেতাদের বোকা বানায় – কোনো ডিভাইসে বিশাল ডিসকাউন্ট দেওয়ার ছলে আদতে তারা বেশি দামে সাধারণ মানুষকে তা কিনতে বাধ্য করে। তাই চোখ-কান খোলা না রেখে বা ভালো বিচার-গবেষণা না করে অনলাইনে কেনাকাটা করা হতে পারে লোকসানের কারণ! অতএব ‘ডিজিটাল ডাকাতি’ থেকে বাঁচতে নিম্নলিখিত কয়েকটি বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখুন।

Online Sale: অবিশ্বাস্য ডিসকাউন্ট নাকি দাম বদলের খেলা?

প্রায়শই আমরা দেখি যে, কিছু কিছু ই-কমার্স ওয়েবসাইটগুলিতে প্রোডাক্ট তাদের এমআরপি (MRP)-র চেয়ে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কমে পাওয়া যায়। কিন্তু এক নজরে এমন অফার প্রলুব্ধকর হলেও, এর পেছনের গল্প আসলে অন্য কিছু। আসলে অনেক সময়ই প্রোডাক্টের এমআরপি, এটির বিক্রয় মূল্যের চেয়ে অনেকটা বেশি সেট করে রাখে কোম্পানিগুলি। এতে করে ডিসকাউন্ট দেখিয়ে গ্রাহকদের আকর্ষিত করা যায়। যেমন Samsung Galaxy S20 FE ফোনটি বছর দুয়েক আগে ভারতে ৪৯,৯৯৯ টাকা দামে আত্মপ্রকাশ করেছিল। কিন্তু একটি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে এই ফোনের এমআরপি ৭৪,৯৯৯ টাকা এবং অন্য একটিতে ৬০,০০০ টাকা দেখিয়ে তার ওপর ডিসকাউন্ট প্রাইস প্রযোজ্য করা হচ্ছে। অর্থাৎ একথা স্পষ্ট যে, এমন পদক্ষেপ নিয়ে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলি নিজেদের ইচ্ছেমতো করে ফোনের দাম নির্ধারণ করছে। এমতাবস্থায় সবচেয়ে ভালো উপায় হল আপনি যে প্রোডাক্ট কিনছেন তার কোম্পানির ওয়েবসাইটে গিয়ে আসল মূল্য চেক করে বা ভালো করে সেটির সম্পর্কে জেনে তবেই কোনো অফারে কেনাকাটা করা উচিত।

সেলে দাম নিয়ে বিভ্রান্তি!

অনেক সময় অনলাইন সেলে কোনো প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপনে যে মূল্য লেখা থাকে, প্রোডাক্ট পেজে ক্লিক করলে কিন্তু তার চেয়ে বেশিই দাম প্রদর্শিত হয়। আসলে ফোন বা এই জাতীয় ইলেকট্রনিক্স প্রোডাক্টের মূল্যের সাথে সাথে অনেক গোপন শর্ত থাকে যা এক নজরে চোখে পড়েনা। যেমন ছাড়ের মূল্যের মধ্যে ফ্ল্যাট ডিসকাউন্টের পাশাপাশি ব্যাঙ্ক অফার, এক্সচেঞ্জ বোনাস ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকে। আর এইসব অফারগুলির সমস্তটা সবাই কাজে লাগাতে পারেননা!

আবার, ইলেকট্রনিক্স আইটেমগুলি লঞ্চের পরই সাধারণত এমআরপির চেয়ে কম দামে বিক্রি হয়। কিন্তু অনলাইন শপিং প্ল্যাটফর্মগুলি সেই বর্তমান দামকে লঞ্চ প্রাইসের সাথে তুলনা করে এবং বিষয়টিকে হাইলাইট করে সেটিকে সেলে বিক্রির জন্য উপলব্ধ করে। এক্ষেত্রে কোনো অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়না। ফলে সবমিলিয়ে কেবল হতাশ বা বিরক্ত হওয়া ছাড়া কিছু করার থাকেনা। তাই কোন প্রোডাক্টে কতোটা অফার পাচ্ছেন, সে বিষয়টি খেয়াল রাখুন।

নিজে থেকেই অর্ডার ক্যান্সেল

এখন আকছার শোনা যায় যে, ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলি কোনো বৈধ কারণ ছাড়াই অর্ডার স্বয়ংক্রিয়ভাবে ক্যান্সেল করে দেয়। যেমন, iPhone 14 লঞ্চের পর ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলি সর্বনিম্ন দামে সেটি বিক্রি করার দাবি করে এবং যখন হাজার হাজার গ্রাহক তা কেনার চেষ্টা করে, তখন তাদের অর্ডারগুলি পরে নিজে থেকেই ক্যান্সেল হয়ে যায়। এমনকি অনেক সময় প্রোডাক্ট স্ট্যাটাস আউট অফ স্টক হয়ে থাকে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, Xiaomi 11i 5G ফোন কেনার সময় আমাদের টেকগাপের এক মেম্বার খোদ এই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন।

সেক্ষেত্রে এই সমস্ত বিষয় নিয়ে অনেকেই বারংবার সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিযোগ জানিয়েছেন। কোনো কোনো গ্রাহক আবার ফ্লিপকার্টের সেলকে ‘জাল’ বলেও অভিহিত করেছেন। অন্যদিকে অনেকে দাবি করেছেন যে, অনলাইন শপিং প্ল্যাটফর্মগুলি সেলের নামে প্রতারণা করছে এবং শুধুমাত্র বিপণনের জন্য সাধারণ মানুষকে হয়রানি করছে। যদিও সংস্থাগুলির তরফে কোনো প্রতিক্রিয়া মেলেনি। আর আগামীদিনে এরকম সমস্যার প্রেক্ষিতে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা, তাও স্পষ্ট নয়। তাই অনলাইন শপিং করতে হলে সাবধান থাকতে হবে নিজেকেই।

সঙ্গে থাকুন ➥