সত্যি হচ্ছে আশঙ্কা? ChatGPT-র কারণে চাকরি গেল কলকাতার তরুণীর, বিপদে পরিবার
এই একবিংশ শতাব্দীর আশ্চর্য যে AI বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, তাতে কোনো সন্দেহ নেই! বিভিন্ন ক্ষেত্রে এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করা হচ্ছে, যাতে সময় তো বাঁচছেই তারই সাথে নানাবিধ কাজও সহজ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বিগত কয়েক মাসে AI ChatGPT যেভাবে আমাদের জীবনের সাথে জড়িয়ে গেছে, তাতে করে হয়তো আগামী কিছুদিনের মধ্যেই হয়তো মানুষকে রিপ্লেস করে পাকাপাকিভাবে তার জায়গা AI নেবে – এমন সম্ভাবনাই প্রতীয়মান হচ্ছে! আসলে চ্যাটবট হিসেবে আগে থেকে AI-এর ব্যবহার হলেও, গত নভেম্বরে ChatGPT নামক একটি বিশেষ বা স্বতন্ত্র টুল চালু হয় যার কার্যকারিতায় মুগ্ধ গোটা বিশ্ব। যদিও এটির রিয়েল টাইমে যেভাবে বিভিন্ন কঠিন কাজ (যেমন ক্রিয়েটিভ রাইটিং, প্রশ্নের উত্তর দেওয়া, অঙ্ক করা ইত্যাদি) করার দক্ষতা দেখে অনেকেই নানা পেশার মানুষের চাকরি হারানোর আশঙ্কা করছিলেন। সেক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে এই আশঙ্কা ধীরে ধীরে সত্যি হচ্ছে এবং ইতিমধ্যেই কিছু মানুষ চাকরি হারিয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থায় পড়েছেন, বিশেষ করে যারা কপিরাইটার, ঘোস্টরাইটার বা সাইড গিগ হিসাবে কাজ করতেন। এই নজির খুঁজতে বেশি দূর যেতে হবেনা, খাস কলকাতার বুকেই এমন ঘটনা ঘটেছে যেখানে শরণ্যা ভট্টাচার্য নামের ২২ বছর বয়সী একটি মেয়ের চাকরি কেড়ে তার জীবন সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছে ChatGPT।
কীভাবে ChatGPT ত্রাস হয়ে উঠল কলকাতার শরণ্যার জীবনে?
জানা গিয়েছে যে, শরণ্যা, তার পড়াশোনার পাশাপাশি একটি সৃজনশীল সংস্থা বা ক্রিয়েটিভ এজেন্সির জন্য কপিরাইটার এবং ঘোস্টরাইটার হিসেবে কাজ করত। নিউ ইয়র্ক পোস্টের রিপোর্ট অনুযায়ী, মাত্র কয়েকদিন আগেও শরণ্যা প্রতি সপ্তাহে এসইও (SEO)-অপ্টিমাইজড্ আর্টিকেল লিখে প্রতি মাসে মাত্র ২০,০০০ টাকারও বেশি আয় করত, যাতে তার এবং তার মায়ের দিন গুজরান হয়ে যেত। কিন্তু এখন তার লেখার কাজ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে, আর কোম্পানি এর জন্য তাকে কোনো স্পষ্ট কথাও বলেনি।
কিন্তু, আসলে ওই তরুণীর ভবিষ্যত অন্ধকার হয়েছে যখন চ্যাটজিপিটি আবির্ভূত হয়েছে ঠিক তখন থেকেই। ২০২২ সালের শেষের দিকে শরণ্যার কাজের চাপ দ্রুত কমতে শুরু করে এবং যেখানে সপ্তাহে নির্দিষ্ট কয়েকটি লেখা থেকে প্রতি মাসে মাত্র একটি বা দুটিতে এসে ঠেকে তার কাজ। এক্ষেত্রে কোম্পানি কোনো কৈফিয়ত না দিলেও, তারা খরচ কমাতে মানুষের বদলে প্রযুক্তির ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ শরণ্যার। এদিকে মুশকিল হচ্ছে যে, এই আকস্মিক পরিবর্তনের প্রভাব তার পরিবারের ওপর পড়ছে। এখন তাদের আয় ৯০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে যার ফলে তাদের আর্থিক স্থিতি খুবই কঠিন হয়ে উঠেছে।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ প্রতিষ্ঠানে জীববিজ্ঞানে পাঠরতা শরণ্যা, এই গোটা বিষয়টি নিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সংবাদমাধ্যমকে ওই তরুণী জানিয়েছে যে তার বারবার প্যানিক অ্যাটাক হচ্ছে। আর তাই, সে কোম্পানিগুলিকে এআই-এর কারণে কত মানুষ তাদের চাকরি হারাবে তা ভেবে দেখতে বলেছে। তার মতে, মানুষ এবং এআই একসাথে কাজ করলে ফলাফল আরও ভালো হবে। সেক্ষেত্রে অদূর ভবিষ্যতে যাইহোক না কেন, এই কলকাতার ঘটনাটি যে অত্যন্ত অপ্রীতিকর এবং আশঙ্কাজনক তাতে বোধহয় কেউ দ্বিমত প্রকাশ করবেননা! একি শুরু নাকি শেষ? সে প্রশ্নও থেকে যাচ্ছে…