দেশীয় প্রযুক্তিতে ভারতে প্রথম EV ব্যাটারি সেল উৎপাদন হল, বৈদ্যুতিক যানবাহনে নতুন দিশা
আমাদের দেশে ব্যাটারি চালিত গাড়িগুলির দাম অত্যাধিক হওয়ার পিছনে অন্যতম কারণ বিদেশ থেকে আমদানি করা এর ব্যাটারি সেল। আসলে যে কোনো ধরনের বৈদ্যুতিক যানবাহনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে দামি অংশ হলো এর ব্যাটারি। এতদিন পর্যন্ত এই সমস্ত ব্যাটারির মূল উপাদান লিথিয়াম আয়ন সেল চীন-কোরিয়ার মতো দেশ থেকেই আসতো ভারতে। তবে এই চিত্র এবার বদলাতে চলেছে। তেলেঙ্গানায় জন্ম নেওয়া ভারতীয় স্টার্টআপ সংস্থা গোদি ইন্ডিয়া (Godi India) এর হাত ধরে এবার দেশীয় প্রযুক্তিতে লিথিয়াম আয়ন সেল তৈরি শুরু হল। তারা ভারতবর্ষের প্রথম সংস্থা যারা এমন উদ্যোগ গ্রহণ করল।
কেন্দ্রীয় সরকারের গুণগতমান নির্ণায়ক সংস্থা ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড (BIS) এর থেকে গোদি ইন্ডিয়া প্রথম সংস্থা হিসাবে দেশীয় প্রযুক্তিতে লিথিয়াম আয়ন সেল উৎপাদনের ছাড়পত্র পেয়েছিল। চলতি সপ্তাহ থেকেই ভারতের প্রথম ৫.২ অ্যাম্পিয়ার আওয়ার ২১৭০০ সিলিন্ড্রিক্যাল লিথিয়াম আয়ন সেল উৎপাদন শুরু করেছে তারা। সিলিকন অ্যানোড প্রযুক্তি সমৃদ্ধ ২৭৫ ওয়াট আওয়ার/কেজি শক্তি ঘনত্ব যুক্ত এই ব্যাটারি সেলের ব্যবহারে ইলেকট্রিক ভেইকেলের দামে অনেকটাই লাগাম পরানো সম্ভব হবে। এমনকি এই ব্যাটারিতে ব্যবহৃত ইলেকট্রোডের মিশ্রণ সম্পূর্ণভাবে ভারতীয় বাজারের উপযুক্ত করেই দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হবে।
নির্মাতার দাবি নতুন এই ব্যাটারি সেলের অ্যানোডে সিলিকনের ব্যবহারের ফলে বৈদ্যুতিক গাড়িগুলিতে আরো বেশি রাইডিং রেঞ্জ মিলবে। তারা জানিয়েছে সাধারণ গ্রাফাইটের তুলনায় এই সিলিকনের ব্যবহারে অন্তত ১৫-২০% বেশি দূরত্ব চলা সম্ভব হবে। অবশ্য এর পেছনে অতিরিক্ত শক্তি ঘনত্বও খানিকটা দায়ী। গোদি ইন্ডিয়ার বিশ্বাস যে সাধারণ গ্রাফাইট অ্যানোড এর তুলনায় এই সিলিকন প্রযুক্তি ১০ গুন বেশি শক্তি সঞ্চয় করতে পারে বলেই আগামী দিনে এটিই হবে শক্তি সঞ্চয়ের প্রধান উপকরণ।
যদিও এই জাতীয় অ্যানোড দ্বারা প্রস্তুত ব্যাটারি সেলগুলির চার্জ গ্রহণ ও বর্জনের সময় প্রায় ৪০০% পর্যন্ত আয়তনের তারতম্য হয় যা নিয়ন্ত্রণে রাখা বেশ কষ্টসাধ্য। সংস্থার দাবি সিলিকনকে স্থিতিশীল রাখার জন্য তারা ইলেকট্রোডকে জলীয় পদার্থের উপর প্রস্তুত করেছে। আর এভাবেই ৫.২ অ্যাম্পিয়ার আওয়ারের লিথিয়াম আয়ন সেল সফলভাবে প্রস্তুত করা সম্ভব হয়েছে।
গোদি ইন্ডিয়ার মুখ্য অধিকর্তা মহেশ গোদি এই প্রসঙ্গে বলেন,"আমরা খুব উচ্ছ্বাসের সঙ্গে জানাচ্ছি যে আমাদের হায়দ্রাবাদের কারখানাতে ৫.২ অ্যাম্পিয়ার আওয়ারের লিথিয়াম আয়ন সেল উৎপাদন শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই আমরা দেশের ছয়টি সংস্থার হাতে ৫.০ অ্যাম্পিয়ার আওয়ারের সেল তুলে দিয়েছি। আর অদূর ভবিষ্যতে এই নতুন ব্যাটারিগুলো ডেলিভারি দেওয়ার পরিকল্পনা করেছি।"
এছাড়াও তিনি জানান যে আগামী দিনে ৫.৬ অ্যাম্পিয়ার আওয়ারের অধিক শক্তি সম্পন্ন ব্যাটারি সেল তৈরি করার জন্য অ্যানোড ও ক্যাথোড নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার চিন্তা ভাবনা করেছেন তারা।
২০৩০ সালের মধ্যে ৫.০-৫.২ অ্যাম্পিয়ার আওয়ারের ব্যাটারি তৈরির জন্য একটি ১০০ মেগাওয়াটের পাইলট প্রজেক্ট ও পরবর্তীকালে ইলেকট্রিক টু-হুইলার মার্কেটের কথা ভেবে ৫০ গিগাওয়াটের অধিক ক্ষমতা সম্পন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।