ই-বাইকের দাম কমবে হু হু করে, IIT খড়গপুরের গবেষকদের তৈরি ব্যাটারি নতুন দিশা দেখাচ্ছে
দূষণহীন যাতায়াতের মাধ্যম হিসাবে ই-বাইক বিশ্বের নানা প্রান্তে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এ দেশেও এই ধরনের দ্বিচক্র যানের ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া হলেও, দাম ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় গণব্যবহার চালু করা যাচ্ছে না। একটি ভাল ইলেকট্রিক বাইসাইকেলের যা দাম, তাতে সমান খরচ করে বাজারে ই-স্কুটার বা প্রথাগত জ্বালানিতে চলা বাইক-স্কুটার কেনা বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করছেন ভারতীয়রা। তাহলে উপায় কি? মুশকিল আসান করতে পারে সোডিয়ান আয়ন (Na-ion) ব্যাটারি। প্রচলিত লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির তুলনায় যার উৎপাদন খরচ খুব কম।
সোডিয়াম প্রকৃতিতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় বলে তার তৈরি ব্যাটারি লিথিয়াম আয়নের থেকে যথেষ্ট সস্তা। ফলে ই-সাইকেলে এর ব্যবহার হলে দাম চলে আসবে আমজনতার হাতের নাগালে। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি খড়গপুরের পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক অমরিশ চন্দ্র সোডিয়াম আয়ন ব্যাটারিকে কাজে লাগিয়ে শক্তি ধরে রাখার প্রযুক্তি বিকাশ করার জন্য গবেষণা করে চলেছেন। এই কাজে তাঁর দল ইতিমধ্যেই প্রচুর সংখ্যক ন্যানোমেটেরিয়াল তৈরি করে ফেলেছে।
ভারত সরকারের ডিপার্টমেন্ট অফ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজির (DST) অন্তর্গত টেকনোলজি মিশন ডিভিশন (TMD) এর সাহায্যে অধ্যাপক চন্দ্র ও তাঁর দলের সদস্যরা সোডিয়াম আয়রন ফসফেট এবং সোডিয়াম ম্যাঙ্গানিজ ফসফেট থেকে সোডিয়াম আয়ন ফর্মুলার ব্যাটারি এবং সুপার ক্যাপাসিটর তৈরি করেছে। সোডিয়ামের উপকরণগুলি লিথিয়াম নির্ভর উপকরণের থেকে অনেক বেশি সস্তা ও উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন এবং এগুলোকে সহজেই প্রচুর পরিমাণে তৈরি করা সম্ভব। তাছাড়াও এই ধরনের ব্যাটারি ও ক্যাপাসিটর তুলনামূলকভাবে বেশি নিরাপদ।
অধ্যাপক চন্দ্র নিজেও সোডিয়াম আয়ন ব্যাটারি দিয়ে ই-সাইকেল বানিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করছেন। আবার এই প্রকার ব্যাটারি চার্জ হতে অনেক কম সময় নেয়। বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা, লিথিয়ামের জায়গায় সোডিয়াম ব্যাটারি ব্যবহার করলে ইলেকট্রিক সাইকেলের দাম প্রায় ২৫% কম হবে। তখন মূল্য নেমে আসতে পারে ১০-১৫ হাজার টাকার মধ্যে।
আর সবচেয়ে বড় সুবিধা, আয়ু ফুরিয়ে গেলে এই ধরনের ব্যাটারি সহজেই নষ্ট করা যায়। ফলে পরিবেশের উপর কুপ্রভাব ফেলে না। একটি আর্ন্তজাতিক জার্নালে ওই সুপার ক্যাপাসিটরের উপর গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। লিথিয়াম আয়নের বিকল্প হিসাবে বেশ কিছু সংস্থা ইতিমধ্যেই সোডিয়াম আয়ন ব্যাটারির বাণিজ্যিকীকরণে আগ্রহ দেখিয়েছে।