গাড়ি কম মাইলেজ দিচ্ছে? না জেনে বারবার এই ভুলগুলো করছেন না তো
বিশ্বের বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম খানিকটা কম হলেও ভারতের বাজারে পেট্রোল ও ডিজেল এখনও অগ্নিমূল্য। জীবাশ্ম জ্বালানির দাম বৃদ্ধির সঙ্গেই সমানুপাতে দামী হয়েছে নিত্যপ্রয়োজনুয় জিনিসপত্র। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন গাড়ির মালিকরা। পরিস্থিতি এতই ঘোরালো যে বহু মানুষ তাদের শখের গাড়ি চড়া বন্ধ করে গণপরিবহন ব্যবস্থায় ভরসা রাখছেন। দৈনন্দিন জীবনের খরচে লাগাম পরাতেই এই সিদ্ধান্তের পথে হাঁটতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। একদল মানুষ ব্যাটারি চালিত যানবাহন ব্যবহারের পথ বেছে নিয়েছেন। প্রশ্ন উঠছে তবে কি পেট্রোল ডিজেল চালিত গাড়ি চড়া বন্ধ করে দিতে হবে? কদাপি নয়। কয়েকটি সহজ পন্থা অবলম্বন করে সহজেই কমাতে পারেন জ্বালানি খরচ। এই প্রতিবেদনে রইল ছয়টি টোটকা, যেগুলি অনুসরণ করে আখেরে লাভ হবে আপনার।
১. অতিরিক্ত ওজনের লাগেজ নেওয়া বন্ধ করা
প্রায় সব গাড়িতেই পেছনের অংশে লাগেজ নেওয়ার প্রবণতা দেখতে পাওয়া যায়। তবে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় গাড়ির বুট স্পেস সম্পূর্ণ লাগেজ দ্বারা পরিপূর্ণ। মনে রাখবেন গাড়ির এই অংশে অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির ফলে প্রায় ২% অতিরিক্ত জ্বালানি খরচ হয়। তাই চেষ্টা করুন অপ্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে না চলতে। তুলনামূলক ছোট চেহারার গাড়িতে অতিরিক্ত লাগেজ নেওয়ার ফলে মাইলেজ যথেষ্ট কমে যায়।
২. সময় মতো সার্ভিস ও মেনটেনেন্স
গাড়ি মাত্রই প্রচুর সংখ্যক যন্ত্র ও ইঞ্জিনের সমাহার। তাই নির্দিষ্ট সময় অন্তর এর রক্ষণাবেক্ষণ ও সার্ভিস করাটা বাধ্যতামূলক। সময় মত ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করলে গাড়ির ইঞ্জিন দীর্ঘ সময় পর্যন্ত সঠিক পারফরম্যান্স দেওয়ার পাশাপাশি তেল সাশ্রয়ী ক্ষমতা বাড়ে। দক্ষ মেকানিক দ্বারা তাই সময়মতো আপনার সাধের গাড়িটির সার্ভিস করান এবং প্রয়োজনে নষ্ট যন্ত্রাংশ বদলে দেওয়াই শ্রেয়।
৩. এয়ার কন্ডিশনারের ব্যবহার কমানো
অতিরিক্ত এসি ব্যবহারের ফলে গাড়ির মাইলেজ লক্ষণীয় ভাবে কমে আসে। বিশেষত অধিক ট্রাফিক পূর্ণ রাস্তায় এই সমস্যা অনিবার্য। তবে ভারতবর্ষের মতো গ্রীষ্ম প্রধান দেশে এয়ারকন্ডিশনারকে এড়িয়ে চলাটাও মুশকিল। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে দীর্ঘ সময় গাড়ির এসি ব্যবহার করলে ৩০% পর্যন্ত বেড়ে যায় জ্বালানি খরচ। তাই জ্বালানি সাশ্রয় যদি প্রধান গুরুত্ব পায় তবে অবশ্যই গাড়িতে এসির ব্যবহার কমানো উচিত।
৪. আচমকা গতি বৃদ্ধি এড়িয়ে চলুন
আচমকা গাড়ির গতি বাড়ানো আবার ব্রেক করে স্পিড কমিয়েই পুনরায় অ্যাক্সিলারেশন, এই ধরনের গাড়ি চালানোর ভঙ্গিতে যথেষ্ট কমে আসে মাইলেজ। গাড়ির প্রকৃতি অনুযায়ী এই ধরনের চালানোর ভঙ্গিতে অন্তত ১৫% থেকে ৩০% পর্যন্ত কমে যায় আপনার গাড়ির মাইলেজ। মনে রাখবেন স্থিতাবস্থা থেকে গতি নেওয়ার সময়ই গাড়ির ইঞ্জিন সবচেয়ে বেশি টর্ক জেনারেট করে আর তাতেই অধিক পরিমাণ জ্বালানি খরচ হয়। তাই সব সময় নির্দিষ্ট হারে গাড়ির গতি বাড়ানোর চেষ্টা করুন।
৫. নির্দিষ্ট গতিতে গাড়ি চালানো
দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার সময় একটি নির্দিষ্ট গতিতে গাড়ি চালানোর ফলে লক্ষণীয়ভাবে উন্নত হয় গাড়ির মাইলেজ। যে কারণে জনবহুল শহুরে রাস্তার তুলনায় হাইওয়েতে কিছুটা হলেও অধিক মাইলেজ পাওয়া সম্ভব। তাই চেষ্টা করুন কখনোই অতিরিক্ত বেশি গতি কিংবা কম গতিতে গাড়ি না চালাতে। প্রত্যেকটি গাড়ির ক্ষেত্রেই ইঞ্জিনের সক্ষমতা অনুযায়ী সবচেয়ে ভালো মাইলেজ পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট গতি নির্ধারণ করা থাকে।
৬. টায়ার প্রেসার ঠিক রাখা
অনেক গাড়ির মালিকেরই গাড়ির তেল সাশ্রয়ের সঙ্গে টায়ার প্রেশারের সম্পর্ক সম্বন্ধে সম্যক ধারণা নেই বললেই চলে। টায়ার হল রাস্তার সঙ্গে গাড়ির যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। আর এই টায়ার প্রতিমুহূর্তে রাস্তার ঘর্ষণ বলের বিপরীতে কাজ গাড়িকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে চলে। তাই গাড়ির এই চাকাতে কম হাওয়া থাকলে ঘর্ষণ বল অনেকটাই বেড়ে যায়। ফলে ইঞ্জিনকে অধিক পরিমাণ তেল খরচ করে বেশি শক্তি সৃষ্টি করতে হয়। তাই সব সময় গাড়ির চাকাতে নির্দিষ্ট পরিমাণ হাওয়া ভরে রাখাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। এ ব্যাপারে প্রত্যেকটি গাড়ির সঙ্গে থাকা ম্যানুয়াল বুকের সাহায্য নেওয়া উচিত।